গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি : বোরো ধান চাষের উৎকৃষ্ট সময় পার হলেও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) পানি সরবরাহে কার্যকরী পদক্ষেপ না গ্রহণ না করায় গাইবান্ধায় সেচ অনিশ্চয়তায় পড়েছে ৩শত বিঘা জমি।
আরও পড়ুন দায়ের কোপে প্রাণ গেল বাবার
জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করেও কোন ফল হয়নি। পানি সরবরাহে কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্লাপুর-পলাশবাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতির পত্র প্রেরণ করেও মিলছে না সমাধান। চাহিদা মতো ঘুষ না দেওয়ায় মেশিন বসানো হচ্ছে না বলে অভিযোগ কৃষকদের।
জানা যায়, ১৯৭৪ সালে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের উত্তর দামোদরপুর এলাকার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নুরন্নবী সরকারের নিজস্ব জমিতে স্থাপন করা হয় বিএডিসির ডিজেল ইঞ্জিনচালিত একটি গভীর নলকূপ (সেচপাম্প)।
পরবর্তীতে একটি দুর্ঘটনায় ইঞ্জিনটি নষ্ট হয়ে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বন্ধ থাকায় কৃষকরা বাধ্য হয়ে শ্যালো মেশিনে অনেক কষ্টে জমি চাষা করে আসছে। গভীর নলকূপটি (সেচপাম্প) পুনরায় চালু করতে দফায় দফায় গাইবান্ধার বিএডিসি কার্যালয়ে যোগাযোগ করলেও কর্ণপাত করেনি বিএডিসি কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন ১৭ বছর পালিয়ে ছিলেন ফাঁসির আসামি
পরে বাধ্য হয়ে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে কৃষকদের স্বার্থে বন্ধ থাকা গভীর নলকূপটি বিদ্যুতের সাহায্যে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন (বিএমডিএ) মাধ্যমে চালু করতে জেলা প্রশাসকের কাছে কৃষকদের পক্ষে লিখিত আবেদন করেন এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান ও কৃষক নুরুন্নবী সরকার।
এছাড়া দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পত্র প্রেরণ করেন সাদুল্লাপুর-পলাশবাড়ি আসনের সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতি। আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১৯ জানুয়ারি বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার জান্নাতুল ফেরদৌসি উর্মি স্বাক্ষরিত একটি পত্রে নির্দেশ করা হয়।
নলকূপটি বিএমডিএ চালু করার কথা জানতে পেরে বিএডিসি নলকূপটি তাদের দাবি করে তারাই নতুন করে চালু করবে বলে জানান। পরে আবেদনকারী, বিএমডিএ ও বিএডিসিকে নিয়ে জরুরি বৈঠক করে তিন দিনের মধ্যে বিএডিসিকে নলকূপ চালু করতে নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক।
আরও পড়ুন রিকশাচালক ও পথচারীদের মাঝে গোলাপ বিতরণ
অথচ তার নির্দেশের তিন সপ্তাহ পার হলেও বিএডিসি পানি সরবরাহে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে এলাকার অন্তত শতাধিক বিঘা জমি পানির অভাবে এখনও অনাবাদি রয়েছে। স্বচ্ছল পরিবারগুলো চাষের মৌসুম পার হওয়া আর চারাগাছ নষ্টের হাত থেকে রক্ষায় শ্যালো মেশিনের পানি নিয়ে চাষ করছে।
এছাড়া আশপাশের সব এলাকার কৃষকরা চড়া দামে ডিজেল ক্রয় করে শ্যালো মেশিন দিয়ে জমিতে সেচ দিচ্ছে। বিদ্যুৎচালিত গভীর নলক‚পটি চালু করা গেলে এলাকার অন্তত ৩শত থেকে ৪শত বিঘা জমিতে পানি সরবরাহ করে ২০০ থেকে ২৫০ কৃষক অর্ধেক খরচে জমি চাষ করতে পারতো।
নুরুন্নবী সরকারের অভিযোগ, বিএডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী বিদ্যুতের নলকূপ বসাতে প্রথমে দেড় লক্ষ ও পরে এক লক্ষ টাকা দাবি করেন। কর্মকর্তার চাহিদামতো টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় এলাকায় মেশিন নিয়ে আসার পরেও বসানো হচ্ছে না।
আরও পড়ুন : বিএনপির মধ্যে নির্বাচনে হেরে যাওয়ার ভয়
বরং বিভিন্ন তালবাহানায় মেশিনসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ফেরত নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। দামোদরপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বন্ধ থাকা নলকূপটি চালু করতে এলাকার কৃষকরা অনেকবার বিএডিসির দ্বারস্থ হয়েছে। কোন সাড়া না পাওয়ায় সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসকের কাছে গেছে সচেতন মহল।
কৃষকদের স্বার্থে নলকূপটি চালু করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারপরও বিএডিসির নির্বাহী প্রকৌশলীর গাফিলতির কারণে ৩শত থেকে ৪শত বিঘা জমি বেশী খরচ করে ধান চাষ করতে হচ্ছে।
বিএডিসির নির্বাহী প্রকৌশলীকে দায়ী করে দ্রুত পানি সরবাহের ব্যবস্থা করার জন্য দাবি করেন তিনি। গাইবান্ধা কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি সেচ) নির্বাহী প্রকৌশলী চিত্তরঞ্জন রায় বলেন, কৃষকরা চাচ্ছে বিদ্যুৎচালিত গভীর নলকূপ।
আরও পড়ুন : মেয়র জাহাঙ্গীরের দুর্নীতির তদন্তে রিট
বিদ্যুতের বিষয়টিতে কয়েকটি দপ্তর সংশ্লিষ্ট রয়েছে, সেটি প্রক্রিয়াধীন, তাতে সময় লাগবে। কেউ চাইলেই গভীর নলক‚প বসানো সম্ভব নয়। নলকূপটি ছিল ২৫ বছর আগে। ওই সময়ে নিয়মকানুন অনেক পরিবর্তন হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের নির্দেশ পাওয়ার পর সেখানে ডিজেলচালিত মেশিন চালু করে পানির ব্যবস্থা করা হয়েছিল তবে কৃষকরা তাতে রাজি নন বলে দাবি নির্বাহী প্রকৌশলীর।
সান নিউজ/এইচএন