এস এম রেজাউল করিম (ঝালকাঠি) : ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে নানা অনিয়মের কারনে দুর্ভোগে পড়েছে রোগীরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফলতি ও খামখেলীর কারনে স্বাস্থ্য সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন এই জেলার বাসিন্দারা।
আরও পড়ুন: ঝালকাঠিতে বিএনপির অবস্থান কর্মসুচী পালিত
জেলার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল হিসেবে যে সুবিধা পাওয়ার কথা তা না পেয়ে বেসরকারী ক্লিনিক ও প্যাথলজি সেন্টারে যেতে বাধ্য হচ্ছে। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ সরকারী হিসেবের চেয়ে দ্বিগুন-তিন গুন হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে বেসরকারী ক্লিনিক ও প্যাথলজি সেন্টার মালিকদের সাথে যোগসাজসে সরকারী হাসাপাতালের বিভিন্ন পরীক্ষার যন্ত্রাংশ কৌশলে নষ্ট করে পারসেনন্টেজের লোভে রোগীদের বাহিরে পাঠায়।
এদিকে প্রশাসনিক জটিলতায় ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের ঔষধ, প্যাথলজি ও এক্সরে বিভাগের কেমিক্যাল সামগ্রী সরবরাহ বন্ধ থাকায় চরম দূর্ভোগে পরেছে রোগীরা। সরবরাহের টেন্ডার হলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন মিলছে না। তাই ঠিকাদারকে কার্যাদেশ না দেয়ায় এ দূর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানাযায়। এতে এক্সরে ২ মাস ও প্যাথলজি বিভাগের প্রায় ১ মাস ধরে সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানাযায়, প্রতি বছর এই হাসপাতালে ঔষধসহ প্যাথলজি, এক্সরে বিভাগের সার্বিক সামগ্রীর জন্য ৫ কোটি ৪০ লাখ টাকার টেন্ডার আহŸান করা হয়। এর মধ্যে প্রায় ২ কোটি টাকার টেন্ডার আহŸান করে ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বাকি ৬৫% টাকার ঔষধ সামগ্রী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সরবরাহ করা হয়। ঝালকাঠি অংশের টেন্ডার হলেও ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেয়া যাচ্ছেনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রশাসনিক অনুমোদন না পাওয়ায়।
আরও পড়ুন: আবেদন করেও মাথা গোঁজার ঠাঁই জোটেনি
প্যাথলজি বিভাগের ৪০ টি আইটেমের বিপরীতে প্রতিদিন রোগীদের পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হতো। কিন্তু চলতি মাসের ১১ তারিখ থেকেই অধিকাংশ পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর জরুরী ভিত্তিতে ৫/৬ টি পরীক্ষা চালু রাখা গেলেও ২৯ মার্চ থেকে তাও বন্ধ করে দেয়া হয়।
প্যাথলজি বিভাগের কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ রাখায় চরম বিপাকে পরেছে আগত রোগীরা। রহস্যজনক কারণে টেন্ডার হলেও অনুমোদন মিলছেনা কার্যাদেশ দেয়ার। এতে হাসপাতালে আসা রোগীদের হয়রানীর পাশাপাশি অধিক পরিমান অর্থের বিনিময়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হচ্ছে বাহির থেকে।
সকল পরীক্ষা নিরীক্ষা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম বিপাকে পরেছে দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীরা। বিশেষ করে বৃদ্ধ, নারী ও শিশু রোগীরা হাসপাতালের ভিতরে পরীক্ষার কার্যক্রম করাতে না পারায় বেশি হয়রানীর শিকার হচ্ছে। এছাড়াও সরকারি ভাবে এখানে অল্প টাকায় পরীক্ষা করাতে না পারায় রোগীদের বাহির থেকে করাতে দুই তিন গুণ বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে। অনেকের সাধ্যে না কুলানোর কারণে পরীক্ষা নিরীক্ষা করানো সম্ভব হচ্ছেনা।
