নিজস্ব প্রতিবেদক:
রংপুর: চুরির উদ্দেশ্যে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের ঘরে ঢুকেছিল দুর্বৃত্তরা। এ সময় ওয়াহিদা বাধা দেওয়ায় তার ওপর হামলা চালানো হয়। তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখ মেয়েকে রক্ষা করতে এলে তার ওপরও হামলা হয় বলে জানিয়েছে র্যাব।
শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রংপুর সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানায় র্যাব-১৩।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১৩ এর অধিনায়ক কমান্ডার রেজা আহমেদ ফেরদৌস জানান, ইউএনওকে হত্যাচেষ্টা মামলার সন্দেহভাজন প্রধান আসামি আসাদুল ইসলাম, সান্টু চন্দ্র দাস ও নবীরুল ইসলাম এ ঘটনায় জড়িত বলে এরই মধ্যে স্বীকার করেছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন, চুরির জন্য তারা ভেন্টিলেটর ভেঙে ঘরে ঢোকেন। তবে ওয়াহিদা জেগে গিয়ে চুরিতে বাধা দেওয়ায় তার ওপর হামলা চালান।
তবে গ্রেপ্তারকৃতরা চুরির উদ্দেশ্যেই ঘরে ঢুকেছিলেন বললেও ঘটনার অধিকতর তদন্ত চলবে বলে জানিয়েছে র্যাব। সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির অধিনায়ক বলেন, আসাদের দাবি অনুসারে এটি একটি চুরির ঘটনা। প্রকৃত ঘটনা জানার জন্য আরও সময় দিতে হবে, আরও তদন্ত করতে হবে, প্রয়োজনে সম্পৃক্তদের রিমান্ডে নিতে হবে।
তবে আহত ইউএনওর বাবা ওমর আলী শেখ জানান, তার মেয়েকে মারার উদ্দেশ্যেই দুষ্কৃতিকারীরা গ্রিল কেটে বাসায় ঢুকেছিল।
হামলায় জড়িত বলে স্বীকার করা তিনজনের মধ্যে উপজেলা যুবলীগের সদস্য আসাদুল ইসলাম (৩৫) ঘোড়াঘাট উপজেলার ওসমানপুর সাগরপাড়া এলাকার আমজাদ হোসেনের ছেলে, নবীরুল ইসলাম (৩৫) চকবামুনিয়া বিশ্বনাথপুর এলাকার মৃত ফারাজ উদ্দিনের ছেলে এবং সান্টু চন্দ্র দাস (২৮) একই এলাকার খোকা চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে।
বুধবার (০২ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত আড়াইটায় সরকারি বাসভবনের ভেন্টিলেটর ভেঙে বাসায় ঢুকে ইউএনও ওয়াহিদা ও তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলীর ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। ইউএনওর মাথায় গুরুতর আঘাত এবং তার বাবাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করা হয়।
পরে ইউএনও ও তার বাবাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। ওয়াহিদার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকার নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে আনা হয়। রাতে তার মাথায় অস্ত্রোপচারের পর থেকে বর্তমানে আইসিইউতে ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে আছেন তিনি। তার অবস্থা স্থিতিশীল হলেও এখনো আশঙ্কামুক্ত নন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
আসামিদের আটকে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই হাকিমপুর, বিরামপুর ও ঘোড়াঘাট থানা এবং র্যাবের একটি দল যৌথভাবে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানের এক পর্যায়ে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে হাকিমপুর উপজেলার কালীগঞ্জ এলাকার বোনের বাড়ি থেকে প্রধান আসামি আসাদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব-১৩ অধিনায়ক সাংবাদিকদের বলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজ দেখে, পরনের খয়েরি রঙের শার্টের সূত্র ধরে আসাদুলকে প্রথমে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হয়। আসাদুল জিজ্ঞাসাবাদে জানান, নবীরুল এই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী। নবীরুল ও সান্টু কুমার দুজনেই পেশায় রংমিস্ত্রি। আসাদ ও নবীরুলের বিরুদ্ধে ঘোড়াঘাট থানায় চুরি মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজে লাল টি-শার্ট পরা হালকা-পাতলা গড়নের যে ব্যক্তিকে দেখা গিয়েছিল, তিনিই নবীরুল। জিজ্ঞাসাবাদে নবীরুল এই তথ্য স্বীকারও করেন। তার বক্তব্য অনুসারে লাল গেঞ্জি জব্দ করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যমতে অপর দু.জন নবীরুল ও সান্টুকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালাই। তারা ঘন ঘন অবস্থান পরিবর্তন করলেও পরে তাদের গ্রেপ্তারে সক্ষম হই। এর মধ্যে নবীরুলকে ঘোড়াঘাট উপজেলা সংলগ্ন চক বামনদিয়া বিশ্বনাথপুর গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
পুলিশের হাতে আটক ছিলেন আরও তিনজন। তারা হলেন, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রানীগঞ্জ কষিগারি এলাকার আবুল কালামের ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন (৪২), সিংড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি দক্ষিণ দেবীপুর গ্রামের গোলাম মোস্তফা আদুর ছেলে মাসুদ রানা (৪০) ও ওই বাসভবনের নৈশপ্রহরী নাহিদ হোসেন পলাশ (৩৮)। তাদের সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় ছেড়ে দেওয়ার কথা জানায় র্যাব।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীরের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার রেজা আহমেদ ফেরদৌস বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আনা হয়েছিল। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বাড়ি গেছেন। তবে প্রয়োজনে আবারও যে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হতে পারে। আরো কাউকে আটক বা রিমান্ডে নিয়ে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অবলম্বন করে ব্যবস্থাও নেওয়া হতে পারে। আমরা এখনো চূড়ান্ত মোটিভ বলার মতো অবস্থায় পৌঁছাইনি। ’
এই হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়ায় ইতোমধ্যেই কেন্দ্রীয় যুবলীগ আসাদুল ইসলামের সঙ্গে জাহাঙ্গীর হোসেনকেও বহিষ্কার করছে। এখন র্যাব বলছে, জাহাঙ্গীরকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এরই প্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে র্যাব কর্মকর্তা রেজা আহমেদ ফেরদৌস বলেন, তারা ইউএনওর বাসায় হামলার ঘটনার ছায়া তদন্ত করছেন। এখানে কারও রাজনৈতিক পরিচয় তাদের বিবেচনার বিষয় নয়।