গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি : দেশের অন্য জনপদের চেয়ে তুলনামূলক গাইবান্দা জেলা সবকিছু থেকে রয়েছে পিছিয়ে। অবসর সময়ে বসে বই পড়ার কোনো ভালো মানের পাঠাগার। শহরে দুই-একটি পাঠাগার থাকলেও সেগুলোও থাকে তালাবদ্ধ। এ কারণেই বইয়ের স্থান দখল করেছে তথ্য-প্রযুক্তি। আর তাই বর্তমানে শিক্ষার্থীদের হাতে বেশি থাকছে স্মার্টফোন।
আরও পড়ুন : নিজ কক্ষ থেকে যুবকের মরদেহ উদ্ধার
এমন কঠিন সময়ে শিক্ষার্থীদের পাঠাগারমুখী করতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতিষ্ঠা হয়েছে বই ঘর পাঠাগার।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার টেংগরজানী গ্রামের মো. হান্নান মিয়ার ছেলে মেহেদী হাসান গাইবান্ধা সরকারি কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ালেখা করছে। পিছিয়ে পড়া গ্রামের মানুষের মধ্যে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে পাঠাগার তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেন তিনি।
অর্থনৈতিক দিক থেকে পারিবারিক নানা সমস্যা থাকলেও টিফিনের টাকা জমিয়ে গ্রামেই পাঠাগার গড়ে তুলেছে। সেই পাঠাগারের নাম দিয়েছে বই ঘর পাঠাগার।
আরও পড়ুন : রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন
জানা যায়, ২০২০ সালে মেহেদী টেংগরজানী গ্রামে বই ঘর পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেন। মেহেদীর এ পাঠাগারে এখন বইয়ের সংখ্যা এক হাজারের বেশি। সাহিত্য, ইতিহাস, বিজ্ঞান, মহামানবদের জীবনী, বিভিন্ন ম্যাগাজিন, দৈনিক সংবাদপত্র, মাসিক কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সসহ শিশুদের উপযোগী বিভিন্ন বই রয়েছে।
মেহেদীর প্রতিষ্ঠিত পাঠাগারে অনেকেই শুধু বিশ্রাম নিতে এসেও আকৃষ্ট হচ্ছে বইয়ের প্রতি। বই ঘর পাঠাগারে যেমন শিক্ষার্থী ও উৎসাহী মানুষ বই পড়তে আসছে, তেমনি আসছেশিক্ষক-শিক্ষিকাসহ বিভিন্ন পেশার বই প্রেমীরা।
ফলে পাঠাগারটিকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলে গড়ে উঠছে একধরনের সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলন।
আরও পড়ুন : সভাপতিকে পেটালেন সাধারণ সম্পাদক
পাঠাগারটি তৈরি হওয়ায় গ্রামের দৃশ্যপট অনেকটা বদলে গেছে। যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে যে কিশোর-কিশোরীরা মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করতো, তাদের অনেকেই এখন পাঠাগারের সদস্য।
পাঠাগারটি একদিকে যেমন বই পড়ার অভ্যাস তৈরি ও ধরে রাখতে কাজ করে যাচ্ছে, তেমনি মোবাইল ফোন আসক্তি থেকে দূরে রাখতেও মানুষকে সচেতন করার কাজ করছে।
পাঠাগারটি শিশুদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বই পড়ে জ্ঞান লাভ করছে, বিকশিত হচ্ছে তারা। শিক্ষার্থী আফরোজা আক্তার বলেন, কখনো কল্পনা করিনি আমাদের গ্রামে এতো সুন্দর পরিপাটি একটি পাঠাগার হবে। পড়াশোনার পাশাপাশি পাঠাগারে গিয়ে পছন্দের কোনো না কোনো বই পড়ি।
আরও পড়ুন : ভালুকায় ঋতুরাজ বসন্তে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে শিমুল-পলাশ
বই ঘর পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা মেহেদী হাসান বলেন, দেশের বেশির ভাগ পাঠাগার শহর কেন্দ্রিক। যারা গ্রামে বসবাস করি, তাদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা বড় ধরনের একটি সমস্যা। এ কারণে গ্রামের তরুণ প্রজন্ম ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে গেমসসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। বই থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
মা-বাবার সহযোগিতায় ও টিফিনের টাকা জমিয়ে আমি ২০২০ সালে পাঠাগারটি চালু করি। প্রতিদিন টিফিনের টাকা জমিয়ে কিছুদিন পরপর একটি করে বই কিনতাম।
পাশাপাশি অন্যদের কাছ থেকেও বিপুল পরিমাণ বই সংগ্রহ করেছি। অনেকেই এখানে বই দিয়ে গেছে। ফলে বইয়ের সংখ্যা অল্প সময়ে হাজার ছাড়িয়ে যায়।
সান নিউজ/এইচএন