মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ : বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে মুন্সীগঞ্জ থেকে লঞ্চ ও যাত্রীবাহী লঞ্চ, বাস, লেগুনা চলাচল বন্ধ রেখেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ঢাকামুখী যাত্রীরা।
আরও পড়ুন : নোয়াখালীতে গৃহবধূর আত্মহত্যা
তবে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ বলছেন ঢাকা-নারায়নগঞ্জ মুখী যাত্রী না থাকায় তাদের লঞ্চ বন্ধ। বাস কর্তৃপক্ষ জানান, ধর্মঘটের কারন তাদের বাস বন্ধ রয়েছে।
শনিবার (১০ডিসেম্বর) মুন্সীগঞ্জ লঞ্চ ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, ঘাটের পল্টুনে সারি বেঁধে লঞ্চগুলো নোঙর করে রাখা হয়েছে। পল্টুন ও গ্যাংওয়েতে ১৫-২০ জন পুলিশ বসে আছে। লঞ্চ বন্ধ থাকায় নারায়ণগঞ্জ-ঢাকামুখী যাত্রীরা এসে ফিরে যাচ্ছেন।
এ সময় বেশ কয়েকজন যাত্রী বলেন, ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ। লোকজন আটকাতে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা যারা প্রতিদিন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ যাতায়াত করে পেট চালানোর কাজ করি তাদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। একই ভাবে এদিন বন্ধ রয়েছে মিরকাদিম লঞ্চঘাট থেকে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল।
আরও পড়ুন : ফুটবল খেলা নিয়ে সংঘর্ষ, নিহত ১
মুন্সীগঞ্জ ও মিরকাদিম লঞ্চঘাটের ইজারাদার দিল মোহাম্মদ জানান, সকাল থেকে দক্ষিণাঞ্চলের কোনো লঞ্চ আসেনি। এজন্য মুন্সীগঞ্জ থেকে যাত্রীরা লঞ্চে করে ঢাকায় যেতে পারেননি।
তবে নারায়ণগঞ্জ নৌপথে তাদের যাত্রী নেই। লঞ্চ চালালেই প্রতি ট্রিপে লোকসান গুনতে হয়। এজন্য নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জের নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। যাত্রী হলে তারা আবারো লঞ্চ চলাচল শুরু করবে।
এদিকে, প্রতিদিন মুন্সীগঞ্জ শহর থেকে মুক্তারপুর হয়ে ঢাকায় যাতায়াত করত দিঘীরপাড় পরিবহনের ১৭ টি বাস।
আরও পড়ুন : দুই ট্রাকের সংঘর্ষে নিহত ২
গত বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) থেকে সড়ক পথে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। শনিবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল থেকে হাটক্ষীগঞ্জ এলাকায় সাড়ি বেঁধে দাড়িয়ে ছিল অন্তত ১০-১২ টি বাস।
এ সময় বাস চালকের সহকারী সঞ্জয় চন্দ্র দে জানান, গত ৩ দিন ধরে মালিক সমিতি বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে। কি কারনে বন্ধ রেখেছে তারাই জানেন।
এ সময় কয়েকজন চালক বলেন, বিএনপির সমাবেশে মানুষ যেনো ঢাকায় যেতে না পারে এ জন্য বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে। তাই কর্মহীন হয়ে তিন দিন ধরে সময় পার করতে হচ্ছে। অন্য কোন কাজ নেই। সংসারের অবস্থাও খারাপ হচ্ছে। মালিক পক্ষ সিদ্ধান্ত না দিলে বাস চালানো যাবেনা।
আরও পড়ুন : ব্রাজিলের খেলা নিয়ে বিতণ্ডা, নিহত ২
মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার বাসিন্দা মঞ্জিল হোসেন জানান, তার স্ত্রী অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসক দেখাতে ঢাকা পিজি হাসপাতাল আজকেই নিয়ে যাওয়ার কথা। মুক্তারপুর এসে দেখেন বাস বন্ধ। চিকিৎসক দেখাতেই হবে এজন্য তিনি ও তার স্ত্রী মুক্তারপুর এসে দাড়িয়ে ছিলেন।
মঞ্জিল হোসেন আক্ষেপের সঙ্গে আরও বলেন, বিএনপি'র একটি সমাবেশকে কেন্দ্র করে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আমরা যারা বিভিন্ন প্রয়োজনে ঢাকা যাব তাদের ভোগান্তি বলে বোঝানো যাবে না। বাস না থাকায় ভেঙে ভেঙে ঢাকায় যেতে হবে। এতে সময় খরচ ও ভোগান্তি অনেক বেশি হবে।
ইকবাল হোসেন নামে এক সফটওয়্যার কর্মী জানান, লঞ্চঘাটে লঞ্চ বন্ধ,বাস বন্ধ, লেগুনা বন্ধ। ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানে তিনি চাকরি করেন। কিভাবে ঢাকায় পৌঁছাবেন এ নিয়ে তিনি বিভ্রান্তিতে পড়েছেন।
আরও পড়ুন : গোলাগুলিতে ২ রোহিঙ্গা নিহত
দিঘীরপাড় পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নূর হোসেন বেপারী জানান, তিন দিন ধরে তাদের বাস ধর্মঘট চলছে। এজন্য তারা বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন। কি জন্য ধর্মঘট তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়টি তার জানা নেই। এগুলো ঢাকা থেকে নির্ধারিত হয়েছে।
এছাড়াও মুন্সীগঞ্জ থেকে সড়ক পথে অর্ধশত সিএনজি চালিত রিকশা ও লেগুনায় করেও ঢাকায় আসা যাওয়া করেন মুন্সীগঞ্জ ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলার যাত্রীরা। শনিবার সকাল থেকে সেগুলোও বন্ধ রেখেছে চালকরা।
মুক্তারপুর বাসস্ট্যান্ডের সিএনজি চালক মো. রহিম জানান, গত দুইদিন ধরে যাত্রীরা আতঙ্কে ঢাকা যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। তারা এখান থেকে ২-১ জন যাত্রী নিয়ে যাত্রাবাড়ি পর্যন্ত যাচ্ছেন। সেখান থেকে আবার লোকজন লুকিয়ে বিকল্প পথে ঢাকার গন্তব্যে যাচ্ছেন।
লেগুনা চালকরা জানান, মালিক সমিতির নির্দেশেই লেগুনা চলাচল বন্ধ রয়েছে। আবার নির্দেশনা পেলে চলাচল শুরু হবে। কি কারণে মালিক পক্ষ বন্ধ করলো এমন প্রশ্ন করলে চালকরা বলেন এর উত্তর দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে জিজ্ঞেস করতে হবে।
পুলিশ সুত্রে জানা যায়, বিজয় দিবস ও থার্টি ফার্স্ট নাইটকে সামনে রেখে ৩২ জেলার ঢাকায় প্রবেশদ্বার মুন্সীগঞ্জের সকল সড়ক ও নৌ পথে ৬টি স্তরে ৮৪টি পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন : মো. মামুনুর রশীদের অবদান সাগরপাড়ের মানুষ ভুলবে না
এসব জায়গায় সাধারণ মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে সেটি নিশ্চিত করা হচ্ছে। কারো স্বাভাবিক চলাচলে বাঁধা দেয়া হচ্ছে না। জেলার নিরাপত্তায় ৯ শতাধিক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ তারিকুজ্জামান বলেন, সকাল থেকে মুক্তারপুর বাস স্ট্যান্ড পুলিশের সদস্য মোতায়েন রয়েছে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে দুষ্কৃতিকারীরা যেন বিস্ফোরক বহন করতে না পারে সেজন্য তারা তৎপর রয়েছে।
সান নিউজ/এইচএন