মো. নাজির হোসেন (মুন্সীগঞ্জ) : মুন্সীগঞ্জ সদরের চরাঞ্চল আধারায় সোমবার ভোরে নুরুল ইসলাম হাওলাদার (৪৫) নামে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তবে এ হত্যাকান্ড নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। পাওয়া গেছে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য। ভোর ৪ টার দিকে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। নিহত নুরুল ইসলাম সদরের আধারা ইউনিয়নের মিঝিকান্দি ভাষানচর গ্রামের মৃত সুবেদ আলী হাওলাদারের ছেলে। তার স্ত্রী, ৫ ছেলে ও ১ মেয়ে রয়েছে।
আরও পড়ুন : ধর্ষণের অভিযোগে তরুণ গ্রেফতার
এদিকে, সকালে নিহতের বড় ছেলের দাবী অনুযায়ী সদরের আধারা ইউনিয়নের চরআব্দুল্লাহ গ্রাম সংলগ্ন মেঘনা নদীতে ডাকাতদের হামলায় নিহত হন নুরুল ইসলাম। ছেলের দাবী মতে তার বাবা ছিলেন জেলে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে উঠে আসে ভিন্ন মত। নিহতের বোন দাবী করেন তার ভাই নুরুল ইসলামকে তার ছেলেরাই কুপিয়ে হত্যা করেছে।
তিনি জেলে নন, পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রী। এরপর পুলিশের হেফাজতে ব্যাপক নিহতের বড় ছেলে সুমন হাওলাদার, তার স্ত্রী ও মেঝো ছেলে মোহাম্মদ আলী হাওলদারকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, সকালে রক্তাক্ত অবস্থায় নুরুল ইসলামকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে ছেলে সহ স্বজনরা। এ সময় সেখানকার কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
সকালে খবর পেয়ে সাংবাদিকরা হাসপাতালে ছুটে গেলে নিহতের বড় ছেলে সুমন হাওলাদার দাবী করেন, তার বাবা ও ভাই রবিবার দিবাগত গভীর রাতে চরআব্দুল্লাহ গ্রাম সংলগ্ন মেঘনা নদীতে মাছ শিকারে যান। আজ ভোরে মাছ শিকার শেষে ট্রলারে করে ফিরছিলেন।
আরও পড়ুন : সড়ক দুর্ঘটনায় গ্রাম পুলিশ সদস্যের মৃত্যু
এ সময় ১০-১২ জনের একদল ডাকাত হামলা চালিয়ে মাছ, জাল ও নগদ টাকা লুটে নিতে গেলে বাঁধা দেন তার বাবা। এক পর্যায়ে ডাকাতরা তার বাবা কোপায়। এতে তিনি পানিতে পড়ে যান। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করেন।
এতে সর্বত্র ডাকাতদের হামলায় জেলে নিহতের খবর ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনা ভিন্ন দিকে মোড় নেয়।
নিহতের বাড়িতে গেলে স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানান, নুরুল ইসলামের সঙ্গে তার স্ত্রী তাসলিমা বেগম ও সন্তানদের পারিবারিক কলহ চলে আসছিলো। রবিবার রাতে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া হয় তার। এ সময় তিনি স্ত্রীকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। পরে সন্তান তথা ছেলেরা তাকে মারধর করার জন্য খোঁজাখুঁজি করেন।
আরও পড়ুন : আদালত প্রাঙ্গনে স্কুল শিক্ষককে ছুরিকাঘাত
নিহত নুরুল ইসলামের বোন হামিদা বেগম বলেন, আমার ভাই একজন কাঠমিস্ত্রী। সে কখনো মাছ ধরতেন না। আমার ভাই রাতে বাড়ি ফিরলে ভাবী ও ভাতিজারা হত্যা করে। ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য মাছ ধরার কথা বলা হচ্ছে। আর বলা হচ্ছে ডাকাতরা মেরে ফেলেছে। মূলত: আমার ভাইকে আমার ভাতিজারা তাদের মামাদের সহযোগিতা নিয়ে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করেছে।
সদর থানার (ওসি) মো. তারিকুজ্জামান বলেন, কিভাবে হত্যাকান্ড ঘটেছে-তা এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থান্দার খায়রুল হাসান বলেন, সোমবার ভোরে হত্যার খবর জানতে পারি। হাসপাতালে গিয়ে ওই ব্যক্তির লাশ দেখতে পাই। নিহতের মাথা ও শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। হাসপাতালে তার তিন ছেলে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন : সড়ক দুর্ঘটনায় এসএসসি পরীক্ষার্থীর মৃত্যু
আরও বলেন, ছেলেরা দাবী করেন তার বাবা মেঘনায় মাছ শিকার করতে গেলে ডাকাতদের হামলায় নিহত হয়েছেন। তবে ইতোমধ্যে আমরা অন্য একটি ঘটনাও জানতে পেরেছি। এতে নিহতের ২ ছেলে ও বড় ছেলের বউকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
সান নিউজ/এসআই