নিজস্ব প্রতিবেদক:
খুলনা: গুলিবিদ্ধ অবস্থায় অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে ১৩ বছরের কিশোরী লামিয়া। ৩৪ ঘণ্টা পার হলেও অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়নি তার।
ভীষণ আতঙ্কগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা জানান, শুক্রবার (২৮ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয় লামিয়াকে। তাকে হাসপাতালের তৃতীয় তলায় ১১-১২নং ওয়ার্ডের ২২নং বেডে রাখা হয়েছে। বাম পায়ের ওপরের অংশে বিদ্ধ হওয়া গুলির অসহনীয় যন্ত্রণায় ছটফট করছে মেয়েটি।
শনিবার (২৯ আগস্ট) রাত ৯টা পর্যন্ত হয়নি তার অস্ত্রোপচার। চিকিৎসকরাও বলছেন, যতোক্ষণ গুলি বের না করা হবে, ততোক্ষণ তার এ যন্ত্রণা বয়ে বেড়াতে হবে।
খুমেক হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. অনিরুদ্ধ সরকার জানান, লামিয়ার বাম পায়ের ওপরের অংশের (থাই) গুলিটি বিদ্ধ হয়েছে। তবে, এটি হাঁড়ে না লেগে মাংসের মধ্যে ঢুকে আছে। শনিবার তাকে অর্থপেডিক্স চিকিৎসককে দেখানো হয়েছে। এখন তার পরবর্তী চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। লামিয়া বর্তমানে আশঙ্কামুক্ত। জীবনের ঝুঁকি না থাকলেও তার পায়ের বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
লামিয়া মহানগরীর মিস্ত্রিপাড়া আরাফাত জামে মসজিদ এলাকার জামাল হোসেনের মেয়ে। পরিবারের সদস্যরা জানান, লামিয়ার এক বছর বয়সে তার বাবা তাকে ও তার মাকে ফেলে রেখে চলে যান। এরপর থেকে লামিয়া মায়ের সঙ্গে নানার বাড়িতে থাকে। লামিয়ার মা অন্যের বাসায় কাজ করে তাকে লেখাপড়া শেখাচ্ছিলেন। সে এখন ইকবালনগর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী।
শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে খুলনার মিস্ত্রিপাড়া আরাফাত জামে মসজিদের পাশে ঠিকাদার শেখ ইউসুফ আলীর বাড়িতে দুষ্কৃতকারীরা এসেছিলেন চাঁদা নিতে। ঠিকাদারের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডার একপর্যায়ে চাঁদাবাজদের উদ্দেশ্যে তার লাইসেন্স করা বৈধ পিস্তল দিয়ে গুলি করেন ইউসুফ আলী। গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে বিদ্ধ হয় লামিয়ার বাম পায়ে।
লামিয়ার নানা জানান, শুক্রবার গুলি লাগার পর থেকেই ব্যথার যন্ত্রণায় ছটফট করছে লামিয়া। গুলি লাগার স্থানের রক্ত পড়া বন্ধ হলেও দু:সহ যন্ত্রণায় সারা রাত ঘুমায়নি। গতকাল শুক্রবার হওয়ায় বড় ডাক্তার না থাকায় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে গুলি বের করা সম্ভব হয়নি। গুলি বের করতে বোর্ড বসার কথা ছিল। এখনও তা হয়নি। অসহায় ও দরিদ্র লামিয়ার পাশে থাকতে সবার প্রতি দাবি জানান তিনি।
কেউ খোঁজ নিয়েছেন কি না- প্রশ্ন করলে লামিয়ার নানা বলেন, ‘ঠিকাদার ইউসুফ আলী বলেছেন, চিকিৎসার সব খরচ তিনি দেবেন। তিনি দুই হাজার টাকা দিয়ে তার আত্মীয়-স্বজন পাঠিয়েছিলেন হাসপাতালে। কিন্তু আমি তা রাখিনি।’
মামলা করবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কার বিরুদ্ধে মামলা করবো। ঠিকাদার ইউসুফ আলী তো ইচ্ছা করে গুলি করেননি। তিনি তো চাঁদাবাজদের হাত থেকে বাঁচতে গুলি করেছেন। ঠিকাদার চাইলে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন।’
সান নিউজ/ এআর