নিজস্ব প্রতিবেদক:
যশোর: যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে কিশোরদের নির্মমভাবে মারপিটের পরও সময়মতো যদি হাসপাতালে নেওয়া হতো, তাহলে তিন কিশোরের প্রাণহানির ঘটনা নাও ঘটতে পারতো বলে মনে করছেন ওই ঘটনায় সমাজসেবা অধিদপ্তর গঠিত দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি।
সূত্র জানিয়েছে, তদন্তে নেমে ইতোমধ্যেই এ কমিটি বেশ কিছু তথ্য-উপাত্ত পেয়েছেন। তারা জেনেছেন, নিহত তিন কিশোরকে হাসপাতালে নেওয়া হয় মৃত অবস্থায়। ঘটনার ছয় থেকে সাত ঘণ্টা পর হাসপাতালে নেওয়া হয় আহতদেরও।
অন্যদিকে তিন কিশোর খুনের মামলায় শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের বন্দি আট কিশোরকে গ্রেপ্তার (শ্যোন অ্যারেস্ট) দেখিয়েছে পুলিশ।
রোববার (১৬ আগস্ট) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চাঁচড়া ফাঁড়ির পুলিশ পরিদর্শক রোকিবুজ্জামান বন্দি থাকা আট কিশোরকে গ্রেপ্তার দেখাতে আবেদন জানালে তা মঞ্জুর করেন আদালত।
শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো কিশোররা হলো, চুয়াডাঙ্গার আনিছ, গাইবান্ধার খালিদুর রহমান তুহিন, নাটারের হুমাইদ হোসেন ও মোহাম্মদ আলী, পাবনার ইমরান হোসেন ও মনোয়ার হোসেন, রাজশাহীর পলাশ ওরফে শিমুল ওরফে পলান এবং কুড়িগ্রামের রিফাত আহমেদ রিফাত।
এই ঘটনার সাক্ষী কেন্দ্রটির পাঁচজন কিশোর আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।
গত বৃস্পতিবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে মারপিট করা হলে তিন কিশোর নিহত ও ১৫ জন আহত হয়। এ ঘটনায় পরদিন ১৪ আগস্ট রাতে নিহত কিশোর পারভেজ হাসান রাব্বির বাবা রোকা মিয়া কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলাটি করেন। মামলায় শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষকে আসামি করা হয়।
পুলিশ এ মামলায় কেন্দ্রের গ্রেপ্তারকৃত পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারী বরখাস্তকৃত তত্ত্বাবধায়ক (সহকারী পরিচালক) আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, সহকারী তত্ত্বাবধায়ক মাসুম বিল্লাহ ও ফিজিক্যাল সাইকো সোশ্যাল ইন্সট্রাক্টর শাহানূরকে পাঁচদিন এবং কাউন্সিলর মুশফিকুর রহমান ও ওমর ফারুককে তিনদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক রোকিবুজ্জামান বলেন, শনিবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে আদালত পাঁচজনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করার পর পরই তাদেরকে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়েছে। আজ রোববারও তা চলমান।
সমাজসেবা অধিদপ্তর গঠিত কমিটির প্রধান ঢাকার পরিচালক সৈয়দ নূরুল বাসির বলেন, ‘ইতোমধ্যেই যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত কিশোরদের সঙ্গে কথা বলেছি। তদন্তের কাজে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে যাবো। এরপর ঢাকায় গিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট দেবো।’
একই ঘটনা তদন্তে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আবু লাইছকে প্রধান করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিও তাদের কাজ শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ তমিজুল ইসলাম খান।
গত ১৩ আগস্ট দুপুরে কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ও নির্দেশে আনসার সদস্য ও কয়েকজন কিশোর অন্তত ১৮ জন বন্দি কিশোরকে বেধড়ক মারপিট করেন। মারপিট ও নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের ফেলে রাখা হয়। কয়েকজন অচেতন থাকায় তারা অজ্ঞান হয়ে গেছে মনে করলেও পরে কর্মকর্তারা বুঝতে পারেন, তারা মারা গেছে। এরপর সন্ধ্যার পর এক এক করে তিনজনের মরদেহ হাসপাতালে এনে রাখা হয়। আহত ১৫ জনকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
নিহতরা হলো, বগুড়ার শিবগঞ্জের তালিবপুর পূর্বপাড়ার নান্নু পরমানিকের ছেলে নাঈম হোসেন (১৭), একই জেলার শেরপুর উপজেলার মহিপুর গ্রামের আলহাজ নুরুল ইসলাম নুরুর ছেলে রাসেল ওরফে সুজন (১৮) এবং খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা পশ্চিম সেনপাড়ার রোকা মিয়ার ছেলে পারভেজ হাসান রাব্বি (১৮)।
সান নিউজ/ এআর