হারুন উর রশিদ সোহেল, রংপুর থেকে:
চলমান বর্ষায় রংপুর নগরীর বর্ধিত ওয়ার্ডগুলোর প্রায় সব সড়ক ভেঙে গেছে। ফলে লাখো মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, নগরীর ৩১নং ওয়ার্ডের সিলিমপুর, পানবাড়ি, বৃদ্দিবান, দক্ষিণ নাজির দিগর, বনগ্রাম, গাইবান্ধাপাড়া, ঘাঘটপাড়া, পূর্ব নাজির দিগর সড়কের বিভিন্নস্থানে ভেঙে গেছে। এই ওয়ার্ডে ১৩ হাজারের বেশি মানুষ বাস করেন। মানুষগুলো যোগাযোগ বিচিছন্ন অবস্থায় রয়েছেন।
অন্যদিকে ৩২নং ওয়ার্ডের সরায়ারতল, মোল্লাপাড়া, লক্ষণপাড়া, আরজি তামপাট, সর্দারপাড়া, মোগলেরবাগ ও শান্তিপাড়া সড়কও ভেঙে গেছে। এই ওয়ার্ডের লোকসংখ্যা ১৯ হাজারের বেশি।
৩৩নং ওয়ার্ডের লোক সংখ্যা ২০ হাজারের বেশি। এই ওয়ার্ডের হোসেননগর, বগুড়াপাড়া, তালুকরঘু ও মেকুরা এলাকার সড়কও ভারি বর্ষায় ভেঙে গেছে। ১৩,১৪ ও ১৫নং ওয়ার্ডেরও দুটি করে সড়ক পানির তোড়ে ভেঙে একাকার। বেহাল অবস্থায় আছে ৪, ৫, ৬, ৭ ও ৮ নং ওয়ার্ডের সড়কও।
৩১নং ওয়ার্ডের পানবাড়ি এলাকার আশরাফুল আলম বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ আগের ভারি বর্ষণে পানবাড়ির বিভিন্ন সড়ক কয়েক জায়গায় ভেঙে গেছে। সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে বিপদে আছি। চলাচল করতে হচ্ছে ভেলায় করে। এখন আগে দরকার সড়কের সংযোগ ঠিক করা।’
আপেল মিয়া জানান, ঘাঘট নদী দ্বারা বিভক্ত ওয়ার্ডটির বিভিন্ন এলাকার সড়কে ভাঙন দেখা দিয়েছে। মানুষজন কষ্ট করে যাতায়াত করছেন।
এলাকার রিকশাচালক নুরুল হুদা বলেন, আগে থেকেই পানবাড়ির সড়কটির বেহালদশা। গত সপ্তাহের বৃষ্টিতে সড়কটির ১০টি স্থানে ভেঙে গেছে। কোনো কোনো স্থানে ক্ষেতে পরিণত হয়েছে। সড়কের বেহালদশায় বাড়ি-ঘরেও ঢুকছে পানি।
নাজিরদিঘর এলাকার কৃষক আ . আজিজ জানান, রাস্তা ভাঙায় বাজারে সাইকেলে করে পণ্য নিয়ে যেতে পারছেন না। আরেকজন কৃষকও তার কষ্টের কথা তুলে ধরেন।
কয়েকজন নারী জানান, তারা এনজিওতে চাকরি করেন। প্রায় সময়ই বের হতে হয়। সড়কের বেহালদশায় এখন ভেলার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
চাকরিজীবী রোকেয়া বেগম বলেন, বর্ষায় ভেঙে যাওয়ায় এখন আর বোঝা যায় না, এটি সড়ক না ক্ষেত।
কয়েকজন প্রতিবন্ধি জানান, সড়ক ভেঙে যাওয়ায় তাদের কষ্ট বেড়েছে।
৩১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র সামসুল হক বলেন, বর্ষায় তার ওয়ার্ডের মানুষ যেমন পানিবন্দি রয়েছেন, তেমনি প্রায় প্রতিটির সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গেছে। এখন বেশি প্রয়োজন অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানো।
তিনি আরো জানান, তিনি দিনে রাতে প্রতিটি পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে ঘরে তাদের সঙ্গে কথা বলছেন। কয়েকটি সড়কের টেন্ডার হয়েছে। বর্ষা পার হলেই কাজ শুরু হবে।
৩২নং ওয়ার্ডের সিলিমপুর সড়কও ভেঙে ক্ষেত না সড়ক তা বোঝার কোনো উপায় নেই বলে মন্তব্য করেন স্থানীয়রা । তারা বলেন, এই সড়কটি দিয়েই বেশিরভাগ মানুষ যাতায়াত করে থাকেন। চলাচলের সময় ভাঙ্গা স্থানে পড়ে অনেকে আহতও হচ্ছেন।
দক্ষিণ নাজিরদিগর এলাকার কয়েকজন বলেন, তাদের ওয়ার্ডের চেয়ে গ্রামের সড়কগুলো বেশ ভালো আছে।
ওয়ার্ডটির কয়েকজন সমাজকর্মী জানান, এই ওয়ার্ডটির চারপাশে ঘাঘট নদী। নদীর ওপর একটি ব্রিজের কাজ অসমাপ্ত হয়ে আছে। সবদিক দিয়ে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। খোদ কাউন্সিলর অফিসের সামনের রাস্তাও ভেঙে গেছে।
সয়ারতল এলাকার কয়েকজন প্রবীণ জানান, কয়েকদিন আগেও সড়কের ভাঙা স্থানে মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়। গত সপ্তাহের বর্ষায় এখন সড়কটির কয়েক হাত পর পর ভাঙন দেখা দিয়েছে। সর্দারপাড়া এলাকার কয়েকজন সড়কটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন। তারা জানান, স্কুল খুললে ছেলে-মেয়েরা কিভাবে যাতায়াত করবে, এ চিন্তায় আছেন।
৩২নং ওয়ার্ড সামাজিক উন্নয়ন পরিষদের সদস্যরা ওয়ার্ডবাসীর খোঁজ খবর নিচ্ছেন। সংগঠনের একজন কর্মকর্তা বলেন, ভারি বর্ষায় পানিতে অনেক জায়গায় সড়ক ভেঙে গেছে। সামান্য বৃষ্টি হলে সড়ক ও বাড়ির সামনে পানি জমে থাকে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এখন অনেক সড়কগুলো ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দ্রুতগতিতে ভাঙা সড়কগুলোর সংস্কারের দাবি জানান তিনি।
সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা জানান, ভারি বর্ষার পর পরেই খোঁজ নেওয়া শুরু করেছেন তিনি। যেসব ওয়ার্ডের যেসব সড়ক ভেঙে গেছে, সেগুলোর তালিকা করা হচ্ছে। দ্রুত সংস্কারের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এছাড়াও ওয়ার্ডগুলোতেও অনেক সড়কের টেন্ডার হয়েছে। বর্ষাকাল বলেই বন্ধ আছে। বর্ষার পর কাজ শুরু হবে। নতুন সড়ক হলে দৃশ্যপটই পাল্টে যাবে।
সান নিউজ/ এআর