নিজস্ব প্রতিবেদক:
ফরিদপুর: জমিদখলের পর এবার মধুখালী উপজেলার কামারখালী ইউনিয়নের কোমরপুর গ্রামের বিধবা নারী রত্না পারভীনের জমিতে লাগানো মেহগনি বাগানের চারা গাছ কেটে দিয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালী আলী মিয়া ও মুকুল মিয়া। তিনি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে ধরনা দিলেও কেউ কোনো সমাধান করে দেননি।
উপায়ন্তর না পেয়ে অবশেষে থানা পুলিশের স্মরণাপন্ন হয়েছেন রত্না পারভীন। প্রভাবশালীদের হুমকি-ধমকিতে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন ওই বিধবা নারী ও তার একমাত্র মেয়ে।
কোমরপুর গ্রামের রত্না পারভীনের স্বামী দুলাল বিশ্বাস ২৩ বছর আগে মারা যান। এক মেয়েকে নিয়ে কোনোমতে জীবনযাপন করছেন তিনি। মেয়েটি ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে অনার্সে পড়ায় ফরিদপুরে থাকতে হয় তাকে। মাঝে মধ্যে বাড়িতে আসেন তিনি।
রত্না পারভীনের অভিযোগ, ‘আলী ও মুকুল স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলেন না। স্বামী ও ছেলে সন্তান না থাকায় আমার সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারা করে আসছেন তারা। বিষয়টি গ্রামের সকলেই জানেন।’
‘আলী ও মুকুল আমার বাড়ির জমি পর্যন্ত দখল করে নিয়েছেন। ওই জমি এক ডাকাতের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। তারা বাড়ি তৈরি করে আমাকে সব সময় ভয়-ভীতি দেখান। এমনকি আমি বাড়িতে এলে গ্রামের বাড়ি না থেকে কামারখালীতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে থাকি। সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকি, কোন সময় তারা আমাকে মেরে ফেলেন।’
গত শনিবার (২৯ আগস্ট) বাড়ির পাশে সালামাতপুর ঘাট সংলগ্ন স্বামীর রেখে যাওয়া ৫২ শতাংশ জমিতে মেহগনি গাছের চারা রোপণ করেন রত্না বেগম। ওই দিন রাতেই স্থানীয় প্রভাবশালী আলী মিয়া ও মুকুল মিয়া অধিকাংশ মেহগনির চারা কেটে ও উপড়ে ফেলেন। পরদিন রত্না বেগম স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে বিষয়টি জানান। কয়েকদিন পার হয়ে গেলেও তারা কোনো সমাধান করে না দেওয়ায় মঙ্গলবার (০১ সেপ্টেম্বর) রত্না বেগম এ বিষয়ে মধুখালী থানায় অভিযোগ দেন।
স্থানীয় বাসিন্দা জিয়াউর রহমান বলেন, ‘রত্না বেগমের স্বামী মারা গেছেন দীর্ঘদিন আগে। একজন অসহায় নারীর গাছ কেটে ফেলা ঠিক হয়নি। আলী ও মুকুল প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে চান না। এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছি।’
এলাকাবাসীর অভিযোগ, শুধু রত্না বেগমের জমি দখলই নয়, আলী ও মুকুল এর আগেও এক সংখ্যালঘু পরিবারের জমিও দখল করে নিয়েছেন। তাদের অত্যাচারে পরিবারটি এলাকা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। তাদের দুজনের বিরুদ্ধে আরো নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে।
কামারখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বিশ্বাস বাবু বলেন, ‘ওই বিধবা নারী স্থানীয় মেম্বারকে সঙ্গে নিয়ে আমার কাছে এসেছিলেন। বিষয়টি বলার পর আমি আলী ও মুকুলকে বলে দিয়েছিলাম। তারা ফের গাছ লাগিয়ে দেবেন বলেছিলেন। কিন্তু পরে তারা গাছ লাগাতে অস্বীকার করেন। বিধবা নারীর গাছ কেটে ফেলে তারা ঠিক করেনি। তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মধুখালী থানার এসআই আশরাফুল আলম বলেন, ‘বিধবা নারীর গাছ কাটার বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে বৃহস্পতিবার (০৩ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে নিয়ে পরিদর্শন করেছি। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে এবং তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অভিযুক্ত মুকুল মিয়া ও আলী মিয়ার সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও বন্ধ থাকায় এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
সান নিউজ/ এআর