নিজস্ব প্রতিনিধি:
ঈশ্বরদীর রেল জংশন ব্রিটিশ আমলে স্থাপিত হলেও দীর্ঘদিন ধরে ছিলো অবহেলিত। তবে যাত্রী সেবায় রেলের মান উন্নয়নে রেল জংশনটি সংস্কারসহ আধুনিকায়ন হতে যাচ্ছে।
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, নোংরা টয়লেট, যাত্রীদের বসার স্থানের সংকট, পুরনো নড়বড়ে লাইনসহ মাদকাসক্ত, চোর, ছিনতাইকারীসহ নানা ধরনের অসামাজিক কর্মকাণ্ডের নিরাপদ স্থান ছিল স্টেশন এলাকা।
বর্তমান সরকারের রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণ কাজের মালামাল আনা-নেয়ার জন্য নতুন রেললাইন ও স্টেশনসহ আধুনিকায়ন হতে যাচ্ছে ঈশ্বরদী রেল জংশন। ২৬ কিলোমিটার রেল লাইনসহ নতুন স্টেশনও ও ঈশ্বরদী স্টেশনের নানাবিধ উন্নয়ন কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩৫ কোটি টাকা।
১৬টি পুরাতন ও একটি নতুন লাইনের নতুন স্লিপার বসানোসহ নির্মাণ কাজ চলছে ২৬ কিলোমিটার রেল লাইনের। ঈশ্বরদী স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম উচ্চতাকরণ যাত্রী সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে আধুনিক টয়লেট, যাত্রী বসার স্থান, বিশ্রামাগার, রেলওয়ে স্টেশনকে কম্পিউটারাইজডসহ ডিজিটাল ইয়ার্ড, নতুন সিগন্যাল ভবন নির্মাণ ও সিগন্যালকে ডিজিটালাইজড করণের নানামুখী উন্নয়নের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
ঈশ্বরদী থেকে রূপপুর পারমানবিক প্রকল্পের কাছে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ সংলগ্ন নতুন রেল লাইনসহ নির্মাণ হচ্ছে নতুন রেল টার্মিনাল। বর্তমানে এই স্টেশনে একসঙ্গে ১৮টি কোচ প্লাটফর্মে দাঁড়াতে পারবে। আর এর মাধ্যমে যাত্রীরা খুব সহজে ট্রেনে ওঠানামা করতে পারবে। নির্মাণ কাজ চলছে মিটারগেজ, ব্রডগেজ (ডুয়েল) লাইনের সম্প্রসারণের। এই নির্মাণ কাজটি কাজটি যৌথভাবে করছে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ক্যাসেল কনস্ট্রাকশন লিমিটেড ও অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড ইঞ্জিনিয়ার লিমিটেড।
সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৮৬ শতাংশ। তবে দেখা গেছে, চলতি বছরের জুন মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো চলছে নির্মাণ কাজ। এখনো যে কাজ রয়েছে সেটি শেষ করতে আরও ৪-৫ মাস সময় লাগবে। দীর্ঘদিন পরে ঈশ্বরদী রেল জংশনের নির্মাণ কাজের নানা অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের। নির্মাণ কাজের রড, সিমেন্ট, বালু, ইটসহ সব কিছু নিন্মমানের ব্যবহার হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। নির্মাণ কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশে লোক দেখানো কাজ করছে। এই কাজের মান সঠিকভাবে বুঝে নিচ্ছে না। কারা এই নির্মাণ কাজ করছে নেই কোনো নাম ঠিকানার সাইনবোর্ড।
প্রকল্পের অগ্রগতি ও কাজের মান নিয়ে কথা বলেন রূপপুর রেল লাইন প্রকল্পের পরিচালক আসাদুল হক বলেন, "এই প্রকল্পের মান নিয়ে কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ নেই। পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্মাণের সব কিছু বুয়েট থেকে পরীক্ষা করে নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে। পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের মালামাল সহজে আনা-নেওয়ার জন্য পারমানবিক হার্ডিঞ্জ ব্রিজ সংলগ্ন নতুন স্টেশনসহ নতুন রেললাইন স্থাপন করা হচ্ছে। আর একই সঙ্গে ঈশ্বরদী রেল স্টেশনকে আধুনিক করার কাজ চলমান রয়েছে। এই নির্মাণ কাজ শেষ হলে ট্রেন দুর্ঘটনার হার ৯৫ শতাংশ কমে আসবে।"
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের জুন মাসে শুরু করা নির্মাণ কাজ চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু করোনার জন্য পিছিয়ে গেছে কাজের অগ্রগতি। ফলে আগামী বছরের প্রথমদিকে কাজ শেষ হবে বলে তারা আশাবাদী।
এদিকে, সরকারের বিপুল অর্থের এই নির্মাণ কাজ সঠিক ও সুন্দরভাবে করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের নজর দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।