নিজস্ব প্রতিনিধি:
গোপালগঞ্জ: মধুমতি নদী ও কুমার নদের পানি বেড়ে গোপালগঞ্জ সদর, কাশিয়ানী ও মুকসুদপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বাড়িতে পানি ঢুকে ও সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ওই সব এলাকার বাসিন্দারা। অনেক পরিবার গবাদিপশুসহ স্থানীয় স্কুল ও সড়কের পাশের উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে।
গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ বৈদ্য জানান, মধুমতি নদী বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ও মধুমতি বিলরুট চ্যানেলের পানি ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলার মধুমতি নদী ও কুমার নদের পানি বেড়ে সদর উপজেলার উলপুর, নিজড়া ও হরিদাসপুর, কাশিয়ানী উপজেলার সিংগা, হাতিয়াড়া ও পুইশুর এবং মুকসুদপুর উপজেলার দিগনগর ও উজানী ইউনিয়নের নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে দুই সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
রোববার (২ আগস্ট) দুপুরে সরেজমিন পানিবন্দি এসব গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, অন্তত ৪০০ পরিবার বিভিন্ন গ্রামের স্কুল ও পাকা সড়কের পাশে উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। প্লাবিত এলাকাগুলোর কাঁচা ও আধা পাকা সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় চরম দূরাবস্থার মধ্যে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। তলিয়ে গেছে শত শত মাছের ঘেরও। ওই সব ঘের মালিকেরা নেট দিয়ে মাছ রক্ষার চেষ্টা করছেন।
কাশিয়ানী উপজেলার সিংগা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রণব সরকার, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার নিজড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান সরদার ও উলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান বাবুল জানিয়েছেন, প্রতিদিনই পানি বেড়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। দুর্গত মানুষকে জেলা প্রশাসনের পক্ষে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।
কাশিয়ানী উপজেলার সিংগা ইউনিয়নের স্বপন বিশ্বাস, ইতি বিশ্বাস, নীলমতি বিশ্বাস ও চারুলতা বিশ্বাসসহ বেশ কয়েকজন বলেন, ‘আমাদের বসতঘর ও দোকানঘরের মধ্যে পানি ঢুকে পড়েছে। ঘরের মধ্যে টং বানিয়ে বসবাস করছি। কিন্তু রান্না করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই পরিবার-পরিজন নিয়ে সমস্যায় দিনযাপন করছি।’
সিংগা গ্রামের পংকজ মণ্ডল বলেন, ‘আমি বাড়ির সামনে সড়কের পাশে চা ও মুদি দোকান করে সংসার চালাই। জল বাড়ায় আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে জল ঢুকে দোকান বন্ধ হয়ে হয়ে গেছে। এখন কিভাবে সংসার চালাবো তা বুঝতে পারছি না।’
সিংগা কেসিসিএম উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া দুখীরাম বিশ্বাস (৬৫), সরস্বতি রায় (৪৫), গৌরী রায় (৪৩), পাচি রায় (৬৮) বলেন, ‘বাড়ির মধ্যে পানি ঢুকে পড়ায় গরু-ছাগল, হাস-মুরগি ও পরিবার-পরিজন নিয়ে হাইস্কুলে আশ্রয় নিয়েছি।’
একই উপজেলার হাতিয়াড়া ইউনিয়নের রাহুথর গ্রামের মাছচাষি বাবুল রায় জানিয়েছেন, তার ঘেরসহ অসংখ্য মাছের ঘেরের পাড় পানিতে ডুবে গেছে। সবাই নেট দিয়ে ঘেরের মাছ রক্ষার চেষ্টা করছেন। কতোদূর সম্ভব হবে তা বলা যাচ্ছে না। ঘের ভেসে গেলে দেনা হতে হবে।
জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা জানিয়েছেন, দুর্গতদের সাহায্যে ৩০০ মেট্রিকটন চাল এবং শিশু, গো-খাদ্য ও শুকনা খাবারের জন্য ছয় লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ত্রাণ দেওয়া শুরু হয়েছে। বিশুদ্ধ নিরাপদ পানি সরবরাহে জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে প্লাস্টিকের পানির ক্যান ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ ও স্বাস্থ্য বিভাগকে মেডিকেল টিম গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুর্গতদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যেকোনো সমস্যায় ওই টিম কাজ করবে।
গোপালগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক চন্দ্র সরকার বলেন, ‘বন্যা কবলিত তিন উপজেলায় ১০ হাজার করে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও ১০০টি করে প্লাস্টিকের পানির ক্যান দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় ক্যান ও ট্যাবলেট মজুদ রয়েছে। আশা করি পানি সংক্রান্ত কোনো সমস্যা হবে না।’
সান নিউজ/ এআর