নিজস্ব প্রতিনিধি:
নীলফামারী: করোনায় স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে নীলফামারীতে চলছে গণপরিবহন। আগের মতোই টিকিট বিক্রি করছেন কাউন্টারের লোকজন। নিয়ম না মেনে সব আসনেই লোক নিলেও ভাড়া নিচ্ছে দ্বিগুণ। স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না বেশিরভাগ যাত্রীও। ফলে করোনার ঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
জেলা শহরের গাছবাড়ি ও কালিতলা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেছে, দূরপাল্লার বাসের যাত্রী আসনের খুবই বাজে অবস্থা। একে অন্যের সঙ্গে কাঁধে ঝুঁলিয়ে, ইঞ্জিন কভারসহ সব আসনগুলোয় যাত্রী বসা। আর করোনা পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে দ্বিগুণ ভাড়া হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও চালক, হেলপারদের রাস্তার যাত্রীদের ডেকে ডেকে গাড়িতে তুলতে দেখা গেছে। যাত্রীরাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে একেবার উদাসীন।
যাত্রীরা বলেন, একটি আসন পর যাত্রী বসানোর কথা। কিন্ত পরিবহনের সুপারভাইজার ও হেলপার তা মানছেন না। এছাড়াও বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তি বেড়েছে দ্বিগুণ। স্বাস্থ্যবিধি যদি না মানলে তবে আগের ভাড়া নিক।
পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, করোনাকালে যাত্রী না থাকায় ডাবল ভাড়ায় টিকিট বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে মালিকপক্ষ। ৬০ আসনের গাড়িতে ঢাকার যাত্রী মিলে ২৫-৩০ জন। এ দিয়ে পোষায় না। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ৪০০ টাকার টিকিট ৮০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।
যাত্রীদের মুখে মাস্ক নেই কেন– এ প্রশ্নের জবাবে এক বাসের হেল্পার বলেন, ‘আমরা শতবার বলার পরেও যাত্রীরা সচেতন হচ্ছেন না। তবে আগে মাঝে মাঝে প্রশাসনের লোক (পুলিশ) এসে চেক দিতেন, এখন সেটি করেন না। মাস্কের কথা বললে অনেকে জানান, ব্যাগে আছে ভাই। আবার কেউ বলে পকেটে।’
সড়ক পরিবহন সমিতির সভাপতি শাহাজান আলী চৌধুরী বলেন, ‘স্থানীয় পর্যায়ে গ্রাম-গঞ্জের যাত্রীরাই এসব গাড়িতে বেশি চলাফেরা করেন। তারা অতোটা সচেতন নন। তাই তারা গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানতে চান না। আমরা শতভাগ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিবহন চালাতে। কিন্ত যাত্রীরা কিছুতেই মানতে চান না এসব নিয়ম। এজন্য সাধারণ যাত্রীরা আগের ভাড়া নেওয়ার দাবি জানান।’
চট্টগ্রামগামী শ্যামলী পরিবহনের সুপারভাইজার তপন কুমার রায় বলেন, ‘সুযোগ পেলেই জিজ্ঞেস না করেই গাড়িতে উঠে বসেন। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে যাত্রী তোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। তারা আমাদের কথা শোনেন না ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে চান না। আগে রাস্তায় পুলিশ গাড়ি চেক দেওয়ায় কিছুটা নিয়মের মধ্যে ছিল। এখন পুলিশ নেই, তাই যাত্রীরা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না।’
এক কলেজশিক্ষার্থী বলেন, ‘আগে নীলফামারী থেকে রংপুরে যেতাম ৮০ টাকায়। এখন ভাড়া আদায় করছে ১৪০ টাকা। তাও আবার গাদাগাদি করে যেতে হচ্ছে। করোনার সুযোগ নিয়ে বাড়তি ভাড়া হাতিয়ে নিচ্ছে মালিকপক্ষ। যাত্রীরা বাড়তি ভাড়া গুনলেও সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই।’
জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি শাহ নেওয়াজ সানু মোবাইলে জানান, করোনাকালে গাড়ি বন্ধ থাকায় অনেক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হয়েছে। গণপরিবহনে যাত্রী কমে গেছে। সারাদিন ফুয়েল জ্বালিয়ে চালক, সুপারভাইজার ও হেলপারের বেতনের টাকাই ওঠে না। তারপরও যা আয় হয় সেটা রাস্তার টোলের টাকা ও চাঁদা দিতে শেষ। তাই টিকিটপ্রতি কিছু টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে।
সান নিউজ/ এআর