জেলা প্রতিনিধি: শরীয়তপুরে ৩ শিশু সন্তান নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছেন মা সালমা বেগম। এ সময় ডায়াপার পরে থাকার কারণে ভাসমান ২ শিশুকে বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রলারের ২ শ্রমিক উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান। এ ঘটনায় মাসহ আরও ১ শিশু নিখোঁজ রয়েছে।
আরও পড়ুন: আরও ২ দিনের অবরোধ ঘোষণা
রোববার (৫ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে নড়িয়া উপজেলার জপসা ইউনিয়নের মাইজপাড়া এলাকার কীর্তিনাশা নদীতে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, সালমা বেগমের ৩ সন্তান- সাহাবীর, আনিকা ও সলেমান। তিনি সন্তানদের নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার সময় বিপরীত পাড়ে ২ জন শ্রমিক ট্রলার থেকে মালামাল আনলোড করছিলেন।
এ ঘটনায় সালমা ও সাহাবীর পানিতে ডুবে গেলেও ৩ বছরের আনিকা ও তার ছোট ভাই ১ বছর বয়সী সলেমান ডায়াপার পরে থাকার কারণে পানিতে ভেসে থাকেন।
বিষয়টি চোখে পড়লে ঐ ২ শ্রমিক ভেসে থাকা বাচ্চা দুটিকে দ্রুত পানিতে নেমে উদ্ধার করেন এবং হাসপাতালে নিয়ে যান। এতে বেঁচে যায় ছোট্ট এই অবুঝ ২ শিশুর প্রাণ। ২ শিশু প্রাণে বেঁচে গেলেও এখন পর্যন্ত নিখোঁজ আছেন মা সালমা বেগম এবং বড় ভাই সাহাবীর।
আরও পড়ুন: ভাইকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড
পুলিশ জানিয়েছে, ১০ বছর আগে পারিবারিকভাবে ভোজেশ্বর ইউনিয়নের পাঁচক এলাকার লোকমান ছৈয়ালের মেয়ে সালমা বেগমের ও জপসা ইউনিয়নের মাইজপাড়া এলাকার শাজাহান মাদবরের ছেলে আজবাহার মাদবরের সাথে বিয়ে হয়।
বিয়ের পর সালমা বেগম ও তার স্বামী আজবাহারের সাথে সম্পর্ক ঠিক থাকলেও শাশুড়ি মিলি বেগম, ননদ কলি আক্তার ও কমলা আক্তারের সাথে বনিবনা ছিল না।
শনিবার (৪ নভেম্বর) রাতে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সাথে বাগবিতণ্ডার জেরে রোববার (৫ নভেম্বর) সকালে সালমা বেগম তার ৩ সন্তান আনিকা, সাহাবীর ও সলেমানকে নিয়ে কীর্তিনাশা নদীতে ঝাঁপ দেন। পরে ২ শ্রমিক ভাসমান অবস্থায় নদী থেকে আনিকা ও সলেমানকে উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান।
আরও পড়ুন: দেশে এসেছে ভারতীয় ডিম
খবর পেয়ে নিখোঁজ সালমা বেগম ও ছেলে সাহাবীরকে উদ্ধার করতে কাজ শুরু করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ও ডুবুরি দল। টানা ৬ ঘণ্টার তল্লাশি চালিয়েও তাদের সন্ধান মেলেনি। পরে রাত হয়ে যাওয়ায় প্রথম দিনের মতো এ উদ্ধার অভিযান স্থগিত রাখেন ডুবুরিরা।
২ শিশুকে উদ্ধার করা শ্রমিক সেলিম জানান, আমরা যখন কয়েকজন মিলে বস্তা নামানোর কাজ করছিলাম, তখন নদীর ওপারে এক নারীকে তার ৩ শিশু নিয়ে বসে থাকতে দেখেছিলাম। কিছুক্ষণ পর তাদের আর দেখতে পাইনি।
হঠাৎ নদীর মধ্যে ২ শিশুকে ভেসে থাকতে দেখি। একজন উপুড় অবস্থায়, আরেকজন চিৎ হওয়া অবস্থায়। আমি দ্রুত নদীতে ঝাঁপ দিয়ে তাদের উদ্ধার করি। শ্বাস-প্রশ্বাস চালু রাখতে মুখ দিয়ে ফুঁ দিয়ে বাতাস দেই এবং পরে দ্রুত হাসপাতালে পাঠাই।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার জনসভা সিলেট থেকে শুরু
অপর শ্রমিক মাসুদ বলেন, সাড়ে ৯ টার দিকে আমরা যখন কাজ করছিলাম, ওই মহিলাকে দেখলাম ৩ টি বাচ্চা নিয়ে একটি জায়গায় বসে আছেন। পরে তিনি আরেকটি জায়গায় সরে গিয়ে বসলেন। আমরা কাজে ব্যস্ত থাকায় ওদিকে আর খেয়াল করিনি।
দীর্ঘক্ষণ পর নদীতে তাকিয়ে দেখি ২ টি বাচ্চা নদীর স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। বাচ্চা ২ টি ডায়াপার পরে থাকায় বেঁচে গেছে। না হলে ওরাও ডুবে যেতো।
শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নড়িয়া সার্কেল) আহসান হাবীব বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মা ও বড় ছেলে নিখোঁজ আছে। রাত হয়ে যাওয়ায় প্রথম দিনের মতো উদ্ধার কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে।
আজ সকালে পুনরায় উদ্ধার কাজ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে পরিবারের কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ দিলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
সান নিউজ/একে/এনজে