নিজস্ব প্রতিবেদক:
বরিশাল: পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামিম বলেছেন, বর্ষা মৌসুমে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন পানি উন্নয়ন বোর্ড রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছে। ড্রেজিং করে নদীর প্রস্থ কমিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। নদী ও খালে নিয়মিত খনন কাজ চালানো হচ্ছে। এসব কাজ সম্পন্ন হলে এখনকার মতো বন্যা হবে না।
শনিবার (২২ আগস্ট) বিকেলে বরিশাল নগরীর ত্রিশ গোডাউন এলাকা সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদী ও বেড়িবাঁধ পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ভাটির দেশের মানুষ। আমাদের উজানে ভারত, নেপাল, ভূটান, চীন অবস্থিত। জলবায়ূ পরিবর্তনে আবহাওয়ারও পরিবর্তন হচ্ছে, বৃষ্টিপাতের পরিবর্তন হচ্ছে, শুষ্ক মৌসুমে বৃষ্টি, নদীতীরে ভাঙন হচ্ছে। বৃষ্টির পানি উজানের দেশ থেকে ভাটিতে এসে বঙ্গোপসাগরে চলে যায়। আর সেখান থেকে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে দুই বিলিয়ন মেট্রিকটন পলি মাটি আমাদের দেশে আসছে।’
‘পলি আসায় আমাদের নদীর নাব্যতা নষ্ট হয়। ড্রেজিং করলেও ছয়মাসের মধ্যে নদীগুলো আগের অবস্থায় থাকে না, পরিবর্তন হয়ে যায়। ফলে বর্ষায় প্রচুর বৃষ্টি হলে পানিগুলো দুকূল ছাপিয়ে গ্রাম প্লাবিত হয়।’
জাহিদ ফারুক শামিম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুসারে ডেল্টা প্লান ২১ এর আঙ্গিকে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বড় বড় নদী যেগুলো ৯-১২ কিলোমিটার প্রস্থ, সেগুলোকে আমরা ছোট করে ৫-৭ কিলোমিটারের ভেতরে নিয়ে আসবো। তারপর ড্রেজিং করে তার মাটি দিয়ে দুইপারের জমি রিক্লেম করবো। সেখানে আমরা ফসল উৎপাদন করবো এবং কিছু কিছু জায়গাতে ইন্ডাষ্ট্রিয়াল প্লট দেয়া হবে। যেখানে শিল্প-কারখানা হবে, এলাকার লোকজনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। কিন্তু সে সমস্ত এলাকায় কোনো বসতি গড়তে দেবো না। আর সেখানে নির্ধারিত জায়গায় বাঁধ দিয়ে বনায়নও করা হবে।’
‘প্রধানমন্ত্রী গত ১৬ জুলাই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে নির্দেশনা দিয়েছেন, পুরো বাংলাদেশে ১ কোটি বৃক্ষরোপণ এবং দেশকে বনায়ন করে সবুজ বেষ্টনীতে নিয়ে আসতে হবে। আর ২৫ শতাংশ বনায়ন করতে হবে। সেই নির্দেশনা অনুসারে পানি উন্নয়ন বোর্ড ১০ লাখ বৃক্ষরোপণ করছে। দুটি ফেইজে ২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার এলাকায় বৃক্ষরোপণ করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘ড্রেজিং করে নদীর প্রস্থ যদি কমিয়ে নিয়ে আসতে পারি, তাহলে আমরা সেগুলোতে নিয়মিত খনন কাজ চালিয়ে যেতে পারবো। তাহলে এখনকার মতো বন্যা হবে না। তবে মনে রাখতে হবে, আমরা ভাটির দেশের মানুষ। জলবায়ূ পরিবর্তনে আমাদের ভাটির দেশে এ ধরনের পানি আসতে হবে এবং এটা নিয়েই আমাদের বেঁচে থাকতে হবে।’
