নিজস্ব প্রতিবেদক:
যশোর: যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে তিন কিশোর হত্যার ঘটনায় সমাজসেবা অধিদপ্তর দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির সদস্যরা হলেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) সৈয়দ মো. নুরুল বসির ও উপ-পরিচালক (প্রতিষ্ঠান-২) এস এম মাহমুদুল্লাহ। তিন কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার (১৪ আগস্ট) সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শেখ রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘যশোরে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) তিন 'বন্দি' কিশোর নিহত ও চারজন আহত হওয়ার সুষ্ঠু তদন্ত করার জন্য দুই সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) সৈয়দ মো. নুরুল বসির ও উপ-পরিচালক (প্রতিষ্ঠান-২) এস এম মাহমুদুল্লাহ। তিন কর্মদিবসের মধ্যে মহাপরিচালকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
শুক্রবার দুপুরে যশোর জেনারেল হাসপাতালের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রট হাফিজুল হকের উপস্থিতিতে ডা. আহম্মেদ তারেক সামস নিহত তিন কিশোরের ময়নাতদন্ত করেছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে কেন্দ্রটিতে বন্দি তিন কিশোর নিহত হয়। আহত হয় আরো ১৭ জন। কিশোরদের নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। তবে হাসপাতালে ভর্তি আহত কিশোররা বলছে, কর্মকর্তা ও আনসার সদস্যদের বেধড়ক মারপিটে এই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও প্রাথমিকভাবে তেমনটিিই প্রমাণ পাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছেন। অভিযোগের তীর এখন সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দিকে, যারা প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।
নিহতরা হলো, বগুড়ার শিবগঞ্জের তালিবপুর পূর্বপাড়ার নান্নু পরমানিকের ছেলে নাঈম হোসেন (১৭), একই জেলার শেরপুর উপজেলার মহিপুর গ্রামের আলহাজ নুরুল ইসলাম নুরুর ছেলে রাসেল ওরফে সুজন (১৮) এবং খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা পশ্চিম সেনপাড়ার রোকা মিয়ার ছেলে পারভেজ হাসান রাব্বি (১৮)।
শুক্রবার দুপুরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) তৌহিদুল ইসলাম ১০ জনকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়ার কথা জানান।
যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান জানিয়েছেন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটি ছাড়াও আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠিত হতে যাচ্ছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সেটি গড়বে। ওই কমিটিতে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সংযুক্ত করা হবে। ফলে জেলা প্রশাসনকে আলাদাভাবে তদন্ত কমিটি করা নাও লাগতে পারে।
জেলা প্রশাসক দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, বিষয়টিকে হালকা করে দেখছেন না কেউ। যে বা যারাই দোষী হোক না কেন, তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে বের হয়ে পুলিশের খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি এ কে এম নাহিদুল ইসলাম পুলিশি তদন্তের কথা জানান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখানে আসলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। আজকের ঘটনাটি একপাক্ষিক। প্রায় ছয় ঘণ্টা পর জানা গেছে। স্থানীয় সংবাদকর্মীরাও ঘটনা জেনেছেন সন্ধ্যার পর, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে। আমি নিজেও রাত দশটার পর ঘটনা জেনে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে এসেছি। এখানে কী এবং কেন এমন ঘটনা ঘটেছে তা পুলিশ তদন্ত করবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তদন্ত হবে।’
ক্ষতিগ্রস্ত কিশোরদের স্বজনেরা মামলা করলে পুলিশ মামলা নেবে বলেও জানান তিনি।
সান নিউজ/ এআর