দেবু মল্লিক, যশোর থেকে:
যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে বন্দিদের ওপর ‘কর্তৃপক্ষের’ হামলায় তিন কিশোর নিহতের ঘটনায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে পৃথক দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে এক কমিটিতে যার বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, অন্য কমিটিতে খোদ তাকেই সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে বন্দিদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এতে তিন কিশোর নিহত হয়। আহত হয় আরো অন্তত ১৫ জন। ওই ঘটনায় শুক্রবার (১৪ আগস্ট) কোতোয়ালি মডেল থানায় নিহত কিশোর রাব্বির বাবা রোকা মিয়া ‘কর্তৃপক্ষের’ বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। ওই মামলায় কেন্দ্রটির তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল্লাহ আল মাসুদসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। এর আগে মন্ত্রণালয় থেকে তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করতে শুক্রবার দুপুরের পর সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা হলেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) সৈয়দ মোহাম্মদ নুরুল বসির ও উপ-পরিচালক (প্রতিষ্ঠান-২) এস এম মাহমুদুল্লাহ। কমিটির তদন্তের বিষয় হিসেবে পাঁচটি পয়েন্ট উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে। যার ৫ নম্বরটিতে বলা হয়েছে, ‘উপ-পরিচালক, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়, যশোর এর কোনোরূপ ব্যর্থতা ছিল কি-না তাও যাচাই করতে হবে।’
কিন্তু বিকালে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে গঠিত কমিটিতে সেই জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালককে সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তিন সদস্যের এই কমিটির প্রধান করা হয়েছে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে। আর সদস্য করা হয়েছে জেলা পুলিশ সুপারের একজন প্রতিনিধি, যিনি এএসপি পদমর্যাদার নিচে নন। কমিটিকে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
যশোর জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক অসিত কুমার সাহা বলেন, ‘অধিদপ্তর থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে আমি শুনেছি। তবে আমার বিরুদ্ধে যদি কোনো কিছু তদন্তের বিষয় থাকে তাহলে কমিটি সেটা দেখবে। এর বেশি আমি এখন আর কিছু বলতে চাই না।’
গত ৩ আগস্ট যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে কিশোর বন্দিদের দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারি হয়। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে ওই ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়। এরপর বৃহস্পতিবার দুপুরে কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে আনসার সদস্য ও তাদের নির্দেশে কয়েকজন কিশোর অন্তত ১৮ জনকে বেধড়ক মারপিট করেন। মারপিট ও নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের ফেলে রাখা হয়। কয়েকজন অচেতন থাকায় তারা অজ্ঞান হয়ে গেছে মনে করলেও পরে তারা বুঝতে পারেন, এরা মারা গেছে। এরপর সন্ধ্যার পর এক এক করে নিহত তিন কিশোরের মরদেহ হাসপাতালে এনে রাখা হয়।
নিহতরা হলো, বগুড়ার শিবগঞ্জের তালিবপুর পূর্বপাড়ার নান্নু পরমানিকের ছেলে নাঈম হোসেন (১৭), একই জেলার শেরপুর উপজেলার মহিপুর গ্রামের আলহাজ নুরুল ইসলাম নুরুর ছেলে রাসেল ওরফে সুজন (১৮) এবং খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা পশ্চিম সেনপাড়ার রোকা মিয়ার ছেলে পারভেজ হাসান রাব্বি (১৮)।
গ্রেপ্তার কেন্দ্রটির বরখাস্তকৃত তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ ছাড়া অন্য চারজন হলেন- সহকারী তত্ত্বাবধায়ক মাসুম বিল্লাহ, সাইকো সোশ্যাল কাউন্সিলর মুশফিকুর রহমান, ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর শাহানূর ও ওমর ফারুক।
সান নিউজ/ এআর