ছবি: সংগৃহীত
সারাদেশ

যশোরে জলাবদ্ধতা, ভোগান্তিতে বাসিন্দারা

বেনাপোল প্রতিনিধি: বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় যশোর শহরের নিম্নাঞ্চল। ড্রেন উপচে পানি প্রবেশ করে সড়কে। সড়ক ছাপিয়ে সেই পানি ঢুকে পড়ে উঠান ও ঘরবাড়িতে। ভোগান্তিতে পড়তে হয় শহরের নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের।

আরও পড়ুন: ১৫ অঞ্চলে বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস

শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত ও জলাবদ্ধতা দূর করতে গত দেড় দশকে প্রায় ৮০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। কিন্তু ফলাফল কার্যত শূন্য। এজন্য পৌরসভার গাফিলতি, অব্যবস্থাপনা, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও নাগরিকদের অসচেতনতাকে দায়ী করা হচ্ছে।

এরই মধ্যে এই জলাবদ্ধতা নিরসনে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২০ কোটি টাকার আরও একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

যশোর পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, যশোর শহরে ২৫২ কিলোমিটার পয়োনিষ্কাশন নালা (ড্রেন) রয়েছে। এর মধ্যে ৫৫ কিলোমিটার আরসিসি, ৬০ কিলোমিটার ইট, ৫ কিলোমিটার পাইপ ও ১৩০ কিলোমিটার কাঁচা নালা।

আরও পড়ুন: পাসপোর্টসহ ১৭ দালাল গ্রেফতার

এর মধ্যে নগর উন্নয়ন প্রকল্পসহ কয়েকটি প্রকল্পের মাধ্যমে গত ১৪ বছরে ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪০ কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে।

এখন শহরের দক্ষিণাংশের পানি নিষ্কাশনের জন্য খাল কেটে মুক্তেশ্বরী নদীতে সংযোগ প্রদানের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দক্ষিণাংশের পানি মুক্তেশ্বরী দিয়ে নিষ্কাশিত হবে। এতে এই অঞ্চলের জলাবদ্ধতা দূর হবে বলে আশাবাদী পৌরসভা।

আরও পড়ুন: রাজধানীতে নারীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

কিন্তু যশোর পৌরবাসীর অভিযোগ, পৌরসভা পানি নিষ্কাশন নিয়ে নানা তৎপরতার কথা বললেও প্রতিবছরই জলাবদ্ধতার পরিধি বাড়ছে। একদিন ভারী বৃষ্টি হলেই শহরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে যায়। ড্রেন উপচে সড়কে পানি থৈ থৈ করে। কিছু কিছু এলাকার বাড়ি-ঘরেও পানি প্রবেশ করে।

বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, যশোর শহরের ড্রেনের পানি প্রবাহের পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু এই সংকট দূর করার জন্য কোনো ধরনের মহাপরিকল্পনা নেই পৌরসভার। ফলে ভোগান্তি নিয়েই বসবাস করছে শহরের দক্ষিণ অংশের অর্ধ লক্ষাধিক বাসিন্দা।

আরও পড়ুন: ঢাকা কলেজ ও আইডিয়াল কলেজ সংঘর্ষ

বৃষ্টি হলেই যশোর পৌরসভার ৯ টি ওয়ার্ডের অন্তত ২০ টি সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। শহরের খড়কি এলাকার শাহ আবদুল করিম সড়ক, শহরের পিটিআই সড়কের একপ্রান্ত, নাজির শংকরপুর, খড়কি রূপকথা মোড় থেকে রেললাইন, বেজপাড়া চিরুনিকল মোড়, মিশনপাড়া, আবরপুর, বিমানবন্দর সড়ক, ষষ্ঠীতলা পাড়া, শংকরপুর চোপদারপাড়া, স্টেডিয়াম পাড়া, নীলরতন ধর রোডসহ বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এসব এলাকার বাড়িঘরেও পানি ঢুকে পড়ে।

শহরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শহরের ভেতর দিয়ে ভৈরব ও মুক্তেশ্বরী নামে দুটি নদ-নদী বয়ে গেছে। এর মধ্যে ভৈরব নদ দিয়ে শহরের উত্তরাংশ ও মুক্তেশ্বরী নদী দিয়ে শহরের দক্ষিণাংশের পানি নিষ্কাশিত হয়।

আরও পড়ুন: এইচআইভি আক্রান্ত নারীর সন্তান প্রসব

কিন্তু গত দেড় দশক ধরে শহরের দক্ষিণাংশের পানি মুক্তেশ্বরী নদী দিয়ে নামতে পারছে না। পয়োনিষ্কাশন নালার মাধ্যমে শহরের পানি হরিণার বিল দিয়ে মুক্তেশ্বরী নদীতে যেত।

কিন্তু ২০১০ সালে হরিণার বিলে যশোর মেডিকেল কলেজ এবং এর আগে সেখানে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল স্থাপিত হয়। এরপর আশপাশে আরও অনেক স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এতে বিল দিয়ে পানি আগের মতো নিষ্কাশিত হতে পারছে না।

আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে গাছের চারা বিতরণ

ওই পানি বের করার জন্য খালের মাধ্যমে মুক্তেশ্বরী নদীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে হবে। কিন্তু পৌরসভা গত দেড় দশকেও সেই উদ্যোগ নিতে পারেনি।

শহরের বেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা জেলা সহকারী তথ্য অফিসার এলিন সাঈদ-উর রহমান বলেন, এখানে ১৫-২০ বছর ধরে জলাবদ্ধতার সমস্যা। বৃষ্টি হলে মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকে না।

অপরিকল্পিত ড্রেন নির্মাণ করায় শহরের পানি চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এই জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। ঠিক মতো ড্রেন পরিষ্কার করাও হয় না।

আরও পড়ুন: মুন্সীগঞ্জে নববধূর মৃত্যূ নিয়ে রহস্য

জলাবদ্ধতা নিয়ে কথা হলে পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের জলাবদ্ধতা নিরসন আন্দোলন কমিটির অ্যনতম সংগঠক বাম রাজনীতিক জিল্লুর রহমান ভিটু জানান, শহরে জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হচ্ছে ড্রেনগুলো সংকুচিত করে ফেলা। পৌরসভা ড্রেন নির্মাণের নামে অপরিকল্পিতভাবে ড্রেনগুলো ছোট করে ফেলেছে।

সম্প্রতি দেখা গেছে, কাজীপাড়ায় ১২ ফুট ড্রেনকে মাত্র আড়াই ফুট করে নির্মাণ করা হচ্ছে। গোটা পৌর এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। আর এই ড্রেনগুলোও পরিষ্কার করা হয় না।

আরও পড়ুন: পাহাড়ে মিলল পর্যটকের মরদেহ

পাশাপাশি অসচেতন নাগরিকরা ড্রেনকে ডাস্টবিন বানিয়ে ফেলেছেন। সব ধরনের ময়লা আবর্জনা তারা ড্রেনে ফেলেন। ফলে ড্রেন বন্ধ হয়ে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাকে অকার্যকর করে ফেলেছে।

একইসঙ্গে অপরিকল্পিত নগরায়নে গোটা শহর জুড়ে বাড়িঘর গড়ে উঠছে, কিন্তু এর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই। বিশেষ করে, শহরের মাঝের একটি অংশের পানি দক্ষিণাঞ্চল দিয়ে বিল হরিণায় নিষ্কাশিত হতো।

আরও পড়ুন: পুলিশ জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে

সেখানে টার্মিনাল ও মেডিকেল কলেজ গড়ে ওঠায় আশপাশে অনেক স্থাপনা হয়েছে। ফলে বিল হারিণায় আর পানি নামতে পারছে না। এই পানি শহরের বড় অংশকে জলাবদ্ধ করে রাখছে।

