নিজস্ব প্রতিবেদক:
রংপুর: ‘নিরাপরাধ’ কিশোর সন্তানকে কারাগারে আটকে রাখার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন অসহায় বাবা। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষ তার ১৫ বছরের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম কলককে ‘মিথ্যা’ হত্যা মামলার আসামি করেছে বলে অভিযোগ করেন নগরীর বড়বাড়ী দুর্গাপুর মোড়রপাড়া এলাকার মৃত মোজাফ্ফর হোসেনের ছেলে আবেদ আলী।
কিশোর সন্তানের নি:শর্ত মুক্তিসহ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে আইনি সহায়তা পেতে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চেয়েছেন তিনি।
রোববার (১৬ আগস্ট) দুপুরে রংপুর সিটি প্রেসক্লাব হলরুমে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আবেদ আলী বলেন, ‘আমার ছেলে কলক ৯ম শ্রেণির ছাত্র। সে বর্তমানে আমার ব্যবসা দেখাশোনা করে আসছে। গত ১০ আগস্ট তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে জানতে পারি, প্রায় ৫ মাস আগে মিঠাপুকুর থানায় দায়েরকৃত অটোচালক হত্যা ও ছিনতাই মামলার আসামি করে কারাগারে পাঠিয়েছে থানা পুলিশ। আমার সঙ্গে জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধ থাকা প্রতিবেশী একটি মহলের যোগসাজশে কলককে ওই মামলায় ফাঁসিয়েছে পুলিশ।’
সংবাদ সম্মেলনে ছেলেকে ‘মিথ্যা হত্যা মামলায়’ আসামি করে গ্রেপ্তারপূর্বক কারাগারে পাঠানোর ঘটনা বর্ণনা করে আবেগালুপ্ত হয়ে পড়েন অসহায় ওই বাবা। সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক প্রকৃত ঘটনা উম্মোচনে পুলিশ প্রশাসনের প্রতি দাবিও জানান।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের উত্তরপাড়া পাঁঁচঘরিয়া গ্রামের সাইফুল ইসলামের আমবাগানে রংপুর নগরীর কেরানীপাড়ার আলম মিয়ার ছেলে অটোরিকশা চালক হাফিজুর রহমানের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় কলকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার ও অটোরিকশা জব্দের পর গত বুধবার (১২ আগস্ট) জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদটি প্রকাশিত হয়।
সেখানে পুলিশের বরাতে বলা হয়, ‘২০ ফেব্রুয়ারি ফরহাদ, সুলতান ও কলক তিন বন্ধু বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে যান। এক পর্যায়ে তারা অটোরিকশা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে যান। সেখানে হাফিজুরের অটোরিকশায় করে নগরী থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে মিঠাপুকুর খোড়াগাছ ইউনিয়নের নির্জন জায়গায় যায়। পথের মধ্যে তারা হাফিজুরকে অবচেতন করতে গোপনে কোমল পানীয়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাইয়ে দেন। এতে হাফিজুর কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েন। খোড়াগাছ ইউনিয়নের নির্জন রাস্তায় চার্জার অটো রেখে তারা হাফিজুরকে পার্শ্ববর্তী আমবাগানে নিয়ে গলা কেটে হত্যা করেন। পরে অটোটি ছিনতাই করে পালিয়ে যান।’
সংবাদ সম্মেলনে আবেদ আলী বলেন, ‘এই হত্যা ও ছিনতাই ঘটনার সঙ্গে আমার ছেলের কোনো সর্ম্পক নেই। আমার ছেলে ব্যবসার কাজে সারাদিনই আমাকে সহযোগিতা করছিলো।’
তিনি বলেন, ‘আমার মা তার পৈত্রিক সম্পত্তি হিসেবে নানার কাছ থেকে ৩১ শতক জমি পান। মায়ের একমাত্র সন্তান আমি, আর কোনো ভাই-বোন নেই। ফলে মায়ের সেই জমির মালিক হই আমি। প্রতিবেশী একটি মহলের নজর পড়ে ওই জমির ওপরে। জমি-জমা সংক্রান্ত সেই বিরোধ ও পূর্বশক্রতার জেরে তারা আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের ক্ষতি করার ফন্দি চালিয়েছে আসছিল। এই হত্যা মামলায় ফাঁসিয়ে সেই প্রতিহিংসাই চরিতার্থ করেছে তারা। আমার ছেলে তাই ষড়যন্ত্রের শিকার।’
সান নিউজ/ এআর