নিজস্ব প্রতিবেদক:
বরিশাল: বাকেরগঞ্জ উপজেলার ফরিদপুরের ইউনিয়নের ভাতশালা গ্রামে আওয়ামী লীগ নেতা হত্যাসহ ২১ মামলার আসামি ও ওয়ার্ড মেম্বার জহিরুল ইসলাম মামুন ওরফে হাত কাটা মামুনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়েছে প্রতিপক্ষের লোকেরা। তার চোখ তুলে ফেলারও চেষ্টা করা হয়। এর জের ধরে হামলাকারীদের অনুসারী বারেক মোল্লাকে এলোপাতাড়ি কোপানো হয়। বৃহস্পতিবার বিকালে এই ঘটনার পরপরই ওই দুই জনকে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাত সাড়ে ৯টায় দুই জনকে ঢাকায় রেফার করেন চিকিৎসকরা।
মামুন ভাতশালা গ্রামের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার এবং একই এলাকার মালেক হাওলাদারের ছেলে। তার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষরা আগে মামুনের ডান হাত বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এরপর থেকে তাকে হাত কাটা মামুন উপাধী দেওয়া হয়। মামুন যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
বারেক মোল্লা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং একই গ্রামের আদম আলী হাওলাদারের ছেলে।
এলাকাবাসী জানান, ২০১৬ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিনকে হত্যা করা হয়। ওই মামলায় মেম্বার মামুনও আসামি। সম্প্রতি মামুন জামিনে কারাগার থেকে মুক্ত হয়। বৃহস্পতিবার বরিশাল থেকে নিজ বাড়ি ভাতশালা গ্রামের উদ্দেশে রওয়ানা হয়। ওই গ্রামের চৌরাস্তায় আগে থেকে ওঁৎপেতে থাকা মহিউদ্দিনের শ্যালক সবুজের সন্ত্রাসী বাহিনী মামুনের গতিরোধ করে। এরপর মামুনকে মোটরসাইকেল থেকে ফেলে কোপাতে থাকে। এক পর্যায়ে মামুনের বাম হাতের রগ কেটে দেয়। এরপর দুই চোখ উৎপাটনের চেষ্টা চালায়।
এ খবর মামুনের সন্ত্রাসী বাহিনী জানতে পেরে তারাও অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঘটনাস্থলে আসার সময় সবুজের অনুসারী বারেক মোল্লার ওপর হামলা চালায়। তারা এলোপাতাড়ি কুপিয়ে বারেক মোল্লাকে জখম করে। এ সময় গ্রামে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ২০১৬ সালে মহিউদ্দিন হত্যার পর ওই এলাকায় একটি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। কিন্তু এরপরও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী মামুন ও সবুজ গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলেই আসছে।
এলাকাবাসী আরও জানান, গত ৪ জুলাই মামুনের অনুসারী ভাতশালা গ্রামের মনির হাওলাদার কুপিয়ে মারাত্মক জখম করা হয়। এতে তার একটি হাত পঙ্গু হওয়ার পথে। বর্তমানে মনির ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছে। ওই ঘটনায় সবুজসহ ১০/১২ জনকে আসামি করে তার স্ত্রী কুলসুম বেগম থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
এদিকে মেডিকেলে চিকিৎসাধীন বারেক মোল্লা জানান, মামুন মেম্বার তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে তার বাড়িতে হামলা চালান। তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। এ সময় বাড়ির লোকজন এগিয়ে এলে মামুনসহ তার সন্ত্রাসী বাহিনী পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। গ্রামবাসী মামুনকে ধরে তার চোখ উৎপাটনের চেষ্টা চালায়।
মামুনের ভাই মো. সুমন জানান, বারেক মোল্লার অভিযোগ সত্য নয়। আমার ভাই মামুনকে হত্যার উদ্দেশ্যে সবুজের সন্ত্রাসী বাহিনী এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। এরপর বাম হাতের রগ কেটে দেয় এবং চোখ উৎপাটনের চেষ্টা চালায়। এর আগে আরও দুই বার মামুনকে হত্যার উদ্দেশ্যে সবুজ তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন সুমন।
এক সময় সবুজ ও মামুন বন্ধু ছিলেন। পরে মামুন সাবেক চেয়ারম্যান মীর মহসিনের গ্রুপে যোগ দেয়। এছাড়া গত নির্বাচনে সবুজ ফরিদপুর ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান। এর জন্যও মামুনকে দায়ী করেন সবুজ। এখন ফরিদপুর ইউনিয়নের সবুজ ও মামুন গ্রুপের আধিপত্য নিয়ে দ্বন্দ্বে তটস্থ থাকতে হয় সাধারণ গ্রামবাসীকে।
বাকেরগঞ্জ থানার ওসি আবুল কালাম জানান, এসপি সাইফুল ইসলাম ও এএসপি আনোয়ার সাইদ রাত সাড়ে ১০টায় ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেন। ওসি আরও জানান, আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন হত্যাকাণ্ড নিয়ে দুই গ্রুপের দুই জনকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। তবে এখনও কোন গ্রুপ থেকে অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
ওসি বলেন, মেম্বার মামুনের বিরুদ্ধে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানা এবং বাকেরগঞ্জ থানায় গুম, হত্যা, নারী নির্যাতন এবং অস্ত্র ও চাঁদাবাজিসহ ২১টি মামলা রয়েছে।
সান নিউজ/ এআর