জেলা প্রতিনিধি, পাবনা : আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে পাবনা সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী দুবলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের বেতন-ভাতা বন্ধ করে দিয়েছে শিক্ষা অধিদফতর। একই সঙ্গে বড় ধরনের শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে নানা সময়ে সমালোচিত এই শিক্ষককে।
আরও পড়ুন : আ’লীগ ভোটাধিকার সুরক্ষিত করেছে
বুধবার (৯ আগস্ট) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাবনা জেলা শিক্ষা অফিসার রোস্তম আলী হেলালী।
তিনি বলেন, গত এক দেড় বছর আগে সদ্য বিদায়ী পাবনার জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেনের নেতৃত্বে দুবলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একটি তদন্ত করা হয়। সেই তদন্ত রিপোর্টের আলোকে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর তার বেতন বন্ধ করে দিয়েছে। বেতন সহজে চালু হবে না বরং এর চেয়ে বড় কোন শাস্তির আওতায়ও আসতে পারে।
২০২২ সালের ২৬ অক্টোবর দুবলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক পাবনা জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা অফিসার, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বরাবর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মসহ বিভিন্ন অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন।
আরও পড়ুন : নেপালে বন্যা-ভূমিধসে নিহত ৩৮
লিখিত অভিযোগে তারা বলেন, ‘সম্প্রতি তিনি আব্দুল হক নামের এক সিনিয়র শিক্ষককে মারধর ও লাঞ্ছিত করেন। ২০০৭ সালে জুনিয়র শিক্ষক আনোয়ার হোসেন দলীয় প্রভাব খাঁটিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শওকত আলী স্যারকে কিডন্যাপ করে মেরে ভয় দেখিয়ে সে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হন। ৭ বছর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক থাকা অবস্থায় সে বিএড সার্টিফিকেট ক্রয় করেন এবং কম্পিউটার শিক্ষক থেকে জৈষ্ঠতা লঙ্ঘন করে প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ নেন। প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ নিয়ে পূর্বের সহকারী শিক্ষক পদের ৩-৪ বছরের বেতন গ্রহণ করেন। তার বিএড সার্টিফিকেটও অবৈধ। ২০১৯, ২০২০, ২০২১ সালের বিদ্যালয়ের প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার কোনও হদিস নেই। স্কুলের জায়গায় নিজের গোয়াল ঘর তৈরি করে গরুর ব্যবসা করতেন- যা ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। বিদ্যালয়ের মার্কেট তৈরিতে বিভিন্ন দ্রব্য ক্রয়, রড সিমেন্ট, বালি নিজে সরবরাহ করেন এবং সেখান থেকে প্রায় ১ কোটি টাকা এবং মার্কেটের রুম অবিকৃত দেখে নিজে ব্যবহার ও ভাড়া খাটিয়ে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়াও মার্কেটের রুম বিক্রি, পুকুর ভরাট, শতবর্ষীয় মেলার লক্ষ লক্ষ টাকা, স্কুলের রাস্তার নামে, করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের ৫০ লাখ টাকা, গেট তৈরির ২০ লক্ষ টাকা, ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে আদায়কৃত লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এমনকি স্কুলের ভবন নির্মাণের বেচে থাকা ১৫ থেকে ২০ হাজার ইট নিয়ে নিজের বাড়ি তৈরিতে ব্যবহার করেছেন। বিদ্যালয়ের মার্কেটে নিজের নামে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংক শাখা পরিচালনা করে আসছেন। ১৬-১৭-১৮ অর্থ বছরের শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা দেওয়ার কথা বলে বেতন লেজারে সই করিয়ে নিলেও তাদের কোন টাকা পয়সা না দিয়ে জোরপূর্বক সাক্ষর করে নেন। ’
সর্বশেষ গত ঈদুল আজহায় নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ করায় বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক ও কর্মচারীদের কোরবানির ঈদ বোনাস বন্ধ করে দেয়। পরে বেতনও বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে। পরে ডিসি অফিসের সহযোগিতায় শিক্ষকদের ঈদ বোনাস ও বেতনে সাক্ষর করেন বিদ্যালয়ের সভাপতি আলহাজ্ব মোশাররফ হোসেন।
এব্যাপারে দুবলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বিষয়টির জন্য আজকে বিদ্যালয়ে যাচ্ছি। দেখা যাক কিছু একটা করা যায় কি-না।’
আরও পড়ুন : সিঙ্গাপুর গেলেন সেতুমন্ত্রী
পাবনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোছা. আফরোজা আক্তার বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে এখনো অফিসিয়ালি চিঠি আমরা পাইনি। অধিদপ্তর থেকে চিঠি পাঠালে আমরা আপনাদের জানাতে পারব।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ তো প্রমাণই হয়নি তাহলে দুর্নীতির দায়ে বেতন-ভাতা বন্ধ হলো কি করে? বেতন শিটে নাম নাও থাকতে পারে, কি কারণে নেই এবিষয়ে আমার কাছে কোনো ব্যাখ্যা নেই।’
সান নিউজ/এমআর