এহছানুল হক, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা: ‘তক্তি লাগবে তক্তি, নারকেলের মজাদার তক্তি’- এভাবেই প্রতিদিনের সকালের শুরুটা হয় আলাউদ্দিনের। নারকেলের তক্তি ভরা গামলা মাথায় নিয়ে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ও গ্রামে গ্রামে। তক্তি বিক্রি করেই কোন রকমে সংসার চলে। এটাই তার রুটিরুজি। বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার পৌর শহরের দত্তপাড়া গ্রামের টি.এন্ড.টি রোডে দেখা মেলে আলাউদ্দিনের। সেদিন ওই এলাকার আল-সাফা কিন্ডারগার্টেন এন্ড ইসলামিক একাডেমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে বিক্রি করছিলেন নারকেলের তক্তি। তার তক্তি খেতে সুস্বাদু বলে জানান ক্রেতারা।
আরও পড়ুন: মানুষের সেবা করার দিকে আমরা গুরুত্ব দিয়ে থাকি
আলাউদ্দিনের বাড়ি পার্শ্ববর্তী গৌরীপুর উপজেলার পৌর শহরের সতিশা গ্রামে। তার বয়স ৫৬ বছর। তিনি ঈশ্বরগঞ্জ এসে নারকেলের তক্তি বিক্রি করেন। দীর্ঘ ৩৫ ধরে এভাবেই সংসার চালান তিনি।
বুধবার দুপুরে ঈশ্বরগঞ্জ পৌর শহরের টি এন্ড টি রোডে কথা হয় আলাউদ্দিনের সঙ্গে। তিনি জানান, ‘প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে তিনি তক্তি বিক্রি করেন। তিনি ও স্ত্রী নিজের হাতে তক্তি বানিয়ে বিক্রি করেন। পাশাপাশি বাড়িতে অল্প জমিতে টুকটাক কৃষিকাজও করেন।
প্রতি পিস তক্তি বিক্রি করেন ১০ টাকায়। প্রতিদিন ১৮০ থেকে ২০০ পিস তক্তি বিক্রি করতে পারেন। দৈনিক ১৮০০ থেকে ২০০০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারেন বলে জানান তিনি। এতে দৈনিক ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত লাভ করতে পারেন।
আরও পড়ুন: মালউইয়ে নিহত বেড়ে ২০০
তক্তি কি দিয়ে তৈরি হয়? এবিষয়ে জানতে চাইলে বিক্রেতা আলাউদ্দিন বলেন, এই তক্তি তৈরি হয়- কোরা নারকেল, চিনি, এলাচ গুঁড়া , সামান্য ঘি দিয়ে।
তক্তি নিতে আসা পৌর শহরের দত্তপাড়া এলাকার মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্র নাফিস বলেন, ‘তক্তি খেতে অনেক মজা। আমি নিজের জন্য কিনেছি, বাসায়ও নিয়ে যাব আমার আপুর জন্য ।’
আরও পড়ুন: প্রাণহানিতে শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র
নারকেলের তক্তি কিনতে আসা দেলোয়ার হোসেন নামে এক অভিভাবক জানান, আলাউদ্দিনের নারিকেলের তক্তি খেতে সুস্বাদু, দামও কম, মানেও ভালো। তিনি আরও বলেন, আমি নিজে এই তক্তি খেয়ে পরিবারের অন্যদের জন্য নিয়ে যাই।
সংসার জীবনে আলাউদ্দিনের রয়েছে দুই সন্তান। এক ছেলে আর একটি মেয়ে। তাদের মধ্যে ছেলে দাখিল মাদ্রাসায় ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে, আর মেয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ছে। এখন ছেলে-মেয়েকে শিক্ষিত করার স্বপ্ন দেখেন তিনি। ইচ্ছা অন্ততপক্ষে ছেলে-মেয়ের জীবন যাতে তার মতো না হয়। তবে তার সেই স্বপেও জল ঢেলেছে দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি।
আরও পড়ুন: ঢাকায় কালবৈশাখীর আভাস
আলাউদ্দিন বলেন, সারাদিন রোদে পুড়ে হাড়ভাঙা খেটে ৪০০-৬০০ টাকা কামাই করি। বাজারে গেলে চাইল, ডাইল, আলু আর তেল-নুন কিনতেই শেষ। আমরার মতো গরিব মানুষ কেমনে চলবে? পোলাপানরে কেমনে করবো মানুষ।
আমার বয়স এখন ষাটের কাছাকাছি। সব সময় শরীর ভালো থাকে না। আগের মতো গায়ে শক্তিও পাই না। এখন আয়ের সাথে খরচেরও কোন মিল নাই। ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে হিমসিম খাচ্ছি। তারপরও দু'বেলা দুমুঠো খেয়ে বেঁচে আছি এতেই আলহামদুলিল্লাহ।
সান নিউজ/এমআর