এম.এ আজিজ রাসেল : উপকূলে ধেয়ে আসছে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা। যার প্রেক্ষিতে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত জারি হয়েছে।
আরও পড়ুন : পাওয়ার টিলার চাপায় শিশুর মৃত্যু
রোববার (১৪ মে) সকাল থেকে বিকেলের দিকে মোখা কক্সবাজারে আঘাত হানবে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান বলেন, অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার। এটি দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি ঝরাবে। বৃষ্টির কারণে জেলার পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিধস হতে পারে। নিম্নাঞ্চলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
আরও পড়ুন : উখিয়ার মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে
এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলায় একযোগে কাজ করছে জেলা প্রশাসন, আরআরআরসি, সেনাবাহিনী, নৌ—বাহিনী, জেলা পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড, কক্সবাজার পৌরসভা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, কক্সবাজার বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ, কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তর, বিসিক, কক্সবাজার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, সিপিপি, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটিসহ বিভিন্ন সরকারি—বেসরকারি দপ্তর।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, “শনিবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত জেলার ৬৩৬টি আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ১ লক্ষ ৮৭ হাজার ৭০৩ জন মানুষ। তারমধ্যে সেন্টমার্টিনের ৪ হাজার ৩০৩ জন বাসিন্দাও রয়েছে।
এছাড়া ৬৮টি হোটেল—মোটেলে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ১০ হাজার মানুষ। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। যার হট নাম্বার: ০১৮৭২৬১৫১৩২।”
আরও পড়ুন : সেন্টমার্টিনে ঝড়ছে বৃষ্টি
কক্সবাজার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। এখানকার কাউন্সিলর আকতার কামাল বলেন, “এই ওয়ার্ডের সমিতি পাড়া, নাজিরারটেক, ফদনার ডেইল, শুটকি মহালসহ আশপাশের বিভিন্ন স্থান থেকে ৯৫ ভাগ মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
শনিবার সকাল থেকে জেলা প্রশাসন, কক্সবাজার পৌরসভা ও হোটেল মোটেল গেস্ট মালিক সমিতির সহায়তায় এসব মানুষকে সরানো হয়।”
হোটেল মোটেল গেস্ট মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার ও সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, “সমিতির আওতাভুক্ত ৬৮টি হোটেলে প্রায় ১০ হাজার মানুষকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তাদের জন্য সকল সুযোগ—সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়। আরও যারা আসছেন সবাইকে সাদরে গ্রহণ করা হচ্ছে। এই দুযোর্গে কাউকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে না। হোটেল মোটেল গেস্ট মালিক সমিতি সবার পাশে আছে।”
আরও পড়ুন : হাতিয়ার সাথে নৌ যোগাযোগ বন্ধ
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, “শহরের আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ৪০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। তাদের জন্য ব্যক্তিগত ও কক্সবাজার পৌরসভার উদ্যোগে খাবার, পানীয় ও চিকিৎসার সুব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া শনিবার সকাল থেকে আমি নিজে দুযোর্গ কবলিত এলাকায় গিয়ে মানুষকে সতর্ক ও নিরাপদে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করি।”
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, “জেলায় ৮ হাজার ৬০০ ও রেড ক্রিসেন্টের ২ হাজার ২০০ স্বেচ্ছাসেবক নিরলসভাবে কাজ করছে। খাবার এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র উপজেলাগুলোতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং পর্যাপ্ত খাবার মজুদ আছে। গঠন করা হয়েছে ৯৬টি মেডিকেল টিম। এছাড়া সদর হাসপাতালে জরুরী ভিত্তিতে ৩টি টিম গঠন করা হয়েছে। পুরোনো রুগীদের ছাড়পত্র দিয়ে ১০০টি বেড প্রস্তুত করা হয়েছে। সাগরে পর্যটকদের সর্তক করতে মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি। অতিবৃষ্টিতেও পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে।
বিশেষ করে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার আশ্রয় শিবিরগুলোয় ১২ লক্ষ রোহিঙ্গা বসবাস করে, সেখানে ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে আসা মানুষের শুকনো খাবার, চিকিৎসা, অ্যাম্বুল্যান্সসহ যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিস ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন : উলিপুরে ১০ জুয়াড়ি গ্রেফতার
এছাড়া দুর্যোগ পরবর্তী ব্যবসায়ীদের নিত্যপণ্যের দাম না বাড়াতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে ধান ও লবণের ক্ষতি এড়াতে যাবতীয় নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।”
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান আরও বলেন, “সেন্টমার্টিন থেকে সব পর্যটক এবং বাইরের মানুষরা সরে গেছে। স্থানীয় প্রায় আট হাজার মানুষকে সেখানকার উঁচু ভবন ও শক্ত অবকাঠামোগুলোতে নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠানো হয়েছে। তাদের জন্য ১৫ দিনের খাবার মজুদ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবিরের মধ্যে নিরাপদ ও পাকা অবকাঠামোর মধ্যে রাখা হচ্ছে। আর ঝড়ে তাদের বাড়িঘরের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করে পর্যাপ্ত ঘর বানানোর উপকরণ মজুদ রাখা হয়েছে। চিকিৎসা ও উদ্ধার কর্মীরাও প্রস্তুত আছে।”
সান নিউজ/এইচএন