মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ : রমজানের আগের দিন এক বাড়ি থেকে কিছু ইফতার সামগ্রী পেয়েছিলাম। মেয়ের নতুন বিয়ে হয়েছে তার শ্বশুর বাড়িতে ইফতার না দিলে মেয়ে ছোট হবে। পরে সেই ইফতার এবং আরও এক হাজার টাকা ঋণ করে ছোট মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে ইফতার সামগ্রী দিয়ে এসেছি।
আরও পড়ুন : দ্বিগুণের বেশি নার্স প্রয়োজন
তারপর থেকে প্রতিটি রোজায় শুধু পানি আর মুড়ি দিয়ে ইফতার করেছি। এখানে ১০ টাকায় ইফতার পেয়ে বাকি রমজান ভালো কাটবে। বাজারের ১০ টাকার একটি ব্যাগের দামে সাত প্রকার ইফতার সামগ্রী পেয়েছেন বলে জানান পূর্বরাখি গ্রামের আয়শা বেগম (৪৫)।
শুধু আয়শা নয় তাঁর মতো একই হাল লুৎফা বেগম, লাবনি আক্তার, রোকসনা বেগম, খোদেজা বেগম সহ অনেকের।
আরও পড়ুন : ভারতে মন্দিরে ছাদ ধস, নিহত বেড়ে ৩৫
এদিকে, রমজান মাসে ঘিরে ইফতার সামগ্রীর দাম যখন ঊর্ধ্বগতি, তখন নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য দ্বিতীয় বছরের মতো ১০ টাকায় ইফতার সামগ্রী দিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'বিক্রমপুর মানব সেবা ফাউন্ডেশন'। এর আগে ১০ টাকায় গরুর মাংস ও ইফতার বাজার দিয়ে দেশব্যাপী আলোচনায় আসে টঙ্গীবাড়ি উপজেলার সংগঠনটি।
শুক্রবার (৩১ মার্চ) দুপুরে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলার কামারখাড়া বাজারে ‘১০ টাকায় ইফতার বাজার’ নামক এক ব্যতিক্রমী কর্মসূচি করে। অস্থায়ী এই বাজার থেকে ১০ টাকার বিনিময়ে এক কেজি তেল, খেজুর, পেঁয়াজ, ছোলা, চিনি, চিড়া ও মুড়িসহ ইফতারে ৭টি পণ্য কিনে নেন নিম্ন আয়ের ২১০টি পরিবার। এমন আয়োজনে অসহায় নিম্ন আয়ের মানুষের মুখে তৃপ্তির হাসি ফোটে।
আরও পড়ুন : মার্কিন নাগরিকদের রাশিয়া ছাড়ার আহ্বান
সরেজমিনে দেখা যায়, অস্থায়ী এই বাজারের ভিন্ন ভিন্ন স্টলে সাজিয়ে রাখা হয়েছে তেল, খেজুর, পেঁয়াজ, ছোলা, চিনি, চিড়া ও মুড়ি। অন্য সব বাজারের মতো নিম্ন আয়ের মানুষ পছন্দমতো পণ্য সংগ্রহ করছেন। তবে সেগুলোর দাম রাখা হচ্ছে মাত্র ১০ টাকা।
রাউৎভোগ এলাকার রোকসানা বেগম (৬০) বলেন, ‘পাশের বাড়ির একজন ছোলা-মুড়ি দিছিল। পাঁচ রোজায় সব শেষ হয়ে গেছে। পরে আর কিনে খাইতে পারি নাই। এহন ১০ টাকা দিয়া কত কিছু কিনে নিলাম। যা দিয়া বাকি রমজান ভালো ভাবে কাটিয়ে দিতে পারমু।’
আরও পড়ুন : এ সরকার থাকলে আমরা ভালো থাকবো
দিঘীরপাড় গ্রামের নাছিমা বেগম (৩৫) বলেন, ‘বাজারে যেখানে ১ লিটার তেলের দাম ১৯০ টাকা, সেখানে ৭টি পণ্য মাত্র ১০ টাকায় পেয়েছি। এখানে এসে মনে হলো ইতিহাসের আমলের অল্প টাকায় আমরা বাজার থেকেই পণ্য নিচ্ছি। রোজার বাকি দিনগুলো ভালো কাটবে।'
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রিয়াদ হোসাইন বলেন, বর্তমান বাজারের অবস্থা বিবেচনা করে আমরা অস্থায়ী বাজারের আয়োজন করেছি। সংগঠনের সদস্যদের দান ও মাসিক চাঁদা দিয়ে বাজার পরিচালনা করা হচ্ছে। আমাদের পরিকল্পনা আরও বড় ছিল।
আরও পড়ুন : বাসায় ফিরল নিখোঁজ ৪ ছাত্রী
তিনি আরও বলেন, আর্থিক সংকটের কারণে কিছুটা সীমিত পরিসরে করা হচ্ছে। এই কাজটি দেখে যাতে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হয় এবং এগিয়ে আসে, সেটিই আমাদের মূল লক্ষ্য।
সংগঠনের সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক হিরা বলেন, দ্বিতীয় বারের মতো এই বাজার থেকে দুই শতাধিক মানুষ ১০ টাকায় ইফতার সামগ্রী পেয়েছেন। আমরা অসহায় মানুষের আগ্রহ ও তৃপ্তির হাসি দেখে আনন্দিত হয়েছি।
সান নিউজ/এমআর