আরও পড়ুন: খুলনায় পুলিশ-বিএনপির সংঘর্ষ
হাসপাতালে হাটুর এক্সরে পরীক্ষা করাতে আসা গাভারামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের মতিউর রহমান বলেন, জানতাম না এক্সরে ফ্লিমের সংকটে কার্যক্রম বন্ধ। আউটডোরে চিকিৎসক এক্সরে করানোর পরামর্শ দেয়। কিন্তু এখানে না করায় ৪শ টাকার এক্সরে বাহিরের ল্যাব থেকে ৯শ টাকায় করাতে হয়েছে।
এছাড়া কীর্ত্তিপাশাার জয়নব বিবি, ধানসিড়ি ইউনিয়নের আসলাম শেখ বাহির থেকে রক্ত, প্রসাব, এসবিএসএজি এবং এজিপিটি পরীক্ষা করিয়ে ২৯ মার্চ আউটডোরে রিপোর্ট নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শের জন্য অপেক্ষা করছে। তারা জানান, আমাদের এসব পরীক্ষা করাতে বাহিরে ৩ হাজার টাকা নিয়েছে। যা হাসপাতাল থেকে করলে ১৭শ টাকায় পারা যেত।
হাসপাতলের প্যাথলজি বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত জীবন বড়াল বলেন, শুনেছি ঠিকাদার মালামাল সরবরাহ করতে অনুমোদন পাচ্ছেনা। তাই অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা বেশ কিছু দিন বন্ধ। তবে জরূরী পরীক্ষার কাজ চালু রাখলেও ২৯ মার্চ থেকে সব বন্ধ হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: আতাইকুলায় বৃদ্ধাকে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টা!
হাসপাতালের এক্সরে বিভাগের দায়িত্বে থাকা দিলীপ রায় জানান, এ বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ফ্লিম সরবরাহ না থাকায় আমার এখানে কোন কাজ হচ্ছেনা। রোগীরা এসে ফেরৎ গেলেও কিছুই করার নেই।
তথ্যানুসন্ধানে জানাযায়, গত ১১ মার্চ ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের নতুন তত্বাবধায়ক ডা. শামিম আহমেদ যোগদান করেন। তিনি যোগ দানের পর কার্যাদেশ না দেয়ায় এ জটিলতা চরম আকার ধারণ করেছে। এ অবস্থায় হাসপাতালের পুরো প্যাথলজি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের ঔষধ সরবরাহের ঠিকাদার সোহাগ কৃষ্ণ পিপলাই জানান, গত ৬ মাস আগে টেন্ডার হলেও এখনো কার্যাদেশ পাইনি। তাই আমি এ হাসপতালের ওষধসহ অন্য মালামাল ও সামগ্রী সরবরাহ করতে পারছিনা। শুনেছি কার্যাদেশ দেয়ার আগে নাকি প্রশাসনিক অনুমোদন নিতে হয়। তাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অনুমোদনের ফাইল পরে থাকায় আজ পর্যন্ত কোন সুরাহা হয়নি।
আরও পড়ুন: দিনাজপুরে কিশোরীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
এ প্রসঙ্গে তত্বাবধায়ক ডা. শামিম আহমেদ জানান, আমি কার্যাদেশ না দেয়ায় এ সমস্যা সৃষ্টির তথ্য সঠিক নয়। কার্যাদেশ দেয়ার আগে প্রশাসনিক অনুমোদন প্রয়োজন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন না পাওয়ায় কার্যাদেশ দিতে পারছিনা। তবে আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যেই অনুমোদন পেলে কার্যাদেশ দেয়া হবে। প্রতিবছর কার্যাদেশ নিয়ে এরকম জটিলতা সৃষ্টি হয়না এবার হলো কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তত্বাবধায়ক বলেন, এ ব্যপারে আমার কিছু বলার নেই।
ঝালকাঠি সিভিল সার্জন ডা. জহিরুল ইসলাম বলেন, আমি তত্বাবধায়কের দায়িত্বে থাকাকালিন এই টেন্ডারের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে রেখে এসেছি। কিন্তু তারপরেও তত্বাবধায়ক কেন কার্যাদেশ দিচ্ছে না সেটা আমার বোধগম্য নয়।
সান নিউজ/এসআই