টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি: টেকনাফে "ব্রুসেলোসিস" রোগ শনাক্ত সংক্রান্ত বিষয়ে টেকনাফ প্রেস ক্লাব ও কর্মরত সংবাদিকদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ নিয়ে সম্প্রতি আইসিডিডিআর,বি বিজ্ঞানীরা নতুন গবেষণায় টেকনাফে অবস্থিত তাদের রেসপিরেটরি ডিজিস হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে "ব্রুসেলোসিস" রোগ শনাক্ত করেছে।
আরও পড়ুন: মাঠে কাজ করা গৌরবের বিষয়
বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৩ টায় টেকনাফ প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে গবেষণামূলক প্রাথমিক ফলাফল বিষয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সমীক্ষা অনুযায়ী প্রাথমিক তদন্তে, টেকনাফে ব্রুসেলোসিসের আটজন রোগী সনাক্ত করা হয়। (১৫৩ জন ভর্তিকৃত রোগীর মধ্যে, যা কিনা ৫,২%)। ব্রুসেলা নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট একটি সংক্রামক রোগ ব্রুসেলোসিস, যা সাধারণত গৃহপালিত গবাদি পশু যেমন গরু, ছাগল এবং মহিষের দুধে পরজীবী হিসেবে উপস্থিত পাওয়া যায়।গরু, ছাগল বা মহিষের দুধ অপরিশুদ্ধ বা না ফুটিয়ে বা কাঁচা অবস্থায় পান করলে এর জীবাণুটি মানব দেহে প্রবেশ করতে পারে। রোগটির প্রধান উপসর্গ গুলির মধ্যে রয়েছে জ্বর, গায়ে ব্যথা, মাথায় ব্যথা, ক্ষুধাহীনতা, দুর্বলতা ইত্যাদি।
আরও পড়ুন: খালেদা রাজনীতি করতে পারবেন না
আইসিডিডিআর, বি ও ইউনিসেফের যৌথ ব্যবস্থাপনায় টেকনাফ পৌরসভা এলাকায় ২০২০ সালের আগস্ট থেকে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসায় ৬৫-শয্যা বিশিষ্ট একটি হাসপাতাল পরিচালিত হচ্ছে। গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত কোভিড-১৯ উপসর্গ নিয়ে ১২০ জন রোগী ভর্তি হন হাসপাতালটিতে। প্রথমে, কোভিড-১৯ সন্দেহ হলেও, তাদের কেউই এ রোগে আক্রান্ত ছিল না। পরবর্তিতে অন্যান্য রোগীর পরীক্ষার পাশাপাশি সংক্রমণের কারণ নির্ণয়ে রক্তের ট্রিপল এন্টিজেন্ট পরীক্ষার করা হয়। ১২০ জন রোগীর মধ্যে সাত জনের (৫.৮%) নমুনায় প্রাথমিকভাবে ব্রুসেলা জীবাণুর উপস্থিতি পাওয়া যায়। পরবর্তিতে তাদের সবাইকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়ার পর তারা সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে ব্রুসেলা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরটি-পিসিআর টেস্ট করা হলে ঐ ৫ জনের মধ্যে ১ জনের দেহে ব্রুসেলার উপস্থিতি পাওয়া যায়। পরবর্তিতে, আইসিডিডিআর,বি-র ইনফেকসাস ডিজিসেস ডিভিশনের সহকারী বিজ্ঞানী ড. আইরিন সুলতানা শান্তার নেতৃত্বে ঢাকা থেকে একটি তদন্তকারী দল টেকনাফে আসেন এবং ইতিপূর্বে অ্যান্টিজেন টেস্টে পজেটিভ পাওয়া সাত জনের মধ্যে পাঁচজনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন এবং পাঁচজনের সবার ক্ষেত্রেই কাঁচা গরুর দুধ পানের তথ্য পাওয়া যায়। এরপর আরো ৩৩ জন নতুন রোগীর রক্তের নমুনা নিয়ে আর টি পিসি পরীক্ষা করা হলে তাদের মধ্যে একজনের দেহে ব্রুসেলার উপস্থিতি দেখা মিলে।
উল্লেখ্য যে, এই রোগীটি ৩ বছর বয়সী একটি মেয়ে শিশু ছিল। বিজ্ঞানীরা টেকনাফের মানুষের মধ্যে কাঁচা দুধ খাওয়ার প্রবণতা ও অভ্যাস দেখতে পায়। গবেষণায় রোগের বিস্তার রোধে প্রয়োজনীয় সতর্কতা গ্রহণের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও, গরু, ছাগল বা মহিষের কাঁচা দুধ পান না করার পরামর্শ প্রদানের পাশাপাশি, অন্তত ১৫ মিনিট দুধ বলগ উঠা অবস্থায় চুলায় রেখে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে পান করার সুপারিশ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: দুই দলের অবস্থান বিপজ্জনক
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, টেকনাফ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, সভায় উপস্থিত ছিলেন,স্থানীয় সাংবাদিকবৃন্দ। আইসিডিডিআর,বি-র টেকনাফে অবস্থিত রেসপিরেটরি ডিজিজেস হাসপাতালের সিনিয়র প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর ডা: জিয়াউল ইসলাম, সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসার ও ক্লিনিকাল লিড ডা: তারেক মাহমুদ রাকিব এবং ইনফেকসাস ডিজিসেস ডিভিশনের সহকারী বিজ্ঞানী ড. আইরিন সুলতানা শান্তা অনুষ্ঠানে গবেষণার ফলাফল, চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা ও রোগটির প্রতিরোধে করণীয় বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা কর হয়।
ডা: জিয়াউল ইসলাম বলেন, ব্রুসেলোসিসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে গৃহস্থলি পর্যায়ে দুধ ভালোভাবে ফুটিয়ে খাওয়ার কোন বিকল্প নেই। তাই আমরা মানুষকে সচেতন করার জন্য স্থানীয় পর্যায়ে লিফলেট বিলি এবং উঠান বৈঠকের কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। তিনি এই কর্মসূচী বাস্তবায়নে উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তরের পরামর্শ ও সহযোগিতার উপর গুরুত্বরুপ করেন।
আরও পড়ুন: ট্রাক্টরের ধাক্কায় পুলিশ সদস্য নিহত
ড. আইরিন সুলতানা শান্তা বলেন, দেশের অন্যান্য প্রান্তেও জনসাধারনের মধ্যে এই রোগের প্রার্দুভাব নির্ণয় করা প্রয়োজন।
সান নিউজ/এমআর