নিজস্ব প্রতিবেদক:
খুলনা: খুলনা নগরীর মিস্ত্রিপাড়া আরাফাত জামে মসজিদ এলাকায় গুলিবিদ্ধ ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী লামিয়ার অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। এখন সে ঝুঁকিমুক্ত বলে জানিয়েছেন খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
ঘটনার ৭০ ঘণ্টা পর সোমবার (৩১ আগস্ট) সকালে অর্থোপেডিক্স ও সার্জারি বিভাগের সমন্বয়ে খুমেক হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে অস্ত্রোপচার করে লামিয়ার বা পা থেকে গুলি বের করা হয়। খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ও অর্থপেডিক্স বিভাগের প্রধান ডা. মেহেদী নেওয়াজের নেতৃত্বে সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা লামিয়ার অস্ত্রোপচার করেন।
ডা. মেহেদী নেওয়াজ বলেন, এটি একটি জটিল অস্ত্রোপচার। যার কারণে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লেগেছে।
রোববার (৩০ আগস্ট) লামিয়ার থ্রি-ডি সিটি স্ক্যান এবং হাই আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পর মেডিকেল বোর্ড গঠন করে চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচারের এ সিদ্ধান্ত নেন।
গত শুক্রবার (২৮ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এলাকার ঠিকাদার শেখ ইউসুফ আলীর ছোড়া গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে লামিয়ার বাম পায়ে বিদ্ধ হয়।
ওই সময় ইউসুফ আলীর বাড়িতে গিয়েছিলেন তার মেয়ে রুকাইয়ার প্রেমিক সাহেদ ও তার তিন বন্ধু। তাদের প্রেমের সম্পর্কে কথা বলতেই ক্ষিপ্ত হয়ে হুমকি দেন ঠিকাদার। পরিস্থিতি খারাপ বুঝে রুকাইয়ার মামা তাদের বের হয়ে যেতে বলেন। তারা বের হতে না হতেই পিস্তল হাতে বেরিয়ে পড়েন ঠিকাদার। পরে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। গুলির শব্দ শুনে পাশের বাড়ির জামাল হোসেনের ১৫ বছরের মেয়ে লামিয়া কৌতুহলবশত ঠিকাদারের বাড়ির সামনে যায়। ঠিক সেই সময় একটি গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে বিদ্ধ হয় তার বাম পায়ে।
স্থানীয়রা জানান, এক বছর বয়সে লামিয়ার বাবা তাদের ফেলে রেখে চলে যান। তারপর থেকেই লামিয়াকে নিয়ে তার মা নানাবাড়িতে থেকে অন্যের বাসায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।
লামিয়ার নানা বলেন, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকে তিনদিন ব্যথার যন্ত্রণায় ছটফট করছিলো লামিয়া। কিন্তু ঘটনার পর থেকে তাদের পাশে এসে কেউ দাঁড়ায়নি।
ঠিকাদার শেখ ইউসুফ আলী ঘটনার পর মেয়ের প্রেমিক শাহেদ ও তিন বন্ধুর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করেছেন। পুলিশ ওই চার যুবককে গ্রেপ্তার করেছে।
ঘটনার বিবরণে ইউসুফ আলী এজাহারে উল্লেখ করেছেন, তার বাড়িতে গিয়ে ঠিকাদারি কাজের বদলে চার যুবক তার কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এক পর্যায়ে তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিলে তিনি পিস্তল নিয়ে তাদের ধাওয়া করেন। এ সময় পিস্তলে তিন রাউন্ড গুলি ছিল। তিনি দুই রাউন্ড গুলি ছোড়েন। ওই চার যুবকও দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় গুলি করেছিলেন। তাদের গুলি লামিয়ার পায়ে বিদ্ধ হয়েছে।
ঠিকাদারের করা মামলা ও দাবি করা সব তথ্য মিথ্যা বলে অভিযোগ করে ওই চার যুবকের স্বজনেরা বলেন, ঠিকাদার ইউসুফ আলীর মেয়ে রুকাইয়া বানরগাতির সোহরাওয়ার্দী কলেজে পড়েন। ঠিকাদার মেয়ের বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। মেয়ের মোবাইল ফোনও কেড়ে নিয়েছিলেন তিনি। রুকাইয়ার সঙ্গে শাহেদ নামে ছেলেটির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কয়েকদিন মোবাইল ফোন বন্ধ পেয়ে প্রেমিক শাহেদ তার তিন বন্ধু মেহেদি, ইসমাইল ও সাইফুলকে নিয়ে যান ইউসুফ আলীর বাড়িতে। তারা রুকাইয়া ও শাহেদের দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্কের কথা বলতেই ইউসুফ আলী ক্ষিপ্ত হয়ে প্রথমে তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। তখন সেখানে উপস্থিত রুকাইয়ার মামা তাদের বের হয়ে যেতে পরামর্শ দেন। তারা বের হয়ে দরজা পর্যন্ত আসার পরে ইউসুফ পিস্তল নিয়ে বের হয়ে গুলি ছোড়েন।
এ ঘটনা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নিতে ঠিকাদার মেয়ের প্রেমিক ও প্রেমিকের বন্ধুদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা করেছেন বলেও অভিযোগ স্বজনদের।
সান নিউজ/ এআর