জেলা প্রতিনিধি: ভারতের সিকিমে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বাংলাদেশের উত্তরের জেলা গাইবান্ধায় তিস্তা নদীর পানি হু হু করে বাড়ছে।
আরও পড়ুন: ঢাকাসহ ১১ অঞ্চলে ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি ৯০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ভারতের উত্তর সিকিমে তিস্তা নদীর চুংথাং ড্যাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উজানে তিস্তার পানি সমতলে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি জানান, আজ সকাল ৯ টায় তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে পানির উচ্চতা রেকর্ড করা হয়েছে ২৯.৫ মিটার, যা বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় তিস্তা নদী তীরবর্তী কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: রূপপুরে পারমাণবিক জ্বালানি হস্তান্তর আজ
বুধবার (৪ অক্টোবর) থেকে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে জনসাধারণকে সতর্ক করে দিনভর মাইকিং করেছে উপজেলা প্রশাসন। এ সময় তিস্তা বেষ্টিত চর ও নিচু অঞ্চলের বাসিন্দাদের দ্রুত উঁচু স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
জানা যায়, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের চর চরিতাবাড়ি, মাদারিপাড়া, পাড়া সাদুয়া, কানিচরিতা বাড়ি, রাঘব, কারেন্ট বাজার, বেলকা ইউনিয়নের তালুক বেলকা, জিগাবাড়ি, পঞ্চানন্দ পলাশতলা, বেলকা নবাবগঞ্জ ও কিশামত সদর, কাপাসিয়া ইউনিয়নের বাদামেরচর, কাজিয়ারচর, পোড়ার চর, কেরানির চর, রাজার চর, মিন্টু মিয়ার চরসহ তারাপুর, চন্ডিপুর ও কঞ্চিবাড়ি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: জাপানে ৬.৬ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প
নদীর তীরবর্তী বাসিন্দারা জানান, হঠাৎ করে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা বিপদে পড়েছি। জমিতে অনেক কষ্ট করে বিভিন্ন ধরনের ফসল লাগিয়েছি। নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আমাদের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হবে।
উপজেলার চর চরিতাবাড়ি গ্রামের মিন্টু মিয়া জানান, হঠাৎ করে তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতিমধ্যে এ চরের বেশ কিছু নিচু এলাকা ডুবে গেছে। ২/১ দিনের মধ্যে পানি সরে না গেলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আরও পড়ুন: হাতিয়ার সঙ্গে নৌ যোগাযোগ বন্ধ
এ বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তরীকুল ইসলাম জানান, ভারত থেকে পানি আসায় উপজেলার সব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বারসহ সচেতনমহল, সুধীজন ও প্রশাসনের বিভিন্ন ইউনিট নিয়ে জরুরি মিটিং করা হয়েছে।
তিনি জানান, নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষদের সতর্ক করতে সকাল থেকেই মাইকিং করা হয়েছে এবং সর্ব সাধারণকে গরু-ছাগলসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে সতর্ক থেকে নিকটস্থ বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র বা ফ্ল্যাট শেল্টারে অবস্থান নিতে বলা হয়েছে। এছাড়া জরুরি যোগাযোগের জন্য নৌকার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
তরীকুল ইসলাম আরও জানান, ৪ জন অফিসারকে দায়িত্ব দিয়ে উপজেলা কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা নিরবিচ্ছন্নভাবে দায়িত্ব পালন করবেন তারা।
যেকোনো প্রয়োজনে যোগাযোগ করা হলে তাৎক্ষণিক যেকোনো ধরনের সহযোগিতায় প্রস্তুত রয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
আরও পড়ুন: আগামীকাল প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন
বন্যার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সব ধরনের প্রস্তুতির কথা জানিয়ে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারি কমিশনার (এনডিসি, ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা) জুয়েল মিয়া বলেন, বন্যার আগাম বার্তা জানাতে উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তারা তা বাস্তবায়ন করেছে।
তিনি বলেন, বন্যা মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা যেকোনো উপজেলা থেকে সরসরি সেখানে যোগাযোগ করা যাবে। এছাড়া পানিবন্দি মানুষদের সেবা দিতে বিভিন্ন দপ্তরে ভলান্টিয়ার প্রস্তুত রয়েছে এবং আশ্রয়কেন্দ্র ও ফ্ল্যাট শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, জরুরি যোগাযোগেরর জন্য ৪ টি আধুনিক রেসকিউ বোর্ড প্রস্তুত রয়েছে। পাশাপাশি বন্যাকালীন মানুষদের জন্য জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থাসহ বিশুদ্ধ পানি ও শুকনা খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুদ রয়েছে।
সান নিউজ/এনজে