নিজস্ব প্রতিনিধি:
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ত্রুটিপূর্ণ স্লুইচগেট নির্মাণের কারণে ইছামতি নদীর পানিতে প্লাবিত হয়েছে যশোরের শার্শা উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন। নদীর ভারতীয় অংশ থেকে পানি এসে শার্শার দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে নষ্ট হচ্ছে। উত্তর শার্শায়ও ঢুকে পড়েছে ভারতের উজানের পানি।
স্থানীয়রা জানান, 'ইছামতির জোয়ারের পানি দক্ষিণ শার্শার রুদ্রপুর ও পুটখালি ইউনিয়নের খলশী খাল দিয়ে প্রবেশ করে শার্শার বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। এই উপজেলায় তিনটি স্লুইচগেট থাকলেও তা রক্ষণাবেক্ষণে নেই কোনও খালাসি, নেই নজরদারি।'
শার্শা উপজেলার পুটখালী, গোগা, উলাশী, বাগআঁচড়া ও কায়বাসহ পাঁচটি ইউনিয়নের প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। চাষিদের অভিযোগ, ইছামতির সঙ্গে সংযুক্ত রুদ্রপুর ও খলশী খালে ক্রটিপূর্ণ স্লুইচগেট নির্মাণের ফলে ভারতের ইছামতি নদীর পানিতে এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ইছামতির পানি যাতে বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে সে জন্য রুদ্রপুর খালে দুটি ও খলশী খালে একটি স্লুইচগেট নির্মাণ করা হয়। স্লুইচগেটগুলো নষ্ট থাকায় তা কোনও কাজে আসছে না। ফলে ওই খাল দুটি দিয়েই ভারতের পানি ঢুকে শার্শার বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।
চাষি আজিজুল ইসলাম জানান, রুদ্রপুর ও খলশী খালে পাম্পসহ স্বয়ংক্রীয় গেট নির্মাণ করলে এর স্থায়ী সমাধান হবে এবং চাষিরা ১২ মাস ঘরে ফসল তুলতে পারবেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌতম কুমার শীল জানান, পাঁচটি ইউনিয়নে চলতি মৌসুমে ২০ হাজার ১৩১ হেক্টর জমিতে ফসল লাগানো হয়েছে। কিন্তু ভারতের উজানের পানিতে দুই হাজার ৯৭০ হেক্টর জমির ধান, পাট ও সবজি তলিয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বেনাপোলের পুটখালী ইউনিয়নে। এখানে ৪০০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। কায়বায় ৩৫০ হেক্টর, গোগায় ২২৫ হেক্টর, বাগআঁচড়ায় ২৫০ হেক্টর ও উলশীতে ১২৫ হেক্টর জমির ফসল ভারতের উজানের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার পুলক কুমার মন্ডল বলেন, ‘স্থানীয় চেয়ারম্যানদের মুখে শুনেছি ভারতের পানি রুদ্রপুর ও খলশী খাল দিয়ে ঢুকে ফসলের ক্ষতি করছে। এসিল্যান্ড ও ইঞ্জিনিয়ারকে সঙ্গে নিয়ে গত মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) পুটখালী ও বারোপোতার বিভিন্ন অঞ্চল পরিদর্শন করেছি। ইছামতি নদীর পানির সমস্যাটা আন্তর্জাতিক ব্যাপার। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড ইচ্ছা করলে এর সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে পারে।’
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার তাওহিদুল ইসলাম জানান, ‘ভারতীয় উজানের পানিতে শার্শা উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। স্লুইচগেটগুলো নষ্ট থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে একটি স্লুইচগেটের মেরামতের কাজ চলছে। আসছে শুষ্ক মৌসুমে নদীগুলো ড্রেজিং এবং স্লুইচগেট তিনটা মেরামত করা হবে। ভবিষ্যতে এ সমস্যা থাকবে না।'