নাগরিক অধিকার আন্দোলন যশোরের সমন্বয়ক মাসুদুজ্জামান মিঠু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উন্নয়নের ক্ষেত্রে পৌরসভার সঠিক পরিকল্পনার অভাবে শহরে জলাবদ্ধতা দূর হচ্ছে না। বরং অপরিকল্পিত উন্নয়নে অপচয় করা হয়েছে।

ড্রেনগুলো সরু হয়ে গেছে, রাস্তার চেয়ে উঁচু হয়ে গেছে। ফলে বৃষ্টি হলে ড্রেন উপচে পানি সড়কে চলে আসছে।

আরও পড়ুন: ভ্যান উল্টে খালে পড়ে ব্যবসায়ী নিহত

যশোর পৌরসভার মেয়র হায়দার গণী খান পলাশ বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তবে শহরবাসীর অসচেতনতার কারণেও নালার পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। রাস্তা ও নালা সংস্কার এবং নির্মাণে নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে।

তিনি উল্লেখ করেন, পৌর এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণে পৌরসভা সবসময়ই তৎপর। পৌর এলাকার ড্রেন পরিষ্কার করে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখা হচ্ছে। শহরের দক্ষিণাংশের পানি নিষ্কাশনের জন্য মুক্তেশ্বরীর সঙ্গে সংযোগ খাল স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছি।

আরও পড়ুন: ৫ শিক্ষার্থীকে কেন্দ্রে পৌঁছে দিল ছাত্রলীগ

২০ কোটি টাকার প্রকল্পটির অর্থায়ন করছে বিশ্বব্যাংক। এরই মধ্যে এর দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। শহরের দক্ষিণাংশ এই সংযোগ খালের মাধ্যমে মুক্তেশ্বরীর সঙ্গে সংযুক্ত হলে শহরের মধ্যভাগের একটি অংশ এবং দক্ষিণাংশের পানি এই খাল দিয়ে মুক্তেশ্বরীর মাধ্যমে নিষ্কাশিত হয়ে যাবে। ফলে এই অংশের জলাবদ্ধতা সমস্যার নিরসন হবে।

সান নিউজ/এনজে

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

সবজির বাজারে স্বস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে কমেছে পেঁয়াজ, সবজি...

বড় দুর্ঘটনা থেকে বাঁচলেন পূজা 

বিনোদন ডেস্ক: ঢাকাই চিত্রনায়িকা ও মডেল পূজা চেরি ডজনখানেক ছব...

স্বামীকে মৃত দেখিয়ে মামলা, নারী আটক

জেলা প্রতিনিধি : সাভারের আশুলিয়ায় জীবিত স্বামীকে বৈষম্যবিরোধ...

বৈষম‌বিরোধী আন্দোলনে বেঁচে ফেরার আশা করেনি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পতন আন্দোল&zwnj...

ইসলামী ব্যাংকের সাথে হাব-এর মতবিনিময়

নিজস্ব প্রতিবেদক: ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি-এর উদ্যোগে হ...

জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের পরামর্শ

নিজস্ব প্রতিবেদক : নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সদস্য তোফায়েল আহ...

বাজার সহনশীল করার চেষ্টা করছি

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাজারে নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা কমে এসেছে জ...

কুকুর-বিড়াল হত্যায় ক্ষুব্ধ জয়া-সালমান

বিনোদন ডেস্ক: রাজধানীর মোহাম্মাদপুরের জাপান গার্ডেন সিটি এলা...

ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে পালিয়েছেন শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক : শেখ হাসিনা জাতির ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে পালিয়ে...

স্বামীর মুঠোফোনে সাবেক প্রেমিকের ম্যাসেজ-ভিডিও, নববধূর আত্মহত্যা

নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীর সুবর্ণচরে স্বামীর মুঠোফোনে সা...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা