মো. এহছানুল হক, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ): মৃত্যু নিয়ে এক আবেগঘন স্ট্যাটাসের পরই সড়ক দুর্ঘটনায় মো. আল-আমিন (৩০) নামের এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের কৃষক ও কৃষি উপকরণ ব্যবসায়ী মো. আবদুর রশিদের ছেলে।
আরও পড়ুন: আমরা চাই তামিম ফিরে আসুক
তিনি রাজধানীর রামপুরা এলাকায় একটি রেস্তোরাঁয় ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আল আমীনের অকালমৃত্যৃ নিয়ে তাঁর বন্ধুবান্ধব ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিচ্ছেন।
জানা গেছে, স্ট্যাটাস দেওয়ার প্রায় সাত ঘণ্টার মাথায় নরসিংদীর হাঁড়িখোলা রেলক্রসিংয়ে ট্রেন- প্রাইভেটকারের সাথে সংঘর্ষে এ ঘটনা ঘটে । মৃত্যুর পূর্বে নিহত আল-আমিনের ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসটি ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। তার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো- 'কতটুক বাঁচবেন? ৬০ বছর? বড়জোর ৭০ নাহয় ৭৫ বছর! খুব লাকি হলে ৮০+! এক বছরে ৩৬৫ দিন হয়! প্রতিদিনে ৮৬৪০০ সেকেন্ড! খুব বেশি সময় নিয়ে আসেন-নিতো! টিক টক করে করে সেকেন্ড কিন্তু চলে যাচ্ছে! মৃত্যু খুব সন্তর্পণে এগিয়ে আসছে!
টুপ করে হাতে জমে থাকা সব সেকেন্ড শেষ হয়ে আসবে একদিন। আপনার আয়ু যদি কয়েক হাজার বছর হতো তাইলে সময়ের বিলাসিতা আপনাকে মানাতো!
এতো অল্প আয়ুতে মন খারাপ, কষ্ট, পচা ব্যাপার-স্যাপার গুলোতে সময় নষ্টের সুযোগ কই? ভালো বই পড়ুন, টুক করে বেড়িয়ে আসুন চমৎকার কোন জায়গায়! রাত জেগে আকাশ দেখুন!
ভোরের সূর্যোদয় দেখুন! সন্ধ্যায় পাখিরা কিভাবে ঘরে ফেরে সেটা দেখুন! নদীর ঢেউ অনুভব করুন! ভরা পূর্ণিমাতে এবং ভরা অমাবস্যায় তীব্র জোয়ারে ফুসে ওঠা সাগরকে দেখুন! প্রতিদিন সময় করে আধাঘন্টা কোন শিশুর সাথে সময় কাটান -নিষ্পাপ আনন্দের উচ্ছলতা দেখুন!
স্রষ্টাকে স্মরণ করুন, কাউকে প্রাণ ভরে ভালবাসুন, কাউকে ভালবাসার সুযোগ করে দিন।পৃথিবী কতো সুন্দর সেটা অনুভব করুন, বেঁচে থাকাটা কত আনন্দের সেটা উপলব্ধি করুন। বিভিন্ন সুন্দর সুন্দর জায়গায় গিয়ে ঘুরে আসুন।
এই স্ট্যাটাসের পরই তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু করেন।একদিকে তার মৃত্যুতে সারা উপজেলায় শোকের ছায়া নেমে এসছে। জীবদ্দশায় সে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে জড়িত থেকে মানবসেবা মূলক কাজে জড়িত ছিল। যে কারণে তিনি মানবতার ফেরিওয়ালা নামেই বেশি পরিচিত।
ঈশ্বরগঞ্জের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভিত্তিক সংগঠন রাজীবপুর পরিবারের সভাপতি ও এডমিন আলমগীর হোসেন মুঠোফোনে বলেন, আল আমীন ছিলেন আমাদের রাজিবপুর পরিবারের এডমিন। সে অনেক মানবিক কাজ করেছে। তিনি এলাকার তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণা। এ ধরনের মৃত্যু তাঁর বন্ধুবান্ধবসহ আমরা মেনে নিতে পারছেন না। এ ঘটনায় রাজিবপুর পরিবার গভীর শোকাহত।
জনতার ঈশ্বরগঞ্জ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের এডমিন মিজানুর রহমান বলেন, জনতার ঈশ্বরগঞ্জ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মডারেটর হিসেবে আল আমিন নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি ছিলেন উদার মনের মানুষ। এজন্য আমরা তাকে মানবতার ফেরিওয়ালা নাম দিয়েছিলাম। তার মৃত্যুতে জনতার ঈশ্বরগঞ্জ পরিবার গভীর শোকাহত এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
আমার জন্মভূমি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা এস,এম, ইকবাল বলেন, খবর শুনে এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না। সে খুব অমায়িক ছেলে ছিলো। আমাদের সংগঠনের সদস্য হিসেবে অনেক মানবসেবা মূলক কাজ করেছে। তার অকাল মৃত্যুতে আমরা গভীর শোকাহত।
সান নিউজ/এনকে