নিজস্ব প্রতিবেদক:
বরিশাল: বন্যা মােকাবেলায় ৫০০ খালখনন কর্মসূচির ৭০ শতাংশ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম এমপি।
তিনি বলেছেন, ‘ডেল্টা প্লান-২১ এর আওতায় ৬৪ জেলায় ৫০০ খালখনন প্রকল্প চলছে। এখন ৩০ শতাংশ কাজ বাকি আছে। আরো এক বছরের মধ্যে এ প্রকল্প শেষ হবে। শেষ হলে নতুন করে আরো ৫০০ খাল খনন আমরা করবো। মোট এক হাজার খালখনন যদি আমরা আগামী ২/১ বছরের মধ্যে করতে পারি, তাহলে উজান থেকে পানি নেমে এলে দ্রুত সরে যেতে পারবে এবং ক্ষয়ক্ষতি আরো কমবে।’
শুক্রবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের চরআইচা গ্রামের সড়কে জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী মুজিববর্ষে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দশ লাখ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন তিনি।
পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মূলত উজানের দেশ চীন, নেপাল, ভারতে এবার প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। ওই পানি বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে নেমে যাচ্ছে। সেই প্রভাবে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। খনন কাজ শেষ হলে খালে পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়বে। তখন বন্যায় মানুষের জানমালের আর তেমন ক্ষতি হবে না।’
‘নদীভাঙন এলাকায় আমাদের প্রকৌশলীরা কাজ করে যাচ্ছেন। এবারে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এ বছরে উজানের দেশ থেকে ভাটিতে বৃষ্টির পানি অনেক বেশি নেমে এসেছে। ভাঙনও অনেক হয়েছে। অনেকগুলো প্রকল্প আমাদের হাতে রয়েছে। আমরা নদী ড্রেজিং করবো এবং আগামীতে যেন বন্যার পানি সহনীয় অবস্থায় আসে সেজন্য কাজ করছি।’
বাঁধ ভেঙে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাঁধ নির্মাণ করি, তা ভেঙে যাচ্ছে। এজন্য আমরা সমীক্ষা করাচ্ছি, যেন বাঁধ না ভেঙে যায়, তাতে কি করা যায়। আমরা নদীশাসনের চেষ্টা করছি। আর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা, নদীশাসন করে তাতে রেগুলার ড্রেজিং করতে হবে।’
‘সাধারণ এক কিলোমিটার বাঁধে দেড় কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। আর সেখানে ব্লক দিয়ে যদি স্থায়ী তীর রক্ষা করি তাহলে ছোট নদীতে ৩০ কোটি এবং বড় নদীতে ৩০ থেকে ৫০ কোটি টাকার মধ্যে খরচ হয়। এটা অনেক ব্যয়বহুল, তেমনি ড্রেজিংও ব্যয়বহুল। তবে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আজকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে আগের চেয়ে অনেক সমৃদ্ধশালী। যেজন্য আমরা এখন ব্যয় করতে পারি।’
জাহিদ ফারুক শামীম বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে তিন হাজার কিলোমিটার তীর ব্লক দিয়ে স্থায়ীভাবে রক্ষা করেছি। তারপরও অনেক জায়গায় দেখবেন, ব্লক বসানোর পরও ভেঙে পড়ছে। এর কারণ জলবায়ুর পরিবর্তনে অনেক সময় পানির প্রবাহ অনেক বেশি বেগে আসছে। আবার অনেক সময় দেখা যায়, পানি এক জায়গায় ঘুরপাক খাচ্ছে, স্পয়েলিং হয়ে ধ্বস নামছে। যদিও তারপর পরীক্ষা করে দেখছি আমরা এবং পরীক্ষায় যদি দেখা যায় গর্ত আছে, সেখানে জিও ব্যাগ ফেলে ব্লক ফেলে তা বন্ধ করি। আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে সারাদেশে এক কোটি গাছের চারা রোপণ কর্মসূচি নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় দেশের ২৫ শতাংশ এলাকায় বনায়ন ও সবুজ বেষ্টনী গড়ে তুলতে এই উদ্যোগ সরকারের। তারই অংশ হিসেবে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সারাদেশে ২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে গাছের চারা রোপণ করবে।’
‘পরিবেশগত পরিবর্তন মোকাবেলায় এই বনায়ন খুব প্রয়োজন। আপনারা লক্ষ্য করেছেন অতীতের তুলনায় এখন প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হচ্ছে। দশ বছর আগে যেমন ধরনের গরম লাগতো, এখন কিন্তু তার পরিমাণ অনেক বেড়েছে, অর্থাৎ উষ্ণতা বেড়েছে। এসব কারণে বনায়ন করা খুবই প্রয়োজন। বনায়ন করলে পরিবেশগত পরিবর্তন হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য উষ্ণতা যে বেড়েছে সেটা আমরা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারবো।’
স্থানীয়দের উদ্দেশ্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের প্রতি অনুরোধ, বাড়ির আশপাশে যেখানে খালি জায়গা পাবেন, সেখানেই গাছ লাগাবেন। গাছ ঝড়-বৃষ্টি থেকে বাড়িকে রক্ষা করে। কয়েকমাস আগে আম্পান ঝড়ে সাতক্ষীরা, খুলনা, পটুয়াখালীসহ উপকূলীয় এলাকায় অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমরা পরিদর্শনে গিয়ে দেখেছি, যে সকল নদীর পাড়ে কিংবা বাড়ির পাশে গাছ ছিলো সেখানে ক্ষতি কম হয়েছে। যে নদীর তীরে গাছ ছিল না, সেখানে প্রচুর ক্ষতি হয়েছে, এমনকি অনেক নদীভাঙনও হয়েছে।’
জাহিদ ফারুক বলেন, ‘বাংলাদেশ যে গতিতে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, করোনা ভাইরাসের জন্য তা কিছুটা ব্যহত হয়েছে। কিন্তু আমরা থেমে নেই, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত আছে। কিছুটা থমকে গেলেও আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। করোনা ভাইরাসে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে অনেক প্রাণহানি হয়েছে। হিসেব করলে আমাদের দেশে অনেক কম হয়েছে। তবে সেটা মনে করলে চলবে না যে, আমাদের প্রাণহানি কম হয়েছে। আর ভবিষ্যতে হতে পারে না। করোনা বাংলাদেশে যেকোনো সময় মহামারি রুপ নিতে পারে।’
এরপর প্রতিমন্ত্রী সদর উপজেলার বেলতলা, লামছরি ও চরকাউয়া এলাকায় কীর্তনখোলা নদীর ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় নদীভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন প্রতিমন্ত্রী।
তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহমুদুল ইসলাম, মহাপরিচালক এ এম আমিনুল হক, পানি উন্নয়ন বোর্ড দক্ষিণাঞ্চল জোনের প্রধান প্রকৌশলী হারুন-অর রশিদ, বরিশালের জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান প্রমুখ।
সান নিউজ/ এআর