জেলা প্রতিনিধি : ঈদকে সামনে রেখে এবার রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথের লঞ্চঘাটে দেখা দিয়েছে যাত্রী সংকট। ঈদের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি থাকলেও আশানুরূপ যাত্রীর দেখা নেই লঞ্চঘাটে। যাত্রী না থাকায় অলস সময় পার করছেন লঞ্চের চালক-শ্রমিকেরা। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে এ অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে বলে জানান ঘাট কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন : তারা উন্নয়ন চোখে দেখে না
রোববার (৯ এপ্রিল) দুপুর ২টার দিকে সরেজমিন দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, পন্টুনের সঙ্গে সারি সারি লঞ্চ বেঁধে রাখা। যাত্রী না থাকায় বেশ নীরবতা ঘাটে। দীর্ঘক্ষণ পরপর স্বল্পসংখ্যক যাত্রী নিয়ে লঞ্চ ছেড়ে যাচ্ছে। মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাট থেকেও হাতে গোনা কয়েকজন যাত্রী নিয়ে ঘাটে ভিড়ছে লঞ্চ। আগে যেখানে ২০ মিনিট পর পর ৮০-১০০ জন যাত্রী নিয়ে লঞ্চগুলো ছেড়ে যেত সেখানে এখন যাত্রী কম থাকায় ৩০-৪০ মিনিট পরপর ২৫-৩০ জন যাত্রী নিয়ে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে লঞ্চগুলো পাটুরিয়া ঘাটে ছেড়ে যাচ্ছে। যাত্রী কম থাকায় লোকসানে পড়েছেন লঞ্চের মালিকেরা।
দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথ। এই নৌপথে মোট ৩৩টি লঞ্চ চলাচল করে। প্রতিদিন দৌলতদিয়া ঘাট থেকে বর্তমানে ১ হাজার থেকে ১৫শ যাত্রী পারাপার হচ্ছে। যেখনে আগে পারাপার হতো ৪ থেকে ৫ হাজর যাত্রী। বিশেষ করে দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ঘাটে সব সময় যাত্রীদের চাপ ছিল। তবে পদ্মা সেতু চালুর পর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটে দূরপাল্লার পরিবহনের পাশাপাশি পণ্যবাহী গাড়ি, ব্যক্তিগত গাড়ি কমেছে। সেই সঙ্গে নদী পার হওয়া যাত্রীদের চাপও কমেছে।
দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাট এলাকায় কথা হয় খোকসা থেকে আসা যাত্রী আলাউদ্দীন শেখের সঙ্গে। আলাপকালে তিনি বলেন, আমি গাজীপুর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। সপ্তাহে একবার হলেও বাড়িতে আসি। সচারাচর লঞ্চে নদী পার হই। পদ্মা সেতু চালু হবার আগে ১০/১৫ মিনিট পরপরই লঞ্চ পাওয়া যেত। কিন্তু সেতু চালু হবার পর থেকে লঞ্চে নদী পারাপারে ভোগান্তি বেড়েছে। যাত্রী না থাকায় লঞ্চ ছাড়তে সময় বেশি লাগে।
আরও পড়ুন : ভারতে গাছচাপায় নিহত ৭
আরেক যাত্রী সুজন মাতুব্বর জানান, পাংশা থেকে লোকাল বাসে দৌলতদিয়া ঘাটে এসেছি। নদী পার হবার জন্য দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটে ৩০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করছি। যাত্রী না থাকায় ঘাট থেকে লঞ্চও ছাড়ছে না।
লঞ্চঘাটে পেয়ারা বিক্রেতা মালেক শেখ বলেন, আগে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ হাজার টাকার পেয়ারা বিক্রি করতাম। কিন্তু এখন যাত্রী কম থাকায় ৪০০/৫০০ টাকার পেয়ারা বিক্রি করা কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এভাবে আমাদের বেঁচে থাকা কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এম ভি তাজমহল লঞ্চের চালক কামরুল হোসেন বলেন, আগে ২০ মিনিট পরপর শতাধিক যাত্রী নিয়ে ঘাট ছেড়ে যেতাম। এখন প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও মাত্র ২৫ থেকে ৩০ জন যাত্রী নিয়ে লঞ্চ ছাড়তে হচ্ছে। এতে করে তেলের খরচও উঠছে না।
আরও পড়ুন : তাপমাত্রা ৪০ ছুঁই ছুঁই
লঞ্চঘাটের টিকিট কাউন্টারে থাকা মোবারক খান বলেন, পদ্মা সেতু চালুর আগে ঘাট দিয়ে প্রতিদিন ৪-৫ হাজারের মতো যাত্রী পারাপার হত। এখন রমজান মাস ও ঘাটে যানবাহনের চাপ কম থাকায় ১২০০-১৫০০ যাত্রী ২৪ ঘণ্টায় পারাপার হচ্ছে। লঞ্চঘাটে কর্মরত মালিক সমিতি ও ঘাট ইজারাদারের লোকজনের প্রতিদিনের হাজিরার টাকা ওঠানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
আরিচা লঞ্চ মালিক সমিতির দৌলতদিয়া ঘাটের তত্ত্বাবধায়ক নূরুল আনোয়ার মিলন বলেন, যাত্রীশূন্য দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া লঞ্চঘাট। লঞ্চের জন্য আগে ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রীরা অপেক্ষা করতেন। আর এখন যাত্রী স্বল্পতায় লঞ্চগুলো দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে অল্প কয়েকজন যাত্রী নিয়ে দৌলতদিয়া ঘাট ছেড়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ফেরিঘাটেও কোনো গাড়ি সিরিয়ালে নেই। ফেরিগুলো ঘাটে গাড়ির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে তারপর ছেড়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন : আল্পস পর্বতমালায় তুষারধসে নিহত ৪
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা কার্যালয়ের ট্রাফিক পরিদর্শক মো. আফতাব হোসেন বলেন, যাত্রী কমে গেলেও জনস্বার্থে লঞ্চ পারাপার স্বাভাবিক আছে। বর্তমানে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ৩৩টি লঞ্চ যাত্রী পারাপারে চলাচল করছে। রমজান মাস উপলক্ষ্যে এবং তীব্র গরম ও রোদে মানুষ কম বের হচ্ছে। ২০ রোজার পর থেকে যাত্রী বাড়তে পারে।
সান নিউজ/এসআই