সারাদেশ

এখনও ৫১ লাখ মানুষ পানিবন্দি

নিজস্ব প্রতিনিধি:

আজ শনিবার (১ আগস্ট) পর্যন্ত দেশের বন্যা কবলিত ৩১ জেলার পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা ৫০ লাখ ৯৭ হাজার ৪২৪ জন। পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৪৪৭টি।

বন্যা কবলিত পানিবন্দি এসব মানুষের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ সহায়তা বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৩ হাজার ১০ মেট্রিক টন জিআর চাল। নগদ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে তিন কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। শিশুখাদ্য কিনতে জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৮৪ লাখ টাকা। গবাদিপশুর খাদ্য কিনতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে দুই কোটি ১৮ লাখ টাকা। এক লাখ ৪০ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার, ৩০০ বান্ডিল ঢেউটিন ও গৃহনির্মাণ খরচ বাবদ বরাদ্দ করা হয়েছে নয় লাখ টাকা।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শুক্রবার (৩১ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৪টা নাগাদ দেশের বন্যা কবলিত ৩১ জেলা হচ্ছে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী, রংপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, জামালপুর, টাঙ্গাইল, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, ফরিদপুর, নেত্রকোনা, ফেনী, নওগাঁ, শরীয়তপুর, ঢাকা, নোয়াখালী, হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর, নাটোর, গাজীপুর, মৌলভীবাজার, মুন্সিগঞ্জ ও চাঁদপুর। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এসব জেলার ১৫০টি উপজেলার ৯৪৭টি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। বন্যার পানিতে ডুবে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৪১ জন। বন্যা কবলিত জেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এক হাজার ৫৪৬টি। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোয় আশ্রয় নেওয়া মানুষের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৩৯০ জন।

বন্যা কবলিত চার জেলায় কোনো আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়নি। জেলাগুলো হচ্ছে মৌলভীবাজার, নোয়াখালী, রংপুর ও লালমনিরহাট। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় নীলফামারী, সিলেট ও নওগাঁ জেলায় খোলা আশ্রয়কেন্দ্র থেকে লোকজন বাড়ি চলে গেছেন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন সেন্টার (এনডিআরসিসি) সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরে ৯৩টি, কিশোরগঞ্জে ৮৫টি, ঢাকায় ৪০টি, মানিকগঞ্জে ১৯৫ টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত এসব আশ্রয়কেন্দ্রে কোনো পানিবন্দি মানুষ আসেননি।

অন্যদিকে বন্যার পানি কিছুটা কমতে শুরু করায় নেত্রকোনা ও নওগাঁ জেলায় খোলা আশ্রয় কেন্দ্র থেকে মানুষজন বাড়ি চলে গেছেন। নেত্রকোনা জেলায় বন্যাকবলিত উপজেলাগুলো হচ্ছে দূর্গাপুর, কলমাকান্দা, খালিয়্জুড়ি, বারহাট্টা ও মদন। এসব উপজেলার ৩১টি ইউনিয়নের ১২ হাজারের বেশি মানুষ বর্তমানে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। তবে সেখানে পানি কমতে শুরু করেছে বলে জানা গেছে।

বন্যা কবলিত জেলায় ৯৫৯টি মেডিকেল টিম গঠন করলেও ৩৮৭টি টিম কাজ করছে। এ সব জেলার মাছের ঘেরের মাছ ভেসে গেছে, সবজি ও ফসলের ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। তবে এর হিসাব এখনও করা সম্ভব হয়নি। বন্যার পানি নামতে শুরু করলে এসব ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করা হবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সৃষ্ট বন্যার উদ্ভব হয়েছে। এতে দেশের শাখা-প্রশাখাসহ ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় ৮০০ নদ-নদী বিপুল জলরাশি নিয়ে ২৪ হাজার ১৪০ বর্গ কিলোমিটার জায়গা দখল করে দেশের মধ্যে প্রবাহিত হচ্ছে। আগস্ট মাসে আরও বৃষ্টিপাত হবে। এ মাসেই স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতও হবে। তবে মৌসুমি ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে মধ্যমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। তবে দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা দেখা দিতে পারে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এনডিসিসিআর-এর বরাত দিয়ে জানিয়েছেনর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, জামালপুর, টাঙ্গাইল, মাদারীপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, নওগাঁ, শরীয়তপুর, ঢাকা, নাটোর, মুন্সিগঞ্জ ও চাঁদপুর জেলায় আগামী ২দিন বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে। এরপর এসব জেলার পানি কমতে পারে। তারপরও সমুদ্রে যদি জোয়ার থাকে তাহলে দেশের মধ্যাঞ্চলে পানি কমতে দেরি হতে পারে। তবে এসব জেলার বন্যার পানি আগস্টের প্রথম সপ্তাহে নামতে শুরু করতে পারে। তিনি বলেন, সরকার সব সময় প্রস্তুত। প্রধানমন্ত্রী নিজে বন্যা পরিস্থিতি এবং সরকারি ত্রাণ কার্যক্রম মনিটর করছেন।