‘প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, মানুষজনের দুঃখ-দুর্দশা যতো কমিয়ে আনা যায়। সাতক্ষীরায় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় চারটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। তিনটি এরইমধ্যে পরিকল্পনা কমিশনে চলে গেছে। যার মধ্যে পোল্ডার নম্বর ১৪ এ ৯৩৭ কোটি টাকা, পোল্ডার নম্বর ১৫ এ ৯৯৭ কোটি টাকা এবং পোল্ডার নম্বর ৩১ এ এক হাজার ২০০ কোটি টাকা খরচ হবে। এছাড়া পোল্ডার নম্বর ৫ এ তিন হাজার ৬৭৪ কোটি টাকার প্রকল্পের চিন্তা রয়েছে, সেটিও পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে সাতক্ষীরা এলাকার লোকজনের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব হবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, নদীতীরে সাধারণত যে বাঁধ তৈরি হয় তাতে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়। আর ব্লক দিয়ে করতে ৩০ কোটি টাকা খরচ হয়। সেটিও ছোট নদীতে, বড় নদীতে ব্লক দিয়ে একই আয়তনের বাঁধ নির্মাণে ৭০ কোটি টাকা খরচ হয়। এতে বিশাল অংকের টাকার প্রয়োজন। তারপরও জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ সাবলম্বী ও শক্তিশালী হওয়ায় আমরা এসব কাজ করতে সাহস পাচ্ছি। সামনে এগিয়ে যাচ্ছি।’
‘মনে রাখতে হবে, একটি প্রকল্পের পরিকল্পনা করলেই হবে না, তা বাস্তবায়িত হতে ছয় মাস থেকে এক বছর সময় লাগে। কারণ, এর মাঝে টেকনিক্যালসহ নানা কাজে সময় লাগে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে আমাদের অবস্থানটা সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে। জনগণের দুঃখ-দুর্দশা কমে আসবে।’
তিনি বলেন, ‘ইতিহাস বলে, নদীর এক পার ভাঙে, অন্য পার গড়ে, এটিই নদীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি নদীকে ড্রেজিং করে, শাসন করে, নদীর গতিবিধিটাকে সুন্দর ও সোজা করতে। পলি পড়ায় নদীর ভেতরে ডুবন্ত চর হয়, এটি খালি চোখে দেখা যায় না। তখন পানির স্রোতের ধারা পরিবর্তন হয়ে যেদিকে যাবে, সেদিকের পার ভাঙতে থাকবে।’
জাহিদ ফারুক জানান, বরিশালের চরবাড়িয়ায় নদীতীর রক্ষার কাজ করা হচ্ছে। চরকাউয়ায়ও প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। বরিশাল শহরের জলাবদ্ধতা বন্ধে একটি প্রকল্প তাড়াতাড়ি দিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলীকে বলা হয়েছে। যে পাঁচটি খাল দিয়ে নদীর পানি শহরের ভেতরে প্রবেশ করে, সেগুলোকে পুনঃখনন এবং স্লুইজগেট দেওয়া হবে, যেন পানি শহরের মধ্যে ঢুকতে না পারে। কিন্তু শহর থেকে পানি বের হতে পারে। এছাড়া ফ্লাড ওয়াল উঁচু করে দেওয়া হবে, যেন জোয়ারের সময় পানি এসে শহরে না ঢুকতে পারে। এটি হলে বরিশাল শহর নদীর পানিতে প্লাবিত হবে না। বরিশালবাসীকে আগামী ২/৩ বছরের মধ্যে একটি সুন্দর শহর উপহার দিতে পারবো।’
নগরীর ত্রিশ গোডাউন সংলগ্ন এলাকা পরিদর্শন শেষে পশ্চিম রুপাতলী এলাকায় নদীর ভাঙন পরিদর্শনে যান
পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী। এর আগে বরিশাল নগরীর ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইন্দুরকাঠি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অতিবৃষ্টি ও অতিরিক্ত জোয়ারে সৃষ্ট বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ত্রানসামগ্রী বিতরণ করেন তিনি।
কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামিমের সঙ্গে ছিলেন বরিশালের জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. শফিউদ্দিন, নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক চন্দ্র দাস, বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনিবুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা মাহামুদুল হক খান মামুন, শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন।
সান নিউজ/ এআর