বদরুল ইসলাম বিপ্লব, ঠাকুরগাঁও: বিনোদনের জন্য ঠাকুরগাঁওয়ে আয়োজন করা হয়েছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা।
আরও পড়ুন: কারাগারে সশস্ত্র হামলায় নিহত ১৪
রবিবার (০১ জানুয়ারি) বিকেলে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সালন্দর ইউনিয়নের চৌধুরীহাট বিলপাড়া এলাকায় এই ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। সালন্দর চাষী ক্লাব ও ইউপি চেয়ারম্যানের উদ্যোগে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হযেছে।
ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতায় পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ ও নীলফামারী জেলার ডোমার সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ৩০টি ঘোড়া অংশ নেয়। এর মধ্যে ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সের চার-পাঁচ জন কিশোর ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
পঞ্চগড় থেকে আসা দর্শক সোলাইমান আলী বলেন, ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগিতা খেলাটি এখন বিলুপ্তির পথে। এ খেলাটি দেখে বেশ ভাল লাগল। এটি যেন টিকিয়ে রাখা যায় সেজন্য প্রতিবছর কমপক্ষে একবার এ খেলার আয়োজন করা উচিত।
সালন্দর শিংপাড়া হতে আসা প্রতীমা রানী বলেন, ‘জীবনে কখনো ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা দেখিনি। এবারই প্রথম এরকম একটি খেলা দেখতে পেয়ে বেশ ভাল লাগল।
হাসিবুর ইসলাম নামে এক ঘোড়া মালিক বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন এলাকায় ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেই। অনেক জায়গায় প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছি। সেই ধারাবাহিকতায় আজও তিনি বিজয়ী হব আশা করছি। এ খেলাটি টিকিয়ে রাখা গেলে এবং মাঝে মাঝে এর আয়োজন করা হলে আমরা বড় বড় ঘোড়া পালন করতে পারব।
নারী ঘোড়া প্রতিযোগী তাসলিমা জানান, আমি ৭ বছর থেকে ঘোড়া চালাই। সেই থেকে আমি অনেক জায়গায় খেলায় অংশগ্রহণ করে আসছি। তখন আমার নিজস্ব ঘোড়া ছিল না। প্রথম আলো থেকে আমাকে একটা ঘোড়া দিয়েছিল। কিন্তু রেসে অংশ নিতে গিয়ে আমার ঘোড়ার কোমর ভেঙ্গে গিয়েছিল। পরে সেটি ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেই। পরে আমি একটি ঘোড়া কিনেছি। এক লক্ষ দিতে পারলেও এখনো ২ লক্ষ টাকা বাকী রয়েছে। ২ লক্ষ টাকা আমার দেনা রয়েছে।
সালন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলে এলাহী মুকুট চৌধুরী বলেন, ঘোড় দৌড় গ্রামীণ জনপদের একটি ঐতিহ্যবাহী খেলা। এটি হারিয়ে যেতে বসেছে। আমরা পুরুষ মানুষ যেখানে সেখানে বিনোদন নিতে পারি। কিন্তু ঘরের মা বোনেরা বিনোদন নিতে পারে না। তাদের কথা বিবেচনা করে আজকের এই আয়োজন। আগামীতেও আরো বড় পরিসরে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে।
ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা আয়োজনকারী সালন্দর চাষী ক্লাবের সভাপতি ডা: মাজেদুল হক জানান, গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া দৌড় টিকিয়ে রাখতে এমন আয়োজন করি। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভাবে ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হওয়ায় তিনি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
তিনটি গ্রুপের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগিতায় প্রথম হয় নীলফামারীর হাসিবুল, দ্বিতীয় হয় ডোমারের রনি এবং ৩য় হয় নওগাঁর তাসলিমা। বিজয়ীদের মধ্যে বাই সাইকেল ও এলইডি টেলিভিশন তুলে দেওয়া হয়।
ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতায় অতিথি হিসেবে উপস্থিতি ছিলেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অরুনাংশ দত্ত টিটো, জেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুল মজিদ আপেল, সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ দত্ত সমীর, পঞ্চগড়ের দেবীগন্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক চিশতী প্রমুখ।
সান নিউজ/এনকে