আদিল হোসেন তপু, ভোলা থেকে:
মেঘনা নদীর অব্যাহত ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ভোলা জেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরা। মেঘনার তীব্র স্রোতে চর্তুদিক থেকে ভেঙে কেবলই ছোট হয়ে আসছে পর্যটনে অপার সম্ভাবনাময় জনপদটি।
গত কয়েক বছরে মেঘনার অব্যাহত ভাঙনে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পর্যটকদের আকর্ষণীয় স্থান, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, মসজিদ, মন্দিরসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হাজার হাজার একর ফসলি জমি, ঘর-বাড়ি হারিয়ে মানুষ এখন নিঃস্ব। সহায়-সম্বল ভিটে-মাটি হারিয়ে বেড়ির ঢালে জেগে ওঠা কলাতলী চর ও কাজীর চরে আশ্রয় নিয়েছেন অসংখ্য মানুষ।
জনপ্রতিনিধি ও ভাঙন কবলিত এলাকাগুলোর মানুষের আশঙ্কা, এভাবে ভাঙতে থাকলে কয়েক বছরের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে মূল ভুখণ্ড থেকে হারিয়ে যাবে মনপুরার মানচিত্র। তাদের মতে, সরকারের নীতিনির্ধারকরা যদি সঠিক পরিকল্পনা করে স্থায়ী ব্লক ও ডাম্পিং বা কলাতলী-মনপুরা বাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা করেন, তাহলে নদীভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দ্বীপটি। প্রতি বছর রিং বেড়িবাঁধ ও জিও ব্যাগ ফেলে সরকারের কোটি কোটি টাকার যে অপচয় হচ্ছে, সেটিও রোধ হবে।
সরেজমিনে জানা গেছে, উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়ন এখন তীব্র ভাঙনের কবলে। ইউনিয়নের চরঞ্জান ও দাসেরহাটের প্রায় সম্পূর্ণটা, নাইবেরহাট ও সোনারচর গ্রাম এবং মনপুরা ফিশারিজ লিমিটেডের অর্ধাংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। মেঘনার পেটে ঢুকতে থাকায় হুমকিতে রয়েছে হাজীরহাটের আ. লতিফ ভুইয়ার বাড়ি সংলগ্ন পশ্চিমপাশের পাকা বেড়িবাঁধ ও দাসেরহাটের কালিরটেক সংলগ্ন চৌধুরী বাজারের পূর্বপাশের পাকা বেড়িবাঁধ। সোনারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও যেকোনো সময় নদীগর্ভে বিলীনের আশঙ্কা রয়েছে।
মনপুরা ইউনিয়নের কাউয়ারটেক, সীতাকুণ্ড ও ঈশ্বরগঞ্জ মৌজার পূর্বাংশের অধিকাংশ গ্রামও বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ইউনিয়নের পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত স্থান নদীগর্ভে চলে গেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়েছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ ভিটে-মাটি হারিয়ে পথে বসছেন।
একইভাবে উত্তর সাকুচিয়া ও দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নও মেঘনার তীব্র ভাঙনে কেবলই ছোট হয়ে যাচ্ছে। দক্ষিণ সাকুচিয়ার হেলাল তালুকদার বাড়ি সংলগ্ন পূর্ব ও দক্ষিণ পাশের পাকা বেড়িবাঁধের অধিকাংশ ভেঙে গেছে। যেকোনো মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে ভেতরে জোয়ারের পানি ঢুকে পানিবন্দি হয়ে পড়বে ইউনিয়নটি। উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের মাস্টাররহাট বাজারের পশ্চিমপাশ এবং তালতলা সূর্যমুখী খাল সংলগ্ন বেড়িবাঁধও হুমকির মুখে।
এলাকার লোকজনের দাবি, মনপুরা ইউনিয়নের উত্তর মাথা দিয়ে স্থায়ী ব্লক ফেলায় ভাঙন রোধ হয়েছে। সরকার যদি ভাঙন কবলিত সবগুলো স্থানে স্থায়ী ব্লকের ব্যবস্থা করে, তাহলে নদীভাঙনের হাত থেকে মনপুরাকে রক্ষা করা সম্ভব। প্রতি বছর রিং বেড়িবাঁধ ও জিও ব্যাগ ফেলে সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ-অপচয় না করে তাই স্থায়ী ব্লকের ব্যবস্থা করা হোক। বিকল্পভাবে যদি কলাতলী-মনপুরা বাঁধ নির্মাণ করা হয়, তাহলেও স্থায়ীভাবে মেঘনার ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে। হাজার হাজার একর ফসলি জমি জেগে উঠবে। পুনর্বাসন হবে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেলিনা আক্তার চৌধুরী বলেন, ‘মেঘনার ভাঙন রোধে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এমপি শহর রক্ষাবাঁধ প্রকল্প তৈরি করে ব্লক ও ডাম্পিংয়ের ব্যবস্থা করেছেন। আমরাও কাজ করে যাচ্ছি। আরও বিভিন্ন প্রকল্প তৈরির কাজ চলছে। আল্লাহর রহমতে মনপুরার উত্তর মাথায় ভাঙন রোধ হয়েছে, এসব ব্যবস্থায় সম্পূর্ণটাই হবে।’
সান নিউজ/ এআর