নিজস্ব প্রতিনিধি:
ফরিদপুর: শহর যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসিবুর রহমান ফারহানকে (৪০) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার (১ আগস্ট) রাতে শহরের পূর্বখাবাসপুর লঞ্চঘাট এলাকায় নাহার মঞ্জিলে অভিযান চালিয়ে কোতোয়ালি থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি, হত্যাকাণ্ড, ক্ষমতার অপব্যবহার করে অর্থের মালিক হওয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
ফরিদপুরের বহুল আলোচিত দুই ভাই শহর আওয়ামী লীগের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ফরিদপুর প্রেসক্লাবের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের বিরুদ্ধে করা দুই হাজার কোটি টাকার মানিলন্ডারিংয়ের মামলা সূত্রে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোরশেদ আলম। তিনি বলেন, ফারহানকে ঢাকার কাফরুল থানায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) মামলায় সিআইডির চাহিদা অনুসারে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে রোববার (২ আগস্ট) বিকেলে জেলার মূখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতের মাধ্যমে ফরিদপুর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পরে তাকে নিজেদের জিম্মায় নেবে সিআইডি ঢাকা।
একই মামলায় এর আগে গত শুক্রবার (৩১ জুলাই) গ্রেপ্তার হন শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম খন্দকার লেভী (৬১) ও জেলা শ্রমিক লীগের কোষাধ্যক্ষ বিল্লাল হোসেন (৫৪)। ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, নাজমুল ইসলাম খন্দকার লেভী, বিল্লাল হোসেন ও আসিবুর রহমান ফারহানকে মানিলন্ডারিং মামলায় সিআইডি পুলিশের চাহিদা অনুসারে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে অভিযোগের কারণে ফারহানকে শহর যুবলীগের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তাছাড়া কিছুদিন আগে শহরের ঝিলটুলী এলাকায় ছিনতাইকারীর হামলায় নিহত হন ডা. নৃপেন্দ্র নাথ বিশ্বাসের স্ত্রী। সেই ঘটনায় সিসি ক্যামেরার তথ্য ভিত্তিতে দেখা যায়, অপরাধীরা একটি মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন। পরে প্রমাণিত হয়, বাইকটি ফারহানের। এরপরেই রাজনৈতিক মহলে নিন্দা ও সমালোচনার মুখে পড়তে হয় তাকে। গাঢাকা দেন অনেকদিন। পরিবারের অর্থবিত্ত আর রাজনৈতিক ক্ষমতার কারণে সাবেক মন্ত্রীর ভাতিজা ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র শেখ মাহাতাব আলী মেথুর বড় ভাইয়ের জামাতা ফারহানের ধারে কাছে যেতে পারেননি কেউ।
সিআইডির পরিদর্শক এস এম মিরাজ আল মাহমুদ গত ২৬ জুন সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও তার ভাই ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের বিরুদ্ধে ঢাকার কাফরুল থানায় দুই হাজার কোটি টাকার সম্পদ অবৈধ উপায়ে উপার্জন ও পাচারের মামলাটি করেন। ২০১২ সালের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন সংশোধনী ২০১৫ এর ৪(২) ধারায় মামলাটি হয়েছে।
সিআইডি এ মামলায় দুই ভাইয়ের ১০ দিনের রিমান্ড চান। গত ১৩ জুলাই ভার্চুয়াল কোর্টের মাধ্যমে এ রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময় ফরিদপুর কারাগারে থাকা অবস্থায় জেলগেটে জুম অ্যাপসের মাধ্যমে এ শুনানিতে অংশ নেন বরকত ও রুবেল। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলামের আদালত দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ১৯ জুলাই ভোরে সিআইডি দুই ভাইকে ফরিদপুর কারাগার থেকে নিজেদের জিম্মায় নিয়ে ঢাকার মালিবাগ সিআইডির কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। দুইদিনের রিমান্ড শেষে সিআইডি গত ২১ জুলাই ফের ১০দিন করে রিমান্ড চাইলে আদালত তিনদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত ২৪ জুলাই মোট পাঁচদিনের রিমান্ড শেষে রুবেল ও বরকত মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
তাদের জবানবন্দিতে লেভি, বিল্লাল ও ফারহানসহ আরো অনেকের নাম বের হয়ে এসেছে উল্লেখ করে পুলিশ সূত্র জানায়, পর্যায়ক্রমে সবাইকে গ্রেপ্তার করা হবে।
গত ১৬ মে রাতে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবল চন্দ্র সাহার শহরের গোয়ালচামট মোল্লাবাড়ি সড়কের বাড়িতে দুই দফা হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গত ১৮ মে সুবল সাহা অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। গত ৭ জুন রাতে ওই মামলার আসামি হিসেবে শহরের বদরপুরসহ বিভিন্ন মহল্লায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ বরকত, রুবেলসহ মোট নয়জনকে গ্রেপ্তার করে। এ মামলায় সব মিলিয়ে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো।
সান নিউজ/ এআর