ভোলা প্রতিনিধি: ভোলার মনপুরার বিচ্ছিন্ন কাজীরচরে চাষাবাদ করতে গেলে স্বপন ডাকাতের নের্তৃত্বে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জ্বিত লাঠিয়াল বাহিনী বন্দোবস্তী জমির কৃষকদের উপর হামলা চালায়। হামলায় ৭ জন পুলিশ ও ১৩ জন কৃষকসহ ২০ জন গুরুত্বর আহত হয়।
আরও পড়ুন: ধর্ষণের অভিযোগে যুবক গ্রেফতার
এদের মধ্যে গুরুত্বর আহত পুলিশের এসআই সাগরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভোলায় ও গুরুত্বর আহত কৃষক মোঃ বাহারকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। অপর আহতদের মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে পুলিশ ১২ রাউন্ড ফাঁকা শর্টগানের গুলি ছোড়ে বলে জানায় মনপুরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ জহিরুল ইসলাম।
তবে আহত কৃষকরা অভিযোগ করেন, স্বপন ডাকাতের নের্তৃত্বে মনপুরা বিচ্ছিন্ন চরকলাতলী ও নোয়াখালীর হাতিয়ার লাঠিয়াল বাহিনী হামলায় অংশগ্রহন করে।
এছাড়াও মনপুরা উপজেলার ১ নং মনপুরা ইউনিয়নের সাবেক এক জনপ্রতিনিধির ইন্ধনে এই হামলা হয় বলে অভিযোগ আহত কৃষকদের।
আরও পড়ুন: নাদিম হত্যায় বাবুর সহযোগী গ্রেফতার
বুধবার (১২ জুলাই) দুপুর ১২ টায় মনপুরা উপজেলার ১ নং মনপুরা ইউনিয়নের উত্তরে বিচ্ছিন্ন কাজীরচরে চাষাবাদ করতে গেলে এই হামলার ঘটনা ঘটে। পরে বিকেল ৫ টায় আহত পুলিশ সদস্য ও কৃষকদের উদ্ধার করে মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে।
লাঠিয়াল বাহিনীর হামলায় আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন, মনপুরা থানার ওসি তদন্ত শংকর তালুকদার, এস আই লুৎফুর, এস.আই সাগর, কনস্টেবল জাহাঙ্গীর, কনস্টেবল শাহীন, কনস্টেবল নাইম ও কনস্টেবল সাইদুল।
অপরদিকে হামলায় আহত কৃষকরা হলেন, মোঃ বাহার, মোঃ ফরিদ, জাবেদ ফরাজী, নুর ইসলাম ফরাজী, ছোট মনির ফরাজী, খোকন মেলেটারী, রাসেল ফরাজী, নুরনবী ফরাজী, মতিন ফরাজী, কাসেম, নাসির, মাইনুদ্দিন ও আলাউদ্দিন। এদের সবার বাড়ি উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে।
আহত কৃষক জাবেদ ফরাজী, ফরিদ ও বাহারসহ অন্যান্যরা জানান, বিচ্ছিন্ন কাজীর চরে চাষাবাদ করতে গেলে জমির একর প্রতি ৬ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে স্বপন ডাকাত। তা নাহলে চরে চাষাবাদ করতে দিবেনা বলে হুমকী দেয় ডাকাত স্বপন।
আরও পড়ুন: ভেদরগঞ্জে প্রতিপক্ষের বাড়িতে বোমা হামলা
তখন কাজীরচরে কৃষকদের পক্ষে মাইনুদ্দিন লিখিতভাবে ভোলা জেলা পুলিশ সুপারকে অভিযোগ করে। পরে পুলিশ সুপারের নির্দেশে বুধবার সকালে মনপুরা থানার পুলিশসহ কৃষকরা কাজীরচরে চাষাবাদ করতে গেলে স্বপন ডাকাতের নের্তৃত্বে চরকলাতলী ও হাতিয়ার লাঠিয়াল বাহিনী কৃষক ও পুলিশের উপর হামলায় চালায়। এতে ২০ জন আহত হয়। মনপুরা ইউনিয়নের সাবেক এক জনপ্রতিনিধি প্রত্যক্ষ ইন্ধন দেন হামলা হয় বলে অভিযোগ কৃষকদের।
এই ব্যাপারে মনপুরা উপজেলার ১ নং মনপুরা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আমানত উল্লা আলমগীর জানান, সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিনের প্রত্যক্ষ মদদে স্বপন ডাকাতের নের্তৃত্বে লাঠিয়াল বাহিনী বন্দোবস্তীর জমির কৃষকসহ পুলিশের উপর হামলা চালায়। ওই চেয়ারম্যানের নের্তৃত্বে স্বপন ডাকাত কাজীরচরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। স্বপন ডাকাতের ভয়ে কৃষকরা চরে চাষাবাদ করতে পারছেনা।
কাজীর চরে কৃষক ও বর্তমান মনপুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমানত উল্লা আলমগীরের অভিযোগ অস্বীকার করে সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন হাওলাদার জানান, এই ঘটনার সাথে আমি জড়িত নই। আমাকে রাজনৈতিকভাবে কোনঠাসা করার জন্য আমার প্রতিপক্ষ তার লোকজন দিয়ে মিথ্যা রটাচ্ছে। তিনি পাল্টা অভিযোগ করে জানান,স্বপন ডাকাত সরকারী আবাসনে থাকে। বর্তমান চেয়ারম্যান স্বপন ডাকাতকে আবাসনে ঘর দিয়েছে। বরং স্বপন ডাকাত বর্তমান আলমগীর চেয়ারম্যানের লোক।
আরও পড়ুন: সড়কে প্রাণ গেল ২ বাইক আরোহীর
এই ব্যাপারে মনপুরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ জহিরুল ইসলাম জানান, কাজীরচরে কৃষকদের চরে চাষাবাদ করতে দিচ্ছেনা স্বপন ডাকাত এই রকম একটি লিখিত অভিযোগ ভোলা জেলা পুলিশ সুপারের কাছে করে কৃষক মাইনুদ্দিন।
পরে পুলিশ সুপারের নির্দেশে পুলিশ কৃষকদের নিয়ে ঘটনার তদন্ত করতে বুধবার কাজীরচরে যায়। পরে একপর্যায়ে কাজীরচরে জোরপূর্বক দখলদাররা পুলিশসহ কৃষকদের উপর হামলা চালায়। এতে ওসি তদন্ত সহ পুলিশের সাত সদস্য ও কয়েকজন কৃষক আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে পুলিশ ১২ রাউন্ড শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে।
ওসি আরও জানান, আহত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও পুলিশ এ্যাসল্ট মামলা প্রক্রিয়াধীন।
সান নিউজ/এইচএন