কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর): ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে এক সহকারী প্রধান শিক্ষক জাল সনদ দিয়ে প্রধান শিক্ষক হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন: কূটনীতিকদের নিরাপত্তায় আপস করব না
ওই সহকারী প্রধান শিক্ষকের শিক্ষা জীবনে দুটি তৃতীয় বিভাগ প্রাপ্ত হওয়ায় তিনি বিধি মোতাবেক প্রধান শিক্ষক হওয়ার অযোগ্য। এ কারণে তিনি একটি বিতর্কিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুয়া সনদ কিনে এনে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজিং কমিটিকে ম্যানেজ করে প্রধান শিক্ষক হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন।
জানা যায়, বোয়ালমারী উপজেলার চতুল ইউনিয়নের হাসামদিয়ায় অবস্থিত 'হাসামদিয়া ইউনাইটেড উচ্চ বিদ্যালয়'র শূন্য পদে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য আগামী ১৯ মে ফরিদপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ৬ জন ওই পদে আবেদন করেছেন। ওই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আয়ুবুর রহমানও প্রধান শিক্ষক পদে আবেদন করেছেন। তার শিক্ষা জীবনে একাধিক তৃতীয় বিভাগ রয়েছে। তিনি এইচএসসি ও ডিগ্রিতে তৃতীয় বিভাগ পান। শিক্ষা জীবনে একাধিক তৃতীয় বিভাগ হওয়ার কারণে বিধি মোতাবেক তিনি প্রধান শিক্ষক হওয়ার অযোগ্য।
এ কারণে তিনি 'ইউনিভার্সিটি অফ কুমিল্লা' নামক একটি বিতর্কিত বেসরকারি ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থের বিনিময়ে অনার্স এবং মাস্টার্স ডিগ্রীর জাল সনদ কিনে এনে প্রধান শিক্ষক হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। ২০২০ সালে উপজেলাভিত্তিক বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তথ্য বোয়ালমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে জমা দেয়া হয়।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে জমা দেয়া হাসামদিয়া ইউনাইটেড উচ্চ বিদ্যালয়ের তথ্যসম্বলিত সহকারী প্রধান শিক্ষক আয়ুবুর রহমান ২০২০ সালের ২৫ অক্টোবর স্বাক্ষরিত ওই কাগজে নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে তিনি নিজেই এইচএসসি ও ডিগ্রিতে তৃতীয় বিভাগ উল্লেখ করেছেন। এখন বিএ ডিগ্রির কথা গোপন করে একটি বিতর্কিত বেসরকারি ইউনিভার্সিটি কর্তৃক ইস্যুকৃত অনার্স-মাস্টার্স পাসের সনদ দাখিল করেছেন।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় 'ইউনিভার্সিটি অফ কুমিল্লা' থেকে তিনি এই সনদ সংগ্রহ করেছেন। এদিকে চাকরি বিধি অনুযায়ী চাকরিতে থাকাকালীন কেউ কোন ডিগ্রি অর্জন করতে চাইলে তাকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়। আর কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই তিনি বোয়ালমারীতে বসে কুমিল্লার একটি ইউনিভার্সিটি থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি অনার্স-মাস্টার্স কোর্স সম্পন্ন করলেন কখন এবং কীভাবে- এ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সর্বস্তরে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক পদে আবেদনকারী ওই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আয়ুবুর রহমান বলেন, 'যথাযথ নিয়ম মেনেই আমি আবেদন করেছি। আমি ইউনিভার্সিটি অফ কুমিল্লা' থেকে অনার্স-মাস্টার্স করেছি।' এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'চাকরিবিধি মেনে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই আমি চাকরিরত অবস্থায় অনার্স-মাস্টার্স করেছি।' এ সময় এ প্রতিনিধি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি পত্র দেখতে চাইলে তিনি দেখাতে পারেননি।
এ ব্যাপারে প্রার্থী আয়ুবুর রহমান প্রসঙ্গে ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি একেএম আব্দুস ছত্তার বলেন, কাগজপত্র সঠিক না থাকলে কি তিনি আবেদন করেছেন? কাগজপত্র যাদের যাচাই-বাছাই করার কথা তারা যদি যাচাই-বাছাই করে যদি মনে করেন কোন প্রার্থীর কাগজপত্র ঠিক নেই তাহলে তাকে অযোগ্য ঘোষণা করবেন। এ ব্যাপারে আমাদের কিছু করার নেই।
প্রধান শিক্ষক পদে আবেদনকারী ওই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আয়ুবুর রহমানের জাল সনদ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাকে কয়েকজন ফোনে বিষয়টি বলেছে। কিন্তু কেউ কোন লিখিত অভিযোগ করেনি। তবে নিয়োগ পরীক্ষার দিন সনদ যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
সান নিউজ/এনকে