মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আনসার ও পুলিশ সদস্যের সাথে এক সেবাগ্রহীতার অনৈতিক লেনদেনের ভিডিও ধারণের সময় সাংবাদিকের মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে ভিডিও ডিলেট করার ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারী) দুপুর দেড়টার দিকে মুন্সীগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের ভেতরে এ সব ঘটনা ঘটে।
এদিকে, বর্তমান সময়ে মুন্সীগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণের হয়রানি, একটু ভুল দেখিয়ে দালালের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার একাধিক অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা, ডিউটিরত পুলিশ সদস্য ও আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ। এবং সাম্প্রতিক সময়ে কেন্দ্রীয় এক যুবলীগ নেতাকেও হয়রানি করার অভিযোগ রয়েছে।
সাংবাদিক ফয়সাল হোসেন বলেন, দুপুর ১২ টা'র দিকে পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য মুন্সীগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে যাওয়ার পর পরই গেটের সামনে একাধিক সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে দেখতে পাই। এরপর ভেতরকার পরিস্থিতি দেখার জন্য ভিতরে আবেদন জমা নেয়ার জায়গায় গেলে দেখি সেখানে সিরিয়ালের বাইরেও কয়েকজন লোক দাড়ানো। এরপর আমি মুল গেটের বাইরে চলে আসি। সেখানে একাধিক নারী-পুরুষ আমার কাছে পাসপোর্ট অফিস ঘিরে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করতে থাকেন।
এরই মধ্যে এক সেবা গ্রহীতা নারী আমার কাছে অভিযোগ করে জানান, তার পাসপোর্ট আবেদনে বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে আবেদন জমা না নিয়ে ফেরৎ পাঠানো হয়েছে। এমন সময় সেখানে এক মধ্যস্থতাকারী ব্যক্তি আসেন। মধ্যবয়সী ওই ব্যক্তি ভুক্তভোগী ওই নারীকে বলেন, ২ হাজার টাকা দিলে আবেদন ফরমে যে ভুল দেখানো হয়েছে তা আর থাকবে না। ভেতরে থাকা তার লোকের মাধ্যমে সব সমাধান হয়ে যাবে। এবং নির্বিঘ্নে তার আবেদন জমা নেয়া হবে। এরপর কথা অনুযায়ী সেই নারী ২ হাজার টাকায় চুক্তি করেন। মধ্যস্থতাকারী ওই ব্যক্তি সেবাগ্রহীতা নারীকে সাথে নিয়ে কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে পুনরায় আবেদন করে নিয়ে আসেন।
এরপর দুপুর দেড়টার দিকে তিনি ফেরত আসেন পাসপোর্ট অফিসে। এসময় গেটে থাকা আনসার ও পুলিশ সদস্যরা সময় শেষ হয়ে যাওয়ার অযুহাতে তাকে ঢুকতে বাঁধা দেন। একপর্যায়ে পুলিশ ও আনসার সদস্য ওই কথিত দালালের সাথে দর কষাকষি করছিলো। এসময় সে আরও ৫০০ টাকা ওই নারীর কাছে বেশি দাবি করেন। টাকার লেনদেনসহ পুরো ঘটনাটি আমি আমার হাতে থাকা মোবাইল ফোনে ধারণ করছিলাম।
আরও জানান, বিষয়টি টের পেয়ে গেটে দায়িত্বে থাকা পুলিশ ও আনসার সদস্য আমার সাথে অসদাচরণ করে গেটের ভেতরে নিয়ে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ভিডিও ডিলেট করে দেন। ঘটনার সময় পাসপোর্ট অফিসের উপ-সহকারি পরিচালক ইব্রাহীম খলিল উপস্থিত ছিলেন। পরিচয় জানার পরে ফোন হাতে দিয়ে, গেট থেকে আমাকে বের করে দেন তারা!
ঘটনার সময় দায়িত্বে থাকা মুন্সীগঞ্জ সদর ফাঁড়ির পুলিশ কনস্টেবল সোহেল মোবাইল কেড়ে নেয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমি সাংবাদিককে চিনতে পারিনি। তবে মোবাইল থেকে ভিডিও ডিলেট করে দেয়ার কথা তিনি অস্বীকার করে পুরো ঘটনাটি ভুল বোঝাবুঝি উল্লেখ করে নি:শর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
সদর ফাঁড়ির ইনচার্জ এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুন্সীগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-সহকারি পরিচালক ইব্রাহীম খলিল কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। প্রশ্ন শুনে তিনি ফোন কেটে দেন। উপস্থিত থাকার কথা নাখোশ করেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে মুন্সীগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারি পরিচালক উম্মে শাকিলা তানিয়া'র সরকারি ফোন নাম্বারে একাধিক বার ফোন দিলে, তিনি ফোন রিসিভ করেনি।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসূল বলেন, পাসপোর্ট অফিসে এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সান নিউজ/এনকে