নিজস্ব প্রতিনিধি:
নির্বাচনী হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দেওয়ার দায়ে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য শহিদ ইসলাম পাপুলের সংসদ সদস্যপদ বাতিল চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেছেন স্থানীয় ভোটার আবুল ফয়েজ ভূঁইয়া। রোববার (১৬ আগস্ট) হাইকোর্টে রিট করেছেন বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন তিনি ।
আবুল ফয়েজ ভূঁইয়া জানান, একই গ্রাউন্ডে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করে সাড়া না পেয়ে তিনি এই রিট করেন। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে— হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দেওয়া হলেও এ বিষয়ে তাদের কোনও করণীয় নেই। এক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। আদালতে প্রমাণিত হলে স্পিকার তার পদ শূন্য করতে পারেন।
মানবপাচারের দায়ে বর্তমানে কুয়েতে গ্রেফতার স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য শহিদ ইসলাম পাপুলের দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদকে জানিয়েছিলেন— দুই দেশের নাগরিক হলে পাপুলের সদস্য পদ বাতিল হবে। অবশ্য এর পরপরই কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়— পাপুল তাদের দেশের নাগরিক নন। অবশ্য নাগরিকত্ব ইস্যুতে না হলেও ফৌজদারি অপরাধে কুয়েতের আদালতে দুই বছরের বেশি সাজা হলে বাংলাদেশে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হবে বলে মনে করেন আইনজ্ঞরা।
কুয়েতে গ্রেফতার পাপুলের সংসদ সদস্য পদ থাকা না থাকার বিতর্কের মাঝেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতার ব্যাপারে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগ তুলে তার সদস্যপদ বাতিল চেয়ে গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দেন লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্থায়ী বাসিন্দা আবুল ফয়েজ ভূঁইয়া।
গণমাধ্যমে পাপুলের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে ইসি বরাবর লেখা চিঠিতে বলা হয়— ‘মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম পাপুল তার নির্বাচনী হলফনামায় স্নাতকোত্তর পাশ উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সার্টিফিকেট প্রদান করেন স্নাতক ডিগ্রির। তিনি কখনও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের ডিগ্রি অর্জন করেননি। সেখানে স্নাতক ডিগ্রির যে সার্টিফিকেট জমা দেওয়া হয়েছে, তা ভুয়া এবং বানোয়াট। মিথ্যা ও অসত্য তথ্য প্রদান করে তিনি (পাপুল) একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতাই হারিয়েছেন। কিন্তু কর্তব্যরত রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক প্রার্থিতা সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই না করে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়েছেন এবং তিনি নির্বাচিতও হয়েছেন, যা সম্পূর্ণ বেআইনি ও অবৈধ।’
চিঠিতে হলফনামায় মিথ্যা ও অসত্য তথ্য প্রদান করায় তার সংসদ সদস্যপদ বাতিল করে জাতীয় সংসদের আসন নম্বর-২৭৫ (লক্ষ্মীপুর-২ আসন ) শূন্য ঘোষণা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়।
তবে নির্বাচন কমিশন আবুল ফয়েজের চিঠির বিষয়ে কোনও সাড়া দেয়নি। এ বিষয়ে তাদের কোনও করণীয় নাই বলে জানিয়েছে। সংক্ষুব্ধ ফয়েজ ভূঁইয়া ইসি থেকে সাড়া না পেয়ে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন।
রোববার আদালতে রিট পিটিশন করার বিষয়টি নিশ্চিত করে লক্ষ্মীপুর-২ সংসদীয় এলাকার বাসিন্দা আবুল খায়ের ভূঁইয়া বলেন, ‘মিথ্যা হলফনামা দেওয়ায় শহিদ ইসলাম পাপুলের সংসদ সদস্যপদ বাতিল চেয়ে নির্বাচন কমিশনে আমি লিখিত আবেদন করেছিলাম। কিন্তু কমিশন থেকে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি তারা আমাকে চিঠি দিয়েও কিছু জানায়নি। একই গ্রাউন্ডে ওই এমপির আসন শূন্য ঘোষণা চেয়ে আজ (১৬ আগস্ট) উচ্চ আদালতে রিট করেছি। আশা করছি, আগামী সপ্তাহে রিটের শুনানি হবে। পাপুলের সদস্য পদ বাতিলের জন্য আইনগত লড়াই চালিয়ে যাবেন বলেও জানান তিনি।