মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ: বিচারক তার এজলাসে বিচার-প্রার্থীদের জন্য লিখছেন "হাত জোড় করে দাড়াবেন না, স্বাভাবিক থাকুন" একই সাথে তিনি আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে লিখছেন "অনুগ্রহ করে মাথা নত করে কুর্নিশ করবেন- না”।
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে প্রেস কাউন্সিলের মতবিনিময় সভা
বিচারকের এমন মহতি লিখায় বিচার প্রার্থী ও মুন্সীগঞ্জ জেলা আইনজীবীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
মুন্সীগঞ্জ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইফতি হাসান ইমরান গত ১৬ই আগস্ট (বুধবার) এ কথাগুলো লিখে সেরেস্তায় টানিয়ে দেন।
১৭ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) তার এ লেখা মুন্সীগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সদস্য ও আদালতে আসা সাধারণ মানুষের দৃষ্টিগোচর হলে, কথাগুলো ব্যাপক সাড়া ফেলে।
আরও পড়ুন: স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত
এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তার এই লিখা বিভিন্ন মানুষ ছড়িয়ে দিলে ওই বিচারককে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্যালুট জানানো ও বাহ্-বা দেওয়া হচ্ছে।
মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি শহীদ-ই-হাসান তার ফেসবুকে পেইজে লিখেন, “আজ মুন্সীগঞ্জের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জনাব ইফতি হাসান ইমরান -এর আদালতে দুটি লেখা চোখে পড়ল। তাঁর এজলাসের সামনে লিখা-"অনুগ্রহ করে মাথা নত করে কুর্নিশ করবেন না।" আর "বিবাদী বা আসামির ডকে লিখা "হাতজোড় করে দাঁড়াবেন না। স্বাভাবিক থাকুন।" তাঁর এ উন্নত চিন্তার বহিঃপ্রকাশ আমাকে বিমুগ্ধ করেছে। আড়াই শত বছরের বৃটিশ উপনিবেশিক সামন্তবাদী প্রথা তিনি তাঁর আদালতে ভেঙ্গে দিলেন।”
আরও পড়ুন: ১০ হাজার ইয়াবাসহ গ্রেফতার ২
এই পোস্টের ৭৯টি কমেন্টে বিচারকের এই যুগান্তকারী লিখাকে প্রায় সকলেই সেলুট জানিয়েছেন। জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্যরাও তার এই লেখা'কে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
জেলা আইনজীবি সমিতির সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট কাজী নজরুল ইসলাম অসীম বলেন, বিচারকের-এমন মহতি কাজ আমার ভালো লেগেছে আমি তাকে সাধুবাদ জানাই।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. জাকারিয়া মোল্লা বলেন, বিচারক যে... কথাগুলো আদালতে লিখেছেন কথাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিচারকের এই মহতি কথাগুলোতে আমি সন্তুষ্টি প্রকাশ করছি।
আরও পড়ুন: ক্ষমতা বিএনপির মামা বাড়ির আবদার না
মুন্সীগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক জামাল উদ্দিন বলেন, আমার দৃষ্টিকোন থেকে মনে হয়েছে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয়, যেই উক্তিটি এখানে লিখেছেন সেটা একটা বিচার প্রার্থীর জন্য ইতিবাচক।
তাছাড়া বিচার প্রার্থীরা সাধারণত... আদালতে প্রঙ্গনে এসে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরে, সেই প্রেক্ষিতে আদালতে উপস্থিত হওয়ার ক্ষেত্রে হাজির হওয়ার ক্ষেত্রে লিখাটি যখন দেখবে তখন তার দৃষ্টিকোন থেকে বিচারকদের প্রতি আদালতের প্রতি সম্মান আরও বৃদ্ধি পাবে।
এতে জনগণ বিচারকদের কাছ থেকে আশানুরূপ সেবা পাবার আশা করবে তদ্রুপ আমরা যারা বিজ্ঞ আদালতকে সহয়তা করে থাকি। আমাদের কাছেও এ শব্দগুলো ইতিবাচক মনে হবে। জনসাধারণের জন্য একটি ভালো লক্ষণ বলে, আমি মনে করি।
আরও পড়ুন: স্ত্রীর প্রেমিকের হাতে প্রবাসী স্বামী খুন
ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. সুমন ভূইয়া বলেন, স্যার ব্যক্তিগত ভাবে পছন্দ করেন না, কেউ হাতজোড় করে দাঁড়ালে, তিনি হাত নামিয়ে দেন।
তিনি বলেন, একজন বিচার প্রার্থী আমার কাছে আসছে বিচারের জন্য সে মাথানত করে রাখবে কেন। আমিতো আল্লাহ পাক বা খোদা...না আদালতের কাছে সে বিচার চাইতে আসছে। তিনি আরও বলেন, এই বিষয়গুলো স্যারের ভালো লাগে...না।
সান নিউজ/এইচএন