নিজস্ব প্রতিবেদক:
যশোর: যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে তিন কিশোর নিহতের ঘটনায় অবশেষে মামলা হয়েছে। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে নয়, কর্মকর্তাদের প্রহারেই মারা গেছে তারা
শুক্রবার (১৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলাটি করেছেন নিহত কিশোর পারভেজ হাসান রাব্বীর বাবা রোকা মিয়া। তিনি খুলনার মহেশ্বরপাশা এলাকার বাসিন্দা।
বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে কেন্দ্রটিতে বন্দি তিন কিশোর নিহত হয়। গুরুতর আহত আরো ১৫ জনকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিশোরদের নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করে আসছিল কর্তৃপক্ষ। তবে হাসপাতালে ভর্তি আহত কিশোররা বলেছে, কর্মকর্তা ও আনসার সদস্যদের বেধড়ক মারপিটে এই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও তেমনটিিই প্রমাণ পাওয়ার ইঙ্গিত দেন।
অভিযোগের তীর তখন ঘুরে যায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দিকেই, যারা প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।
নিহতরা হলো, বগুড়ার শিবগঞ্জের তালিবপুর পূর্বপাড়ার নান্নু পরমানিকের ছেলে নাঈম হোসেন (১৭), একই জেলার শেরপুর উপজেলার মহিপুর গ্রামের আলহাজ নুরুল ইসলাম নুরুর ছেলে রাসেল ওরফে সুজন (১৮) এবং খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা পশ্চিম সেনপাড়ার রোকা মিয়ার ছেলে পারভেজ হাসান রাব্বি (১৮)।
পুলিশ সুপার আশরাফ হোসেন ও কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ভুক্তভেগী এক অভিভাবক মামলা করেছেন। মামলায় শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষকে আসামি করা হয়েছে।’
ভোরে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, সহ তত্ত্বাবধায়ক মাসুম বিল্লাহ, প্রবেশন অফিসার মুশফিকুর রহমান, শারীরিক প্রশিক্ষক শাহনূর রহমানসহ কেন্দ্র কর্মরত ১০ জনকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়। তারা বর্তমানে যশোর পুলিশ লাইনসের ব্যারাকে রয়েছেন। আর সকালে তিন কিশোর হত্যার ঘটনায় সমাজসেবা অধিদপ্তর দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির সদস্যরা হলেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) সৈয়দ মো. নুরুল বসির ও উপ-পরিচালক (প্রতিষ্ঠান-২) এস এম মাহমুদুল্লাহ। তিন কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দুপুরে যশোর জেনারেল হাসপাতালের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রট হাফিজুল হকের উপস্থিতিতে ডা. আহম্মেদ তারেক সামস নিহত তিন কিশোরের মরদেহের ময়নাতদন্ত করেন।
যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান জানিয়েছেন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটি ছাড়াও আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠিত হতে যাচ্ছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সেটি গড়বে। ওই কমিটিতে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সংযুক্ত করা হবে। ফলে জেলা প্রশাসনকে আলাদাভাবে তদন্ত কমিটি করা নাও লাগতে পারে।
জেলা প্রশাসক দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, বিষয়টিকে হালকা করে দেখছেন না কেউ। যে বা যারাই দোষী হোক না কেন, তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে বের হয়ে পুলিশের খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি এ কে এম নাহিদুল ইসলাম পুলিশি তদন্তের কথা জানান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখানে আসলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। আজকের ঘটনাটি একপাক্ষিক। প্রায় ছয় ঘণ্টা পর জানা গেছে। স্থানীয় সংবাদকর্মীরাও ঘটনা জেনেছেন সন্ধ্যার পর, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে। আমি নিজেও রাত দশটার পর ঘটনা জেনে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে এসেছি। এখানে কী এবং কেন এমন ঘটনা ঘটেছে তা পুলিশ তদন্ত করবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তদন্ত হবে।’
সান নিউজ/ এআর