এম.এ আজিজ রাসেল, কক্সবাজার: কক্সবাজার শহরের কস্তুরাঘাট সংলগ্ন বাঁকখালী নদীর জায়গা দখল করে গড়ে উঠা ৩০০ অবৈধ স্থাপনা গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই সাথে দখলমুক্ত করা হয়েছে নদীর ৫০০ একর জায়গা। মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দিনব্যাপী রুদ্ধশ্বাস এই যৌথ অভিযান চালায় প্রশাসন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-আর্জেন্টিনা সমঝোতা স্বাক্ষর
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উচ্ছেদ অভিযান চালানোর বিষয়টি গতকাল সোমবার বিকালে মাইকিং করে সেখানকার বাসিন্দাদের জানিয়ে দেয় প্রশাসন। এসময় তাঁদের নিরাপদে সরে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় উচ্চ আদালতের নির্দেশ এবং রায় বাস্তবায়নে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জাহিদ ইকবালের নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে জেলা প্রশাসন, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, কক্সবাজার পৌরসভা, পরিবেশ অধিদপ্তর, কক্সবাজার বিদ্যুৎ বিভাগ, বিআইডব্লিউটিএ, ফায়ার সার্ভিসসহ আরও কয়েকটি দপ্তর।
এসময় নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন র্যাব, পুলিশ, আর্মড ব্যাটালিয়ন, আনসার, বীচ কর্মীসহ বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। দুপুর ১টার দিকে পূর্ব পাশে উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করা হলে বাঁধা দেয় দখলদার খালেক চেয়ারম্যান, তার স্ত্রী ও পুত্র।
আরও পড়ুন: হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় বাড়ল
এসময় খালেক চেয়ারম্যান ও তাঁর ছেলের নেতৃত্বে ২৫-৩০ জনের বাহিনী সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। হামলায় ডিবিসি নিউজের জেলা প্রতিনিধি শংকর বড়ুয়া, দৈনিক আজকের কক্সবাজার বার্তার সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার নুরুল হোসাইনসহ কয়েকজন সাংবাদিক আহত হয়।
পরে এডিএম মো. আবু সুফিয়ান, সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. জিল্লুর রহমান ও পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ দ্রুত এগিয়ে এসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এসময় খবর পেয়ে কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সভাপতি আবু তাহের প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তাদের বিষয়টি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
ঘটনাস্থলে ছুটে যান সিনিয়র সাংবাদিক তোফায়েল আহমেদ। তিনি সাংবাদিকদের উপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। বিকাল ৫টা পর্যন্ত এই অভিযান চলে। অভিযানে পাকা, আধা পাকা, বহুতল ভবনসহ প্রায় ৩০০ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। দখলমুক্ত করা হয় ৫০০ একর বাঁকখালী নদীর জায়গা।
আরও পড়ুন: যুগান্তকারী অবস্থানে বাংলাদেশ
অভিযান শেষে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান বলেন, 'উচ্চ আদালতের নির্দেশ ও রায় বাস্তবায়নে বাঁকখালী নদীর জায়গা দখলমুক্ত করতে এই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে। উচ্ছেদের পর আবারও কেউ দখল করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
এদিকে অভিযানকালে খতিয়ান ও নিম্ন আদালতের মামলার রায়ের কপিসহ বিভিন্ন কাগজপত্র দেখানোর চেষ্টা করে জমির মালিকানা দাবি করা কতিপয় ব্যক্তি। তাঁরা বলেন, তাঁদের জমি খুরুশকুল মৌজার খতিয়ানভুক্ত। নদীর জায়গা তাঁরা দখল করেননি। বিনা নোটিশে প্রশাসন তাঁদের স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে। তাঁরা এ জন্য ক্ষতিপূরণের দাবি করেন।
জানা যায়, বাঁকখালী নদীর জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয় আবাসিক এলাকা। সেখানে প্রায় পাঁচ শতাধিক বহুতল ভবন, সেমি পাকা ও ঝুপড়ি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। কৌশলে নেওয়া হয় বিদ্যুৎ সংযোগও। গত এক বছরে ১ হাজার একর প্যারাবন উজাড় করা হয়েছে। সম্প্রতি আবারও নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে ভরাট করা হচ্ছে চর।
এরপর প্লট আকারে চড়াদামে বিক্রি করে গড়ে তোলা হচ্ছে ঘরবাড়িসহ অবৈধ স্থাপনা। বাঁকখালী দখলের এই ভয়াবহতা শুনে সম্প্রতি কক্সবাজারে ছুটে আসেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বাঁকখালী নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট পরিদর্শন করেন। এ নিয়ে বেলা হাইকোর্টে একটি রিটও করেন। এতে বাঁকখালী নদী রক্ষায় নড়েচড়ে বসেছে জেলা প্রশাসন।
সান নিউজ/এনকে