মো. নাজির হোসেন, (মুন্সীগঞ্জ) : স্থপতি ইমতিয়াজ মোহাম্মদ ভূঁইয়া (৪৭) খুনের ঘটনায় আসামি আলামিন ওরফে আলিফকে (২০) গ্রেফতার করেছে মুন্সীগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তাকে ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ডসহ শনিবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে আদালতে হাজির করা হলে মুন্সীগঞ্জ আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মানিক দাস তাকে ৪ দিনের রিমার মঞ্জুর করেন। সে ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার খানপুর (চোকখানপুর) গ্রামের মো. কাশেম এর ছেলে। এ নিয়ে চাঞ্চল্যকর ইমতিয়াজ হত্যা মামলার সকল আসামিকে গ্রেফতার করল পুলিশ।
আরও পড়ুন : ঈশ্বরগঞ্জে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি
এর আগে মামলার ৪ আসামি আসিফ, আনোয়ার ওরফে এহসান মেঘ ও মুন্না ও আরাফাতকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। তারা সবাই খুনের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
তাদের দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীর সূত্র ধরে গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, চ্যাটিং অ্যাপের মাধ্যমে স্থপতি ইমতিয়াজ মোহাম্মদ ভূঁইয়ার (৪৭) সঙ্গে ওই চক্রের সদস্য আসিফের পরিচয় হয়।
গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সূত্রে জানা যায়, অ্যাপের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ফাঁদে ফেলে বাসায় ডেকে নিতো এই চক্রটি। পরে আপত্তিকর অবস্থার ভিডিও, ছবির রেকর্ড করে ওই ব্যক্তির কাছে টাকা আদায়ের চেষ্টা করতো। ভুক্তভোগীরা সামাজিক অবস্থানের কারণে কখনোই এ বিষয়ে মুখ খুলতেন না। চাঁদাবাজি ও মুক্তিপণের টাকা জমা হতো চক্রের সদস্য আরাফাতের মায়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সূত্রে আরও জানাগেছে, অ্যাপের মাধ্যমেই চক্রের সদস্য আসিফের সঙ্গে স্থপতি ইমতিয়াজের পরিচয় হয়। আসিফ ৭ মার্চ ইমতিয়াজকে মোবাইল ফোনে কলাবাগানের একটি বাসায় ডেকে নেন। সেখানে আগে থেকেই আরাফাত, মুন্না ও মেঘ ছিলেন। তারা সবাই মিলে তাকে ফাঁদে ফেলে টাকার জন্য মারধর করেন। একপর্যায়ে ইমতিয়াজ মারা যান।
আরও পড়ুন : বান্দরবানে গুলিবিদ্ধ ৮ মরদেহ হস্তান্তর
গত ৮ ই মার্চ সন্ধ্যায় মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানের মরিচের সেতু এলাকা থেকে অজ্ঞাত হিসেবে ইমতিয়াজের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধারের পর আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশটি আঞ্জুমান মফিদুলের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। বেওয়ারিশ হিসেবে লাশটি মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা কবরস্থানে দাফন করা হয়। লাশের গায়ে বিভিন্ন ধরনের আঘাতের চিহ্ন থাকায় সিরাজদিখান থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা হয়।
পরে ২২ মার্চ মামলাটি জেলা ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হলে তারা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহযোগিতায় সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেফতার করে।
আসামিদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানার একটি গ্যারেজ থেকে হত্যাকাণ্ডের সময় ব্যবহৃত একটি গাড়ি জব্দ করা হয়।জানাগেছে নিহত ইমতিয়াজ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বাড়ির নকশার কাজ করতেন। তার স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। তিনি ঢাকার তেজগাঁও থানার ডমিসাইল এলাকায় স্ত্রী এক ছেলে দুই মেয়ে ও তার মাকে নিয়ে নিজের ফ্লাটে থাকতেন। ইমতিয়াজের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার পরমতলা এলাকায়।
আরও পড়ুন : ট্রাক্টরচাপায় দুইজনের মৃত্যু
তিনি গত ৭ মার্চ দুপুরে ঢাকার বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরেন নি। এ নিয়ে ৮ মার্চ তার স্ত্রী ফাহমিদা আক্তার কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
৮ মার্চ মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের মরিচা সেতু এলাকার একটি ঝোঁপের ভেতর থেকে ইমতিয়াজের লাশ উদ্ধার হয়। কিন্তু আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে পরিচয় বের করতে না পারায় বেওয়ারিশ হিসেবে লাশটি দাফন করা হয়। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি লাশের ছবি থেকে পরিবার জানতে পারে সিরাজদিখানে যে ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার হয়েছে, তা ইমতিয়াজের। পরে আদালতের অনুমতি নিয়ে মুন্সীগঞ্জ পৌর কবরস্থান থেকে মরদেহ উত্তোলন করে শনাক্ত করেন ইমতিয়াজের স্বজনেরা।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ইমতিয়াজ হত্যা মামলার পলাতক আসামি আলামিন ওরফে আলিফকে ঢাকা হতে গ্রেফতার করা হয়েছে। শনিবার ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ডসহ তাকে মুন্সীগঞ্জ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। নিয়ে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের সকল আসামিকে গ্রেফতার করা হলো।
আরও পড়ুন : নোয়াখালীতে হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতার
মুন্সীগঞ্জ কোর্ট পুলিশের ইনচার্জ মো. জামাল উদ্দিন জানান, চাঞ্চল্যকর ইমতিয়াজ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি আলামিন ওরফে আলিফকে আজ ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ড চেয়ে আদালতে আনা হয়েছে। দুপুরের দিকে তাকে আদালতে হাজির করলে আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মানিক দাস আসামি আলামিনের ৪ দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
সান নিউজ/এসআই