জেলা প্রতিনিধি, পাবনা: পাবনার ঈশ্বরদীতে রিকশাচালক মামুন হোসেন (২৪) গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন এবং তার ভাতিজা ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি হৃদয় হোসেনকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে এলাকাবাসী বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে।
শনিবার (৭ জানুয়ারি) দুপুরে এলাকার শত শত নারী-পুরুষ পৌরসভার শৈলপাড়ায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধনে অংশগ্রহন করেন। মানববন্ধন শেষে এলাকাবাসীরা মিছিল নিয়ে ঈশ্বরদী আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব নূরুজ্জামান বিশ্বাস ও পৌর মেয়র ইসাহক আলী মালিথার বাড়ির সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে কাউন্সিলরের মুক্তির দাবি জানায়।
বিক্ষোভ সমাবেশে এলাকাবাসীরা দাবি করে বলেন, পর পর দুইবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর কামাল উদ্দিন বুধবার রাতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। অনার্স পড়ুয়া ছাত্রলীগ নেতা হৃদয় হোসেনও হত্যার ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত নয়। উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে কামাল উদ্দিন ও হৃদয় হোসেনের নামে মামলা দায়ের এবং তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এলাকায় কামালের জনপ্রিয়তা ও ভাবমূর্তি বিনষ্টের পাশাপাশি আওয়ামী রাজনীতি ধ্বংসের জন্য মিথ্যাভাবে তাদের ফাঁসানো হয়েছে। এই হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক প্রকৃত আসামীদের গ্রেফতার এবং নির্দোষীদের মুক্তির দাবি জানানো হয়।
কাউন্সিলর কামাল উদ্দিনের স্ত্রী শারমিন সুলতানা স্বপ্না, রেখা খাতুন, রীমা খাতুন প্রমূখ এসময় বক্তব্য রাখেন।
এবিষয়ে ঈশ্বরদী পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসাহক আলী মালিথা বলেন, কাউন্সিলর কামাল উদ্দিন পর পর দুইবারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। আমি শতভাগ নিশ্চিত হত্যাকান্ডের সাথে কামালের কোন সম্পৃক্ততা নেই এবং ঘটনার ধারে কাছে সে ছিলো না। কি উদ্দেশ্যে কেন যে তার নামে মামলা দায়ের এবং গ্রেফতার হলো তা আমার বোধগম্য নয়। সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত সত্য উদঘাটনের দাবি জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত বুধবার রাত ৯টার দিকে ঈশ্বরদীর রেল গেটের পাশে কাচারী পাড়ায় ঈশ্বরদী ইপিজেড থেকে আসা দ্রুততগামী ভটভটি ও লেগুনা সংঘর্ষ হয়। এ সময় রিকশাচালক মামুনসহ স্থানীয়রা চালকদের বেপরোয়া গতিতে চলাচলে নিষেধ করে। এঘটনায় লেগুনা চালাক ভটভটির চালকের কাছে ক্ষতিপূরণ চাওয়া নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কর্তাতর্কি হয়।
পরে ফিরে গিয়ে লেগুনার মালিক কামাল ও আনোয়ারকে জানালে তারা ক্ষুব্ধ হোন এবং আনোয়ার হোসেন তার দলবল নিয়ে স্থানীয়দের ওপর চড়াও হয়। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হলে আনোয়ার তার কোমরে থাকা পিস্তল বের করে সেখানে থাকা মামুন ও রকিকে গুলি করে এবং সুমনকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তিনজনকে উদ্ধার করে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মামুনকে মৃত ঘোষণা করেন এবং গুলিবিদ্ধ রকি ও ছুরিকাঘাতে আহত সুমনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে নিহত মামুনের মা লিপি খাতুন এ ঘটনায় বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় আটককৃত কাউন্সিলর কামাল উদ্দিনকে প্রধান করে তার ভাই আনোয়ার উদ্দিন, ভাতিজা হৃদয় হোসেন এবং ইব্রাহিমকে নামীয় এবং আরও ৩-৪ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
শুক্রবার বিকেলে র্যাব-১২ পাবনা ক্যাম্পে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মামলা হওয়ার পর র্যাব আসামিদের ধরতে অভিযানে নামে। শুক্রবার দুপুরে শহরের শৈলপাড়ার মৃত নূর উদ্দিনের ছেলে এবং মো. হৃদয় একই এলাকার জামাল উদ্দিনের ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়। কামাল উদ্দিন ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি এবং হৃদয় একই ওয়ার্ডের ছাত্রলীগের সভাপতি। তবে ঘটনার মূল অভিযুক্ত ওয়ার্ড যুবলীগের সদস্য আনোয়ার হোসেন এখনও পলাতক রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, মুলত ভুটভটি ও লেগুনার মধ্যে দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত হয়। সেই ঘটনার কামাল উদ্দিন ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিপক্ষের উপর হামলা ও গুলির নির্দেশ দেন। তার নির্দেশের পর ঘটনাস্থলে গিয়ে তার ভাই আনোয়ার হোসেন তার কোমরে থাকা পিস্তল বের করে মামুন ও রকিকে গুলি করেন। এসময় আনোয়ারের সঙ্গীরা সুমনকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।
সান নিউজ/এসআই