জেলা প্রতিনিধি: নওগাঁর পোরশা উপজেলায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে গ্রাম আদালত বসিয়ে নির্যাতনে এক যুবককে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছে।
আরও পড়ুন: মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ৪৯
শুক্রবার (৪ আগস্ট) উপজেলার নিতপুর ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতের বিচার কক্ষে সকালে এ ঘটনা ঘটে। এ দিন বিকেলে ঐ যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত লাফারু ইসলাম (৩২) একই ইউনিয়নের মাস্টারপাড়া গ্রামের কুরবান আলীর ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) ভাঙারি দোকান থেকে চুরি যাওয়া সাইকেল উদ্ধারের সূত্র ধরে আশিক নামের যুবককে আটক করে স্থানীয়রা।
চুরির ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ উঠে লাফারু ইসলামের বিরুদ্ধেও। ঘটনাটিতে সাইকেলের মালিক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে লাফারু ও আশিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
আরও পড়ুন: মুম্বাইয়ে বিচারপতির পদত্যাগ ঘোষণা
শুক্রবার ঐ ২ যুবককে পুলিশের সাহায্যে আটক করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হকের হেফাজতে ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতের বিচারকক্ষে নেওয়া হয়। দুপুরে ঐ কক্ষে লাফারুর মরদেহ জানালার গ্রিলের সাথে ঝুলতে দেখা যায়।
বিকেলে ঘটনাস্থলে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ঐ টিমের আওতাধীন সহকারী পুলিশ সুপার পরিদর্শনে গেলে তাদের উপস্থিতিতে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
আরও পড়ুন: খুনিরা বঙ্গবন্ধুর ছায়াকেও ভয় পেত
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ইউপি সদস্য জানান, ছুটির দিনে কখনো গ্রাম আদালত বসে না। কিন্ত লাফারুকে ছুটির দিনেই আটক করে, যা বৈধ ছিলো না।
তিনি আরও জানান, মরদেহে আঘাতের চিহ্ন দেখতে চাইলে দেখতে দেওয়া হয়নি। আদালত কক্ষে নিশ্চয়ই তার সাথে খারাপ কিছু করেছে। মরদেহটি স্বাভাবিক মনে হয়নি। তদন্ত করলেই আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে।
আরও পড়ুন: জুতায় মিললো ৫টি সোনার বার
৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আকবর হোসেন জানান, লাফারু ও অভিযোগকারী ২ জন আমার ওয়ার্ডের বাসিন্দা। কিন্তু লাফারুকে আটকের আগে আমাকে বিষয়টি জানানো হয়নি। ২ গ্রাম পুলিশের সাহায্যে লাফারুসহ অন্যজনকে আটক করে হেফাজতে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়।
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে এনামুল হকের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: ভারতে সড়ক ধসে ৩ জনের মৃত্যু
পোরশা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহুরুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মরদেহটি উদ্ধার করে থানায় নেওয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২ গ্রাম পুলিশকে আটক করে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
শনিবার (৫ আগস্ট) সকালে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
আরও পড়ুন: পিকআপে ট্রেনের ধাক্কা, নিহত ৮
এ বিষয়ে নওগাঁর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (মান্দা সার্কেল) মতিয়ার রহমান জানান, ২ গ্রাম পুলিশকে স্থানীয়দের মৌখিক অভিযোগের সূত্র ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। নিহতের পরিবার থেকে লিখিত অভিযোগ জানালে এ মামলার এজাহার করা হবে।
অভিযোগ না পেলে পুলিশ কী কোনো পদক্ষেপই নেবে না?- এমন প্রশ্নে সহকারী পুলিশ সুপার জানান, পুলিশ বাদী হয়ে প্রাথমিক অবস্থায় মামলা করার কোন সুযোগ নেই। তারা (নিহতের পরিবার) শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অভিযোগ করলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনার করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: জম্মু-কাশ্মিরে হামলা, ৩ সেনা নিহত
নওগাঁ জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আলীম উল্লাহ খান জানান, ঘটনাটি জানার পর সরেজমিনে সেখানে গিয়ে সুরতহাল করে মরদেহের শরীরে কিছু আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। সকল বিষয় উল্লেখ করে ময়নাতদন্তের জন্য রেফার করা হয়।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও জানান, শুক্রবার গ্রাম আদালত বসার কথা না থাকলেও চেয়ারম্যান নিজে থেকেই অফিস খুলেছেন।
শুক্রবার আদালত খোলার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। তদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর দরকার পড়লে জেলা প্রশাসন এ বিষয়টি আলাদাভাবে তদন্ত করে দেখবে।
সান নিউজ/এএ/এনজে