জেলা প্রতিনিধি : ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢল এবং বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। এতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা তিস্তা ব্যারাজের সব কটি জলকপাট খুলে রেখে সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন।
আরও পড়ুন : ১০ জেলায় ঝড়ের সম্ভাবনা
শুক্রবার (৩০ জুন) সকাল ৬ টায় নীলফামারীতে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ ৫২ মিটার ১৭ সেন্টিমিটার রেকর্ড করা হয়েছে, যা বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ৫২ মিটার ১৫ সেন্টিমিটার) ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
পরে সকাল ৯ টায় পানি কমে বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন : প্রধানমন্ত্রী গোপালগঞ্জ যাচ্ছেন শনিবার
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক নূরুল ইসলাম জানান, কয়েকদিন ধরে তিস্তার পানি বিপৎসীমার নিচে ছিল। গতকাল রাত থেকে পানি বেড়ে সকাল ৬ টায় তা বিপৎসীমা অতিক্রম করে। পরে সকাল ৯ টার দিকে কমে বর্তমানে বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে তিস্তার পানি।
এদিকে পানি বাড়া-কমার কারণে তিস্তা নদীর উজানে ভাঙন বেড়েছে। ভাঙনের ফলে নদীর পেটে চলে গেছে ফসলি জমি ও বসতভিটা।
আরও পড়ুন : জুলাইয়ে ঢাকা-দিল্লি ফ্লাইট শুরু
সরেজমিনে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ছোটখাতা মুন্সিপাড়া এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদীর ডান তীরে জ্যামিতিক হারে ভাঙনের সৃষ্টি হচ্ছে। ভেঙে যাচ্ছে ফসলি জমি, বিলীন হয়ে যাচ্ছে বাপ-দাদার রেখে যাওয়া পৈতৃক ভিটে। সেই সাথে হুমকির মুখে পড়েছে শতাধিক বাড়িঘর, মসজিদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নদী ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে মানুষ।
ঐ এলাকার ওমর আলী জানান, প্রায় সাত বছরে ৩ বার ভাঙতে হয়েছে বসতভিটা। প্রথম ভিটা কেনা হলেও পরে ঘর বাঁধতে হয়েছে অন্যের জমিতে। এবারও নদী ঘরের কাছে চলে এসেছে। ২/১ দিনের মধ্যে এখান থেকে বাড়িঘর ভেঙে চলে যেতে হবে।
আরও পড়ুন : রাজধানীতে শতভাগ বর্জ্য অপসারণ
কিন্তু কোথায় গিয়ে নতুন করে ঘর উঠাবো, সেরকম তো জায়গা পাচ্ছি না। আমার তো জমি কেনার সামর্থ্যও নাই।
একই এলাকার নুর আলম জানান, এবার বর্ষায় উজান থেকে আসা পানিতে যে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে, তাতে প্রায় ১০-১২ একর আবাদি জমি বিলীন হয়ে গেছে। বসতভিটা হারাতে হয়েছে আলী আকবর, ওমর আলী, আব্দুল কাদের ও জামিরন নেছাকে।
আরও পড়ুন : সদরঘাটে লঞ্চে আগুন
খালিশা চাপানী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সহিদুজ্জামান সরকার কেঞ্জুল জানান, আমি অসুস্থ। তাই সরাসরি মাঠে যেতে পারিনি। শুনেছি কয়েকটি বাড়ি নাকি ভেঙেছে আর আবাদি জমি ভেঙেছে। অসুস্থ থাকার কারণে কোথাও যেতে পারছি না।
ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান জানান, কয়েক দিন ধরে তিস্তা নদীর পানি ওঠা-নামা করলেও বাড়িঘরে এখনো পানি ওঠেনি। তবে বিস্তীর্ণ এলাকার নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুন : গাজীপুরে কারখানায় অগ্নিকাণ্ড
তিনি আরও জানান, উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ি, খগাখড়িবাড়ি, খালিশা চাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের ১৫ চরগ্রামের মানুষ যেকোনো সময় পানি বৃদ্ধি পাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা জানান, কয়েক দিন ধরে তিস্তা নদীর পানি বাড়া-কমার মধ্যে রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
আরও পড়ুন : আরও ৪৪ রোগী হাসপাতালে
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ছোটখাতা এলাকার উজানেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। আমরা পরিদর্শন করেছি এবং এ বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। যদি খুব ভাঙন দেখা দেয়, আমরা প্রাথমিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এখন যেহেতু বর্ষাকাল, তিস্তা নদীর পানি সামনে আরও বাড়তে পারে। পানি বাড়বে এরকম পূর্বাভাস রয়েছে। আমরা এ বিষয়ে সতর্ক আছি।
সান নিউজ/এনজে