নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহী: মোহনপুরে সাংবাদিক পরিচয়ে মাদক ব্যবসা, মাদকসেবন ও চাঁদাবাজি যারা করছেন, তাদের বেঁধে পেটানোর নির্দেশ দিয়েছেন রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন।
বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) রাতে বঙ্গবন্ধুর ৪৫তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভায় এ নির্দেশ দেন তিনি। এ নিয়ে তার দেড় মিনিটের বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
অনুষ্ঠানের মঞ্চে বক্তব্য দেওয়া ভিডিওতে সংসদ সদস্যকে বলতে শোনা গেছে, ‘গুটি কয়েক সাংবাদিক এসে কার্ড ধরিয়ে বলেন, আমরা অমুক পত্রিকা, অমুক অনলাইনের পদধারী সাংবাদিক। এদের কোনো হেড অফিস নাই।...আমি তথ্য মন্ত্রণালয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম সারাদেশে কয়টা অনলাইনের অনুমতি দিয়েছেন। ওখানে বলেছে, ৫০টাও নয়। আমি বলেছি, আমার মোহনপুরে যে দেখি ৬০টা আছে? তাহলে সারা বাংলাদেশে যা আছে মোহনপুরে তার চেয়ে বেশি?’
এরপর এসব সাংবাদিকদের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা (স্থানীয় অনলাইনের সাংবাদিক) কার্ড ঝুলাবেন, মাদকের ব্যবসা করবেন, নিরাপদে মাদক সেবন করবেন...আগে তাদের বাইন্ধেন কিন্তু। আসলে তাদের বান্ধবেন। কতো বড় সাংবাদিক আমি দেখতে চাই। ‘
এরপর এসব সাংবাদিকের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনি মানুষকে ভয় দেখাবেন। এই কথা আমি লিখে দেবো, পেপারে দিয়ে দেবো, ফেসবুকে দিয়ে দেবো.. তথ্য সন্ত্রাস আইন করা হয়েছে বাংলাদেশে। তথ্য সন্ত্রাস আইন কঠিন আইন। তার চেয়ে বড় আইন আছে দেশের জনগণের হাতে।’
জনগণের উদ্দেশে এমপি আয়েন উদ্দিন বলেন, ‘এ সকল চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী, মাদক সেবনকারী নামধারী সাংবাদিকদের ধরে বেঁধে পেটাবেন। মাইরের ওপর কোনো আইন নাই। কতোটা সাংবাদিক আমি দেখতে চাই?’
দীর্ঘ ২২ বছর মোহনপুর উপজেলায় সাংবাদিকতা করছেন ও বর্তমানে মোহনপুর প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক পদে রয়েছেন রাজশাহীর আঞ্চলিক পত্রিকা দৈনিক সোনার দেশের প্রতিনিধি মোস্তফা কামাল। রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন যখন এ ধরনের বক্তব্য দেন, তখন সেই অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত ছিলেন।
মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমাদের এই ছোট্ট উপজেলায় ১০ জন সাংবাদিক পেশাদারিত্ব নিয়ে কাজ করেন। কিন্ত ইদানিং ১০০ জনের মতো ব্যক্তি সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে অপসাংবাদিকতা করে চাঁদাবাজি, মাদক বহনসহ বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত রয়েছেন। মূলত তাদের উদ্দেশে এমপি আয়েন উদ্দিন বক্তব্য রেখে জনগণকে সতর্ক করেছেন। আমরা যারা মূলধারার প্রতিষ্ঠানে কাজ করি, তাদেরকে তিনি হেয় প্রতিপন্ন করেননি। তাই আমরাও তার এই বক্তব্যকে সমর্থন করি। নামধারী এসব সাংবাদিকের অত্যাচারে আমাদের নিজেদের পরিচয় দিতে এখন খারাপ লাগে। তাই তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে এসব অপসাংবাদিকতাকারী কিংবা অনলাইন পরিচালনাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানাই।’
এদিকে সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনের কাছে এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে আয়েন উদ্দিন এমপি রাজশাহীর স্থানীয় এক গণমাধ্যমকর্মীকে তার বক্তব্যের বিষয়ে বলেন, ‘আমি বলতে চেয়েছিলাম যে জনগণের চেয়ে বড় শক্তি আর নেই। আমার বক্তব্যটি কেবলমাত্র সেই সাংবাদিকদের উদ্দেশে, যারা সাংবাদিকতার নামে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘আমি সত্যিকারের নিবেদিতপ্রাণ সাংবাদিকদের সম্মান রক্ষায় এই বক্তব্য দিয়েছি।’
এই এমপির মতে, মোহনপুর উপজেলায় ছয়টি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা ও ৬৭টি ওয়ার্ড আছে। কিন্তু, সেখানে সাংবাদিক রয়েছেন কমপক্ষে ৭৬ জন। তার মানে সেখানে মোট ওয়ার্ড সংখ্যার চেয়েও ৯ জন সাংবাদিক বেশি।
ওই সাংবাদিককে তিনি আরও বলেন, এই সাংবাদিক ও ওয়েব পোর্টালগুলোর কোনো অফিস বা প্রধান কেউ নেই, যাতে যে কেউ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে না পারেন। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। কিন্তু, কিছুদিন পরে তারা কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন এবং পুনরায় অপরাধে জড়িয়ে পড়েন।
দেখুন সেই ভিডিও-
Posted by Faruk Ahmed on Thursday, August 27, 2020
সান নিউজ/ এআর