কামরুজ্জামান স্বাধীন, উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের উলিপুরে একদিকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ অন্যদিকে নিম্মমানের ময়দা দিয়ে তৈরি করা বেকারীর রুটি, বিস্কুট, কেক খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে মানুষ। উপজেলায় বিএসটিআইথর অনুমোদনহীন একাধিক বেকারী ভেজাল খাদ্যসামগ্রী তৈরি করে ব্যবসা চালিয়ে আসলেও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। অভিযোগ উঠেছে, ফুড গ্রেড রং এর পরিবর্তে দেয়া হচ্ছে ডাইং রং। যা মানুষের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। উৎপাদিত খাদ্য সামগ্রী জেলার সর্বত্রই সরবরাহ করা হচ্ছে। এসব খেয়ে অসুস্থ হচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ। অসংখ্য ফ্যাক্টরীতে নেই সাইনবোর্ড।
আরও পড়ুন : ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের প্রধানমন্ত্রীর উপহার
উলিপুর কুড়িগ্রাম সড়কের মিনা বাজারে বিএসটিআই অনুমোদনহীন সিদ্দিকুল ইসলামের রয়েছে বিসমিল্লাহ ব্রেড এন্ড বিস্কুট ফ্যাক্টরী। শিশু শ্রম নিষিদ্ধ হলেও বেকারীর ভিতরে স্বেতস্বেতে পরিবেশে শিশু শ্রমিকরা নিম্মমানের ময়দা দিয়ে বিস্কুট, রুটি, কেক সহ একাধিক প্রকারের খাদ্য সামগ্রী তৈরি করছে। তৈরিকৃত খাদ্যদ্রব্যের সাদা প্লাস্টিকের প্যাকেটেও নেই উৎপাদনের তারিখ ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ এমনকি দামের কোনো তথ্য। এসব খাদ্যের মধ্যে মেশানো হচ্ছে সাল্টু। বিসমিল্লাহ ব্রেড এন্ড বিস্কুট ফ্যাক্টরী মালিক সিদ্দিকুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আপনাকে আমি চিনি না, আইডি কার্ড দেন ভাউচার দেন দুই চার টাকা লাগে দেব। এখন পর্যন্ত এখানে কম করে হলেও দুই শতাধিক সাংবাদিক এসেছে। এ কারণে আমরা সাংবাদিক আতঙ্কে আছি। তাছাড়া প্রশাসনের ব্যাপার তো আছেই। এখনো কাগজ পাতি হয়নি। এসব করার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্যানেটারী ইন্সপেক্টরকে দায়িত্ব দিয়েছি। তিনি কাগজ পাতি করে দেবেন।
একই অবস্থা দেখা গেছে, তবকপুর ইউনিয়নের মধ্য বামনা ছড়া এলাকায় ভাই ভাই স্টার ফুড ফ্যাক্টরীতেও। কথা হয় ফ্যাক্টরির মালিক সিরাজুল ইসলাম ও রিয়াজুল ইসলামের সাথে। তারা বলেন, বিএসটিআইথর অনুমোদন আছে রুটি এবং বিস্কুটের। বাকিগুলোর নেই। তাদের উৎপাদিত খাদ্য সামগ্রীর একটিরও অনুমোদন নেই। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্যানেটারী ইন্সপেক্টর কাগজ করে দেয়ার দায়িত্ব নিয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কাগজ হয়ে আসবে।
আরও পড়ুন : ব্রাজিল-রাশিয়া বৈঠক অনুষ্ঠিত
ধরনীবাড়ী ইউনিয়নের মালতিবাড়ী রেল লাইন সংলগ্ন গড়ে উঠেছে বগুড়া বেকারী। এ বেকারীরও কাগজপত্র নেই। ফ্যাক্টরী চালানো হয় সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত। উৎপাদিত খাদ্য সামগ্রী সকালে গাড়িতে তুলে বিক্রি করার জন্য বেড়িয়ে পড়ে জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে। আর দিনের বেলা প্রায় সময় ফ্যাক্টরীর দরজায় তালা লাগানো থাকে। বগুড়া বেকারির মালিক আশরাফুল ইসলামকে ফ্যাক্টরিতে পাওয়া যায়নি। ফ্যাক্টরীর দায়িত্বে থাকা আশরাফুল ইসলামের ভগ্নিপতি আবু বকর সিদ্দিক জানান, আমাদের কাগজপাতি আছে।
দূর্গাপুর বাজারের বেইলী ব্রীজ সংলগ্ন অসিম কুমারের বৈকালী ব্রেড এন্ড বিস্কুট ফ্যাক্টরী রয়েছে। বিএসটিআইথর অনুমোদন না নিয়েই চালানো হচ্ছে ফ্যাক্টরী। এ সময় ম্যানেজার মাহবুব আলম জানান, কাগজপাতি করার জন্য আবেদন করা হয়েছে। একটু সময় দেন, সব কিছুই হবে। প্রতিটি মুদি ও চায়ের দোকানে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে এসব ঝুঁকিপূর্ণ খাবার। এসব খেয়ে মানুষ ফুড পয়জনিংসহ নানা রোগে ভুগছে।
আরও পড়ুন : দেশজুড়ে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা
এছাড়াও উপজেলায় অন্যান্য বেকারীর মালিকরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ব্রেড এন্ড বিস্কুট ফ্যাক্টরীর লাইসেন্স নিয়ে সর্ব প্রকার মালামাল তৈরি করছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্যানেটারী ইন্সপেক্টর জয়নুল আবেদীন বলেন, আমাকে ম্যানেজ করার বিষয়টি সঠিক নয়। আমি কোন ফ্যাক্টরীর কাগজ করে দেয়ার দায়িত্ব নেইনি।
উলিপুর পৌরসভার স্যানিটরী ইন্সপেক্টর রফিকুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, পৌর শহরে রয়েছে শুধু লক্ষ্মী বেকারী। আমার জানা মতে এ ফ্যাক্টরীর শুধু সেমাই, রুটি ও বিস্কুটের লাইসেন্স আছে। এর বেশি আমার জানা নেই।
আরও পড়ুন : মাইক্রোবাসের ধাক্কায় নিহত ২
বিএসটিআই রংপুর ফিল্ড অফিসার (সিএম) সার্টিফিকেশন মার্কস উইং দেলোয়ার হোসেন জানান, যেসব ব্রেড এন্ড বিস্কুট ফ্যাক্টরির কাগজপাতি নাই তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মেহেরুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি পচা-বাসি ও নিম্মমানের খাবার খেলে পাতলা পায়খানা, আমাশা, জন্ডিস, ফুট পয়জনিং, পাকস্থলীর জটিল রোগ দেখা দিতে পারে। এসব রোগের যথাসময়ে চিকিৎসা করা না হলে পানি শ্যন্যতা দেখা দিয়ে কিডনী বিকল হতে পারে।
আরও পড়ুন : বায়তুল মোকাররমে ঈদের ৫ জামাত
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শোভন রাংসা জানান, এসব ফ্যাক্টরী নাম ঠিকানা দেন। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সান নিউজ/এমআর