নিজস্ব প্রতিনিধি:
মাদারীপুর: ‘এই ঈদের আনন্দ আমাগো না। বাইচ্চা থাকলে পরে ঈদ করমু।’ অসহায় হয়ে কথাগুলো বলছিলেন মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বন্দরখোলা গ্রামের আয়ুব আলী মাদবর।
আয়ুব আলী মাদবরের ঘরবাড়ি জমি-জিরাত সবই ছিলো। কিন্তু এক নিমিষেই সব শেষ পদ্মার ভাঙনে। এখন তিনি নিঃস্ব। অন্যের সাহায্য-সহযোগিতায় চলতে হয় তাকে।
শুধু আয়ুব আলী নয়, এই বন্যা আর নদীভাঙনে এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন মাদারীপুরের চার উপজেলার ৩৪টি ইউনিয়নের দুর্গত মানুষেরা, তাদের দুর্ভোগ এখন চরমে।
রাজৈর, মাদারীপুর সদর, কালকিনি ও শিবচর উপজেলার বিভিন্ন বন্যা কবলিত এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, গত দুইদিন ধরে পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদীর পানি কিছুটা কমতে শুরু করায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে ঘর-বাড়ি থেকে পানি নেমে না যাওয়ায় ও নদী ভাঙন বাড়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে বন্যা দুর্গত জেলার চারটি উপজেলায়। সরকারের পক্ষ থেকে কোথাও কোথাও ত্রাণ দেওয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম।
করোনা পরিস্থিতির পাশাপাশি বন্যায় কর্মহীন হয়ে পড়া এসব মানুষেরা খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন। যারা ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে কষ্ট নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন যারা, তারাও ঘরে ফিরতে পারছেন না।
জেলায় নদীভাঙন ও বন্যায় ভেসে গেছে সাত শতাধিক পরিবারের ঘর-বাড়ি। এছাড়াও বন্যা দুর্গত এলাকাগুলোতে খাদ্য সংকটের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি ও গবাদিপশুর খাদ্য সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। এ অবস্থায় কোরবানির ঈদের আনন্দ মলিন হয়ে গেছে জেলার বিভিন্ন উপজেলা চরাঞ্চল ও নদীভাঙন এলাকার মানুষের।
মাদারীপুর সদর উপজেলার তাল্লুক গ্রামের দিনমজুর জাফর ঘরামী বলেন, ‘আমরা দিনমজুরের কাজ করে দিন এনে দিন খাই। করোনার জন্য কাজ ছিল না। তার ওপর বন্যা একেবারে বসে থাকা ছাড়া উপায় নেই। সংসারে ১৩ জনের পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে রয়েছি। এ অবস্থায় কীভাবে ঈদের কথা ভাবতে পারি?’
কালিকিনি উপজেলার আলীনগর এলাকার চরহোগলপাতিয়া গ্রামের অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদীভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ওই এলাকার সাধারণ মানুষ। আগ্রাসী হয়ে ওঠা নদীপাড়ের পাঁচ গ্রামের মানুষ ভয়-আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। অনেকেই বলেন, ‘আগে বাড়ি ঘর বাঁচানোর চেষ্টা, তার পরে ঈদ। বেঁচে থাকলে কত ঈদ আইবো!’
চরহোগলপাতিয়া গ্রামের সালমা বেগম বলেন, ‘৩/৪ মাস ধরে আমার স্বামীর হাতে কোনো কাজ নেই। বাড়ি-ঘরও ভাঙার উপক্রম। ঈদ নিয়ে এবার কোনো মাথাব্যথা নেই।’
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, বন্যা ও নদী ভাঙনের কবলে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য জেলা প্রশাসনের ত্রাণ সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে তাদেরও সহযোগিতা করা হবে।
সান নিউজ/ আরএইচ/ এআর