ফেনী প্রতিনিধি: ফেনীর মুহুরী ও কহুয়া নদীতে তিনটি স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। পানি ঢুকছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজার ও লোকালয়ে। অতি বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে প্রতিবছর ফেনীর সীমান্তবর্তী উপজেলা ফুলগাজী ও পরশুরামে নদী ভাঙ্গনের শিকার হন স্থানীয় জনগণ।
আরও পড়ুন: ১৫০০ গ্রাম গাঁজাসহ মানিকগঞ্জে আটক ১
টেকসই বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় নষ্ট হয় ফসলের মাঠ, মাছের ঘের, রাস্তাঘাট পুল-কালভার্ট ও বসত ঘর। এতে মানুষ অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টের শিকার হন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, টেকসই বাঁধ নির্মাণের জন্য শিগগিরই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।
বিগত ৩/৪ দিনের দিনের টানা বৃষ্টি আর ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফেনীর মুহুরী নদীর পানি পরশুরাম পয়েন্টে বিপদসীমার ১১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে ফুলগাজী সদরের উত্তর বরইয়া এবং উত্তর দৌলতপুর এবং পশুরাম উপজেলার অলকা এলাকায় বেড়িবাঁধে ভেঙে লোকালয়ে ঢুকছে পানি।
আরও পড়ুন: ফেনীতে ছাতা মাথায় দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাস!
ফুলগাজীর সদর ইউনিয়নের উত্তর বরইয়া আর উত্তর দৌলতপুর গ্রামের বেড়িবাঁধের দুটি স্থানে ভাঙ্গনে ৮ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
অপরদিকে পরশুরাম উপজেলার অলকা নামক একটি স্থানে ভাঙ্গনে একটি গ্রামসহ মোট সাতটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে গ্রামের ১৫ হাজার মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছেন। এতে ঝুঁকিতে রয়েছে ১২২ কিলোমিটারের বাঁধের বেশ কয়েকটি স্থান। বন্যার কবলে পড়ার আতঙ্কে আছে বাঁধ পার্শ্ববর্তী এলাকার শতশত পরিবারের হাজার হাজার মানুষ।
স্থানীয়রা জানান, সোমবার ভোরে বাঁধের অংশে ভাঙ্গন দেখা দিলে গাছ কেটে, মাটি দিয়ে ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা করেও রুখতে পারেনি তারা। পানির প্রচন্ড বেগে বাঁধের আশপাশের উত্তর বরইয়া, বণিক পাড়া, বিজয় পুর, কিসমত বিজয়পুর, বসন্তপুর, জগতপুর পরশুরাম উপজেলার অলকা নামক একটি গ্রামসহ সাতটি গ্রামে বানের পানি ঢুকে পড়ে। তলিয়ে গেছে ৭০ হেক্টর রোপা আমান, তিন হেক্টর আমন বীজতলা।
আরও পড়ুন: সরকারী কর্মচারীসহ ৬ জনের নামে মামলা
স্থানীয় বাসিন্দা বিজয় কুমার বলেন, বৃষ্টিপাত ও নদীর পানি বাড়ার ফলে জেলার সীমান্তবর্তী এ দুই উপজেলায় নদীর ভাঙন দেখা দিলে মানুষের দুর্ভোগ লাগামহীন হয় প্রতি বছর।
প্রশাসন এই সময় আমাদের জন্য সামান্য ত্রাণ সহায়তা নিয়ে আসেন । এতে আমাদের কোন উপকারই হয় না, আমরা চাই যে এই মুহুরী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ স্থায়ীভাবে মেরামত হোক।
বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন যাবত নদীর বাঁধ ভাঙ্গন আমাদের চির দুঃখ পরিণত হয়েছে। আমাদেরকে সাময়িক ত্রাণ এবং সান্তনা না দিয়ে স্থায়ীবাদ নির্মাণের ব্যবস্থা করুন।
আরও পড়ুন: দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশি নিহত
পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদ শাহরিয়ার বলেন, টেকসই বাঁধ মেরামতের জন্য ৭৩১ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ শুরু হবে নিরীক্ষণ শেষে। নদীতে পানির প্রবাহ কিছুটা কমে আসলে ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ মেরামত করা হবে বলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
ফুলগাজী উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি অফিসার কে এইচ এম মনজুরুল ইসলাম বলেন, এ বন্যায় ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় প্রায় ১২০ সেক্টর রোপা আমান এখন পানির নিচে রয়েছে। প্রায় ১০ হেক্টর বীজতলা পানির নিচে রয়েছে।
আরও পড়ুন: ওমানে নির্যাতনের শিকার গৌরীপুরের দুই যুবক
এছাড়া মানুষের সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি থাকায় এখনো ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ হয় নাই, পানি কমলে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হবে।
ফেনী জেলা প্রশাসক মোছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, আমি সরেজমিনে প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিকভাবে তাদের জন্য ২ লাখ টাকা ও সাড়ে তিন মেট্রিক টন চাউল বরাদ্দ দিয়েছি।
পানি বন্দী মানুষের জন্য শুকনো খাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভিন্ন বিভাগের সাথে সমন্বয় করে এই বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সান নিউজ/এইচএন