সূত্র জানায়, বন্যা কবলিত ৩১ জেলার পানিবন্দি মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত চাল, নগদ টাকা, শুকনা খাবার প্যাকেট, শিশুখাদ্য কেনা বাবদ নগদ অর্থ গবাদিপশুর খাবার কেনার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ ও গৃহনির্মাণ বাবদ ঢেউটিন ও বরাদ্দ করা টাকা এখনও পর্যন্ত পুরোপুরি বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসন এখনও পর্যন্ত বরাদ্দকৃত ত্রাণ সহায়তা শতভাগ বিতরণ করতে পারেনি।

বরাদ্দ করা ১৩ হাজার ১০ টন জিআর চালের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে আট হাজার ৪৪২ মেট্রিক টন, মজুত আছে ৪ হাজার ৫৬৭ মেট্রিক টন। নগদ টাকা বিতরণ করা হয়েছে দুই কোটি ১২ লাখ ৫৮ হাজার ৭০০ টাকা। মজুত রয়েছে এক কোটি ২৩ লাখ ৯১ হাজার ৩০০ টাকা। শিশুখাদ্য কেনা বাবদ বরাদ্দকৃত ৮৪ লাখ টাকার মধ্যে এ পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে ৬০ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। শিশুখাদ্য কেনা বাবদ এখনও মজুদ আছে ২৩ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। গোখাদ্য খাবার কেনার জন্য বরাদ্দকৃত দুই কোটি ১৮ লাখ টাকার মধ্যে খরচ করা গেছে এক কোটি ৭ লাখ ৬ হাজার টাকা। এখনও জমা রয়েছে এক কোটি ১০ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। বরাদ্দ করা ৩০০ বান্ডিল ঢেউটিনের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ১০০ বান্ডিল, মজুদ রয়েছে ২০০ বান্ডিল ঢেউটিন। গৃহনির্মাণ বাবদ বরাদ্দ করা নয় লাখ টাকার মধ্যে এ পর্যন্ত বিতরণ করা গেছে তিন লাখ টাকা। এখনও জমা রয়েছে ছয় লাখ টাকা।

সান নিউজ/ এআর

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

কোটি টাকা নিয়ে উধাও ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর) : ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে প...

মুন্সীগঞ্জে শিক্ষকদের মানববন্ধন

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ : ঢাকা শিক্ষা ভবনের সামনে সরকারি...

বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বঙ্গোপসাগরে নিম...

প্রকল্পের সব তথ্য ওপেন থাকবে

নিজস্ব প্রতিবেদক : এখন থেকে প্রকল্পের সব তথ্য ওপেন থাকবে। শু...

ফ্লাইটে বাংলাদেশি যাত্রীর মৃত্যু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বাংলাদেশের রাজ...

বাসায় ফিরলেন খালেদা জিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশানের...

একদিনে আরও ৬ জনের প্রাণহানি

নিজস্ব প্রতিবেদক : সারাদেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও ৬ জ...

বলিউডে ফিরছেন আদনান সামি

বিনোদন ডেস্ক : উপমহাদেশের জনপ্রিয় গায়ক আদনান সামি আবারও বলিউ...

করোনার নতুন ধরন ২৭ দেশে ছড়িয়েছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের নতুন একটি ভ্যারি...

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান আলী রীয়াজ

নিজস্ব প্রতিবেদক : সংবিধান সংস্কার কমিশনের নতুন প্রধান হিসেব